'ভূমিখেকো' এবং 'মিডিয়া মাফিয়া' বলে পরিচিত বসুন্ধরা গ্রুপ

'ভূমিখেকো' এবং 'মিডিয়া মাফিয়া' বলে পরিচিত বসুন্ধরা গ্রুপ

পতিত ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক মেশিনারির চাকা সচল হতে শুরু করেছে। এবং দু:খজনকভাবে এই সচল হওয়ার প্রক্রিয়াটা শুরু করেছেন ২৪ জুলাই আগস্টে পতিত ফ্যাস্টিস্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সাংবাদিকদের কেউ কেউ।

'ভূমিখেকো' এবং 'মিডিয়া মাফিয়া' বলে পরিচিত বসুন্ধরা গ্রুপ ৫ আগস্টের আগে কিভাবে পতিত ফ্যাসিস্টদেরকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছে এবং ৫ আগস্টের পর তারা অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যেভাবে সিরিজ ডিসইনফরমেশন ও হেইট ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে তার নিন্দা করে গত পরশু একটি বক্তব্য দিয়েছি। ওই বক্তব্যে এই মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপটি যেভাবে পতিত ফ্যাসিস্টদের ফুটসোলজারদেরকে তাদের পত্রিকাগুলোতে প্লাটফর্ম দিচ্ছে তার নিন্দা করেছি এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য হুশিয়ার করেছি যেন এমন অপকর্ম থেকে সরে আসে।

একটি মাফিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে আমার এই যৌক্তিক বক্তব্য এবং অবস্থানকে 'মিডিয়ার প্রতি হুমকি' হিসেবে দেখাতে উঠে পড়ে লেগেছেন ৫ আগস্টের পর ওই মিডিয়া গ্রুপে চাকরি পাওয়া এমন কিছু সাংবাদিক যাদেরকে ২৪ অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবেই আমরা জানতাম। ৫ আগস্টের পর মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপটির অবৈধ টাকার কাছে আত্মা বিক্রি করে দেয়া ওই সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেসক্লাবে থাকা তাদের পদবী ব্যবহার করে বসুন্ধরার পক্ষে এমন বিবৃতি দিচ্ছেন যেখানে আমার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থান করেছেন।

আমি একটি তুলতে চাই যে, জাতীয় প্রেসক্লাবের যেই নেতারা আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে বিবৃতি দিলেন তারা কি কখনো বসুন্ধরা গ্রুপের মাফিয়া মিডিয়া আউটলেটগুলোর ছড়ানো ভুয়া খবরের নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন? ২৪ এর গণহত্যায় উস্কানিদাতা এই মিডিয়া গ্রুপের অপকর্মের নিন্দা করেছিলেন কখনো? 

আমি আরও প্রশ্ন করতে চাই, জুলাই আগস্টে যখন দেড় হাজারের বেশি ছাত্র জনতাকে গুলি করে পুলিশ হত্যা করছিল তখন এই জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতারা কি সেই গণহত্যার নিন্দা করে কোন বিবৃতি দিয়েছিলেন? বর্তমান যে নেতারা বিবৃতি দিচ্ছেন তারা দায়িত্ব নেয়ার (অনির্বাচিতভাবে) বাংলাদেশের মিডিয়াকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত করতে কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? নাকি শুধু নিজেরা কিছু পদ দখল করে আগের ফ্যাসিস্ট এনেবলার ও মাফিয়াদের সাথে যোগসাজশ করে নিজেদের পকেট ভারি করতে ব্যস্ত হয়েছেন?

আমি আমার বক্তব্যে যা বলার স্পষ্টভাবেই বলেছি এবং এখনও আবার স্পষ্টভাবেই বলছি, আমি ভূমিখেকো, বহু বছর আগে থেকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত, মিডিয়া মাফিয়া বসুন্ধরা গ্রুপের কর্তৃপক্ষকে হুশিয়ার করেছি যাতে তারা অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ডিসইনফরমেশন এবং হেইট ছড়ানো বন্ধ করে এবং পেশাদার সাংবাদিকতায় মনোযোগ দেয়।

আমি বাংলাদেশের স্বাধীন মিডিয়াকে কোন হুমকি কখনো দেইনি, বরং আমি স্বাধীন মিডিয়ার পক্ষে একজন এডভোকেট। কিন্তু 'স্বাধীনতা'র নামে ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্লাটফর্ম দেয়া এবং যে কারো বিরুদ্ধে ডিসইনফরমেশন ছড়ানো হলে তা মেনে নেয়া হবে না।

অত্যন্ত লজ্জার বিষয় হচ্ছে, ৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিস্টদের দ্বারা নিপীড়িত কিছু সাংবাদিক যখন মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপের পত্রিকায় চাকরি টিকিয়ে রাখতে আমার বিরুদ্ধে বিকৃত তথ্য দিয়ে বিবৃতি দেয়ার পর তাদের দেখানো পথে আওয়ামী পলাতক ফ্যাসিস্টদের সহযোগী ২৪ এর হত্যা মামলার আসামি সাংবাদিকদের একটি গ্রুপ অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর বিপক্ষে বিবৃতি দেয়ার সাহস পেয়েছে এবং সেই বিবৃতি ওই মাফিয়া গ্রুপের পত্রিকাসহ কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।

"গণমাধ্যমকে হুমকির প্রতিবাদ অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের বিবৃতি" শিরোনামের ওই খবরটি দেখা যাচ্ছে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে সৈয়দ বোরহান কবির, আবু জাফর সূর্য, নজরুল কবীরদের মতো আওয়ামী তথ্য সন্ত্রাসীদের নাম যারা ২৪ ছাত্র জনতা হত্যার পক্ষে বৈধতা উৎপাদনে রাতদিন কাজ করে গেছে এবং এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে এখন পলাতক আছে।

আমি বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী কয়েকজনের পরিচয় একলাইনে তুলে ধরছি--

সৈয়দ বোরহান কবির: বাংলা ইনসাইডার নামক আওয়ামী প্রপাগান্ডা ওয়েবসাইটের মালিক ও সম্পাদক যে, ২৪ এর গণহত্যা চলাকালে প্রতিদিন ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে ভুয়া খবর প্রচার করে তাদেরকে ভিলিফাই করতো। ২০১৮ সাল থেকে তার ওয়েবসাইটে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পক্ষে কয়েকশ ভুয়া প্রচার করা তথ্য ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইটগুলোতে পাওয়া যায়।

নজরুল কবীর: একাত্তর টিভি এই বিকৃত মানসিকতার সাংবাদিক নামক ব্যক্তিটি অভ্যুত্থান চলাকালে লাইভ টকশোতে হত্যার পক্ষে উস্কানি দিয়ে গেছেন যার ভিডিও অনলাইনে এভেইলেবল আছে।

আবু জাফর সূর্য: ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আওয়ামী ফ্যাসিস্ট অংশের এই নেতা ২৪ এর আন্দোলন চলাকালে সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে হত্যাযজ্ঞের বৈধতা দেয়া মিছিলে অংশ নিয়েছে।

শেখ জামাল: এই ব্যক্তি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। ৫ আগস্টের পর নিষিদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক লীগের হয়ে মিছিল করে গ্রেফতার হয়েছিল। তার নামও 'সাংবাদিক' হিসেবে বিবৃতে রয়েছে।

এভাবে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা প্রতিটি সাংবাদিক নামধারী ফ্যাসিস্ট এনেইবলার বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড়িয়ে ২৪ এর ছাত্র জনতার ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের প্রতি সমর্থন দিয়ে গেছে।

বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জা ও দু:খের বিষয় হচ্ছে, বসুন্ধরার মাফিয়া মিডিয়ার অপকর্মের পক্ষে দাঁড়াতে অভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী খুনিদেরকেও বুদ্ধিবৃদ্ধিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে শক্তিশালী করছেন কিছু সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মী যারা এক সময় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী ছিলেন।

আমি এই বিষয়টিতে আমার উদ্বেগ জানিয়ে রাখলাম। এবং একই সাথে ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক ফ্রন্টকে শক্তিশালী করে তুলতে তথাকথিত সাংবাদিক নেতাদের ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে রাখলাম।

সোর্স: Hasnat Abdullah 

Post a Comment

Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

[blogger]

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget