নিউরালিংক কি এবং এটি কীভাবে কাজ করে

নিউরালিংক কি এবং এটি কীভাবে কাজ করে
চিন্তা করা যায় প্রযুক্তি কই যাচ্ছে!!  ভালো কাজে প্রযুক্তি ব্যবহার জাতির জন্য কল্যানকর।

নিউরালিংক (Neuralink) হলো এলন মাস্ক (Elon Musk) প্রতিষ্ঠিত একটি নিউরোটেকনোলজি কোম্পানি, যার উদ্দেশ্য হলো মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সরাসরি সংযোগ তৈরি করা। সংক্ষেপে, এটি "Brain-Computer Interface (BCI)" তৈরি করে, যার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের সংকেত কম্পিউটার বা যন্ত্রের মাধ্যমে পাঠানো বা পড়া সম্ভব।

🔬 নিউরালিংক কীভাবে কাজ করে?
নিউরালিংক একটি ছোট ইলেকট্রনিক চিপ ও অনেকগুলো সূক্ষ্ম তার ব্যবহার করে যা মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। এই তারগুলো নিউরনের (মস্তিষ্কের কোষ) সংকেত সংগ্রহ করে এবং সেগুলো ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করে কম্পিউটারে পাঠায়।

🧠 প্রযুক্তির লক্ষ্য ও সম্ভাবনা:
1. মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সহায়তা:

পক্ষাঘাতগ্রস্ত (paralyzed) ব্যক্তিরা শুধু চিন্তা করে কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন।

অন্ধ বা বধির ব্যক্তিদের নতুনভাবে দেখা বা শুনার সুযোগ দিতে পারে।

2. মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি উন্নয়ন:
স্মৃতি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মস্তিষ্কের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন।
3. মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একত্রে কাজ:

ভবিষ্যতে AI যদি মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়, তখন মানুষ যেন AI-এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে সেই জন্য "মস্তিষ্ক + কম্পিউটার" শক্তি একত্র করা।

⚠️ ঝুঁকি ও বিতর্ক:
অপারেশনের জটিলতা ও ঝুঁকি।
মানুষের মস্তিষ্কে যন্ত্র বসানো নৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত প্রশ্ন তোলে।
হ্যাকিং ও ব্যক্তিগত চিন্তার গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ।

নিউরালিংক হল এলন মাস্ক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি নিউরোটেকনোলজি কোম্পানি যার লক্ষ্য ইমপ্লান্টেবল ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেস (BMI) এর মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সাথে একীভূত করা। কোম্পানির লক্ষ্য হল মানুষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং স্নায়বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, যাতে মানুষ তাদের চিন্তাভাবনা দিয়ে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

নিউরালিংকের প্রযুক্তির মূল বৈশিষ্ট্য:

মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI): নিউরালিংকের BCI প্রযুক্তি মানুষকে কেবল তাদের চিন্তাভাবনা ব্যবহার করে ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়। এটি N1 সেন্সর নামক একটি ক্ষুদ্র চিপের মাধ্যমে অর্জন করা হয়, যা মস্তিষ্কে ইমপ্লান্ট করা হয় এবং এতে 1,024টি ইলেক্ট্রোড থাকে যা মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করে এবং উদ্দীপিত করে।

নিউরাল ইমপ্লান্ট:

ইমপ্লান্টটি কম্প্যাক্ট এবং সুনির্দিষ্টভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা মস্তিষ্ক এবং ডিজিটাল ডিভাইসের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন মিথস্ক্রিয়ার অনুমতি দেয়। এটি নিউরালিংকের মালিকানাধীন রোবোটিক সিস্টেম ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ঢোকানো হয়।

প্রয়োগ:

নিউরালিংকের প্রযুক্তির বিভিন্ন সম্ভাব্য প্রয়োগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করা:

কোয়াড্রিপ্লেজিয়া বা অন্যান্য মোটর ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোবোটিক আর্ম বা কম্পিউটারের মতো ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করা।


দৃষ্টি পুনরুদ্ধার: নিউরালিংকের "ব্লাইন্ডসাইট" ইমপ্লান্টের লক্ষ্য হল দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা ব্যক্তিদের দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার করা, এমনকি যদি তাদের অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


শ্রবণ পুনরুদ্ধার: কোম্পানিটি একটি ব্রেন চিপ নিয়েও কাজ করছে যা গুরুতর শ্রবণশক্তি হ্রাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের শ্রবণশক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারে।

জ্ঞানীয় বর্ধন: সামগ্রিক মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য মানুষের জ্ঞান এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা।

মানব ইমপ্লান্ট: নিউরালিংক ছয়জন মানব অংশগ্রহণকারীর মধ্যে সফলভাবে তার "টেলিপ্যাথি" ব্রেন চিপ স্থাপন করেছে, যার মধ্যে সর্বশেষ ইমপ্লান্টটি ২০২৫ সালের জুনে ঘটেছিল। এই ইমপ্লান্টগুলি অংশগ্রহণকারীদের তাদের চিন্তাভাবনা, যেমন ভিডিও গেম খেলা বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করেছে।

বর্ধিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিউরালিংক তার ইমপ্লান্টের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা আরও পরীক্ষা করার জন্য তার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলি সম্প্রসারণ করছে। কোম্পানিটি তার মস্তিষ্কের ইমপ্লান্টকে একটি পরীক্ষামূলক রোবোটিক হাতের সাথে একত্রিত করে একটি সম্ভাব্যতা অধ্যয়নের জন্য FDA অনুমোদন পেয়েছে।

ব্রেকথ্রু ডিভাইসের নামকরণ: নিউরালিংকের "ব্লাইন্ডসাইট" ইমপ্লান্টকে FDA যুগান্তকারী ডিভাইসের নামকরণ করা হয়েছে, যা দ্রুত উন্নয়ন এবং পর্যালোচনা প্রক্রিয়াগুলিকে সহজতর করে।

সম্ভাব্য প্রভাব:

নিউরালিংকের প্রযুক্তিতে ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে মানুষের যোগাযোগের পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে এবং স্নায়বিক ব্যাধিযুক্ত ব্যক্তিদের জীবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। প্রযুক্তিগত বাধা এবং নৈতিক উদ্বেগ সহ চ্যালেঞ্জগুলি রয়ে গেলেও, নিউরালিংকের অগ্রগতি এমন একটি ভবিষ্যতের পরামর্শ দেয় যেখানে স্নায়বিক সীমাবদ্ধতাগুলি অতিক্রম করা হয় এবং মানুষের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।


🎯 সারসংক্ষেপ:

নিউরালিংক হলো মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে প্রযুক্তির সংযোগ তৈরির একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি একদিকে প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে বিপ্লব আনতে পারে, আবার অন্যদিকে ভবিষ্যতের মানুষের উন্নত সংস্করণ (enhanced human) তৈরির পথে এক ধাপ।

Post a Comment

Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

[blogger]

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget