কনের পিতা আশফিন শিকদার নিজের দু হাতের মুঠো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করলেন।তিনি ভেবেছিলেন আজকেই তুরানের সাথে নিজ কন্যা তানজিয়ার এংগেজমেন্ট সেরে ফেলবেন।সেই অনুযায়ী আজকে অনেক কাছের দূরের আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যাবে,তা কি তিনি জানতেন!
আশফিন শিকদারের ফর্সা মুখে বারবার রক্তলাল আভা টগবগ করে উঠছে। কিন্তু চাইলেও তিনি তার রাগটা প্রকাশ করতে পারছেন না।তিনি জানেন,মাথা গরম করলে কিছুই হবে না।হিতে বিপরীত হতে পারে।তার’চে ভালো মাথা ঠান্ডা রেখে তুরানকে বুঝানো।তুরান যা বলছে,তা কখনোই সম্ভব নয়।
আশফিন শিকদারের চেহারার পরিবর্তন তুরান ও দেখছে।তবে,এতে তার কিছুই যায় আসে না।সে নিশ্চিন্তে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।হাতে থাকা কোল্ড ড্রিংকের গ্লাসটায় একটু পরপর চুমুক দিচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে সে। মাঝেমধ্যে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজে চলেছে আপনমনে।নিজের কথা বলে ফেলেছে সে। আপাতত তার আর কিছুই বলার নেই।
বহুক্ষণ নিরব সব, নিস্তব্ধতায় ঢাকা পুরো শিকদার বাড়ি।ক্ষণবাদে নিরবতা ভাঙলেন আশফিন শিকদার।সোফা থেকে উঠতে উঠতে তুরানকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-—“ তোমার সাথে পার্সোনাল কিছু কথা আছে।আমার রুমে আসবে একটু?”
তুরান কোনো প্রত্যুত্তর করলো না।মাথা নেড়ে ইশারায় না বললো।
আশফিন শিকদারের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।তবুও ভদ্রতা দিয়ে রাগ নিবারণ করার চেষ্টা করলেন তিনি।ড্রয়িংরুমে থাকা লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন,সবাই যেন বাড়ির ভিতরে চলে যায়।গিয়ে রেস্ট নেয়।
মেহমানদের কারোরই আশফিন শিকদারের কথা অমান্য করার জো নেই।তাই অনেক কৌতুহল থাকা সত্ত্বেও সবাই বাড়ির ভিতর চলে গেলো।
সবাই চলে গেলে আশফিন শিকদার তুরানকে প্রশ্ন করলেন,
-—“ তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো?”
-—“ আমাকে দেখে কি আপনার অসুস্থ মনে হয়?”
তুরানের পেঁচানো কথা শুনে আশফিন খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।একটু দমে গিয়ে গলার স্বর রুক্ষ করার প্রয়াস করে তুরানকে বললো,
-—“ তুমি কি সত্যিই তানজিয়াকে বিয়ে করবে না?”
-—“ অবশ্যই না।”
-—“ কেন?কেন বিয়ে করতে চাও না আমার মেয়েকে?কি কম আছে তার মধ্যে?”
-—“দশ বছর আগে আপনার বোনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনি আপনার বোনকে আপনি আমার হতে দেননি,আর আজকে বলছেন আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে!বাহ্ শিকদার সাহেব বাহ!”
-—“ তখন আমি বুঝিনি তুরান যে তুমি আমার বংশের যোগ্য জামাই।আজ যখন বুঝতে পেরেছি,তখন আমার বোনের বয়স হয়ে গিয়েছ।আমাদের বংশে বিবাহ উপযুক্তা হিসেবে আমার মেয়ে তানজিয়া ব্যাতীত আর কেউ নেই।আর আমার মেয়ে রুপে গুণে যথেচ্ছা সুন্দরী।তোমার বউ হিসেবে একদম পারফেক্ট!”
—“ ভুল বলছেন! ইয়ারা ছাড়া কেউই আমার জন্য পারফেক্ট না।সে ব্যাতীত কেউ আমার যোগ্য না কখনো ছিল,আর না কখনো কেউ হতে পারবে!”
-—“ খালি ইয়ারা আর ইয়ারা।তার নাম ছাড়া আর কোনো কথাই নেই যেন এই শালার!” মনে মনে কথাটুকু বললো রুমের ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা তানজিয়া!নিজের পছন্দের ফুপুকেও আজ কেমন হিংসা হচ্ছে তার।আগে তো সে এমন ছিল না।তাহলে আজ কেন হচ্ছে এমন!আর ভাবতে পারলো না তানজিয়া। হঠাৎই রেগে গেলো সে।রাগ মিটাতে ছাদে চলে গেলো সে।
এইদিকে তুরানের কথায় আশফিন শিকদারের মাথায় যেন আগুন ধরে গেলো।অতীব কষ্টে নিজের রাগ নিবারণ তুরানকে বললেন,
-—“ তুমি কি সত্যিই আমার মেয়েকে বিয়ে করবে না?”
-—“ কোনো সন্দেহ?” শান্ত গলায় জবাব দিলো তুরান।
-— “ দেখো তুরান,আরেকটু ভাবো!”
-—“ এখানে দেখাদেখির বা ভাবাভাবির কিছুই নেই শিকদার সাহেব।আমি আমার মতে সর্বদা অটল!”
-—“ তবুও একবার ভাবো।আমার মেয়ে খুব সুন্দরী!”
-—“ শাট আপ মিস্টার আশফিন শিকদার।বারবার নিজের মেয়েকে সুন্দরী সুন্দরী বলে চিল্লিয়ে কি করার চেষ্টা করছেন?কি ভেবেছেন আপনি হ্যাঁ?আপনার মেয়ে কচি দেখে,তার রুপের গুণগান শুনে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবো?
এমনটা ভাবলে নিরাশ হবেন মিস্টার শিকদার।আমার জীবনে একজনই ছিল,যাকে ভালোবাসা যায়।আপনার মতো সো কল্ড গণমান্য ব্যাক্তির মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবো না মিস্টার শিকদার,পারবো না।” প্রায় রেগেই কথাটুকু বললো তুরান।
-—“ তু..রা..ন!” চিৎকার করে উঠলেন আশফিন শিকদার।
-—“ উঁহু হু হু..গলা নিচে।একদম নিচে!আপনি জানেন না,আপনি কার সাথে কথা বলছেন!”
-—“ তুমি কি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো?শিকদার ম্যাশন এর মালিকের সাথে কথা বলছো তুমি।”
-—“ আপনিও নিশ্চয়ই ভুলে যাননি আমি কে?আমি চৌধুরী ইন্ড্রাসটিজ এর একমাত্র কর্ণধার তুরান ইফতেখার চৌধুরী।আপনি যে টাকা ইনকাম করেন,তা আমার ম্যানেজারদের বেতনের থেকেও কম!”
—“ তু…রান!” ক্ষেপে গেলেন আশফিন শিকদার।
—“ জি বলুন!” তুরানের ভারী স্বর শান্ত হয়ে গেলো নিমেষেই।রুমের ডানদিকের জানালার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো সে।
তুরানের হঠাৎ শান্ত হয়ে যাওয়া দেখে আশফিন শিকদার খানিকটা অবাকই হলেন বটে। তুরানের দিকে তাকাতেই দেখলেন,সে কোথাও একটা তাকিয়ে আছে।তার দৃষ্টি অনুসরণ করে যখনি পিছু ফিরে জানালার দিকে তাকালেন,তখনি কারো হালকা বাতাসে জানালার পর্দা উড়ে গেলো। তৎক্ষণাৎ কেউ একজন জানালার ধার থেকে সরে গেলো বলে মনে হলো।তা দেখে আশফিন শিকদারের চোয়াল আরো শক্ত হয়ে গেলো,মুখে লাল আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে লাগলো। কিছু একটা বুঝে উনি তাড়াহুড়ো করে বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন!
_
-—“ ভাবী।আমি তো কখনোই চাইনি এমন দিন আমার জীবনে আসুক।তবে কেন এমন হলো ভাবী? কেন এমন হলো!বলো?” ইয়ারার কন্ঠস্বর কাঁপছে।
বড়ভাবী আফরিন গ্যাসের চুলার আঁচ একটু কমিয়ে দিয়ে ইয়ারার কাছে এলেন।ইয়ারা তখন রান্নাঘরের ভিতরেই দাঁড়িয়ে আছে।আফরিন এসে ইয়ারাকে একটা চেয়ারে নিয়ে বসালেন।জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে ইয়ারার মুখের সামনে ধরে বললেন,
-—“ নে,আগে পানিটা খেয়ে নে।তারপর কথা বল।”
-—“ পরে খাই?!”
-—“ এক্ষুনি খাবি।”
-—“ আমার হাত-পা কাঁপছে ভাবী।আমি গ্লাস ধরতে পারবো না।”
-—“ তোর ধরতে হবে না।আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।নে,পানিটা খেয়ে নে।তারপর একটু দম ছেড়ে বল,কি হয়েছে!”
আফরিন নিজেই ইয়ারাকে পানি খাইয়ে দিলো।তারপর গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে সযত্নে নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ইয়ারার মুখে লেগে থাকা পানি মুছে দিয়ে বললো,
-—“ এবার বল কি হয়েছে!”
-—“ আজকে তানজিয়াকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসার কথা ছিল না?”
-—“ হ্যাঁ তো?”
-—“ তারা এসেছে!”
-—“ হ্যাঁ এসেছে জানি তো! কিন্তু তোর কি হয়েছে।তোকে এতো অস্থির লাগছে কেন?মন খারাপ কেন তোর?”
-—“ পাত্রটা কে জানো?”
-—“ না তো,তোর ভাইয়া তো এসব বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করেনি।”
-—“ পাত্রের নাম ও জানো না?”
-—“ না তো!কি নাম?তুই জানিস?”
-—“ হ্যাঁ জানি ..ওটা তুরান!” বলেই একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো ইয়ারা।
-—“ কি বলিস?” আফরিন চমকে উঠলো।
-—“ হ্যাঁ..বড়ভাবী।”
-—“ তুই সত্যি জানিস তো?”
-—“ আমি নিজ চোখে তাকে দেখে এসেছি!”
-—“ তোর দেখায় ও তো ভুল হতে পারে।”
-—“ তাকে দেখায় ভুল?আর সেটা আমি করবো?তুমি ভাবতেও পারবে না আমি তাকে কতোটা চিনি!”
-—“ তবুও..!”
-—“ আমি সত্যি বলছি ভাবী।আমি তাকে দেখেছি।তার গলার স্বর নিজ কানে শুনেছি।তার গলার আওয়াজ তো আমি ভালো করে চিনি বড়ভাবী।সেটা তো তুমি জানো!”
-—“ হ্যাঁ..জানি তো।”
আকস্মিক তুরানের নামটা শুনে আফরিন কিছুক্ষণ একদৃষ্টে ইয়ারার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। পরিশেষে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ইয়ারাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
-—“ তা,তুরান কি বললো?”
-—“ ও আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে!”
-—“ ওমা..সত্যি!”
-—“ হ্যাঁ বড়ভাবী!”
-—“ তা তোর ভাই কি বললো?”
-—“ ভাইয়া তো ক্ষেপে গিয়েছে।”
তারপর ইয়ারা আফরিনকে আশফিন শিকদার আর তুরানের বাক্যালাপ থেকে যা যা শুনেছে সব বললো।
সব শুনে আফরিন ইয়ারাকে বললো,
-—“ তা তোর কি মত?”
-—“ যেখানে ভাইয়াই রাজি না,সেখানে আমার মত দিয়ে কি হবে ভাবী?” তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে জবাব দিলো ইয়ারা।
-—“ যদি আমি তোর ভাইকে রাজি করি।”
-—“ না না এমনটা করতে যেও না বড়ভাবী।তাহলে দশ বছর আগেকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।তখন ভাইয়া তোমায় আধমরা বানিয়ে ফেলেছিলো।আর এইবার তো তোমাকে আর ছাড়বেই না।তুমি কিছু বলতে যেও না ভাইয়াকে প্লিজ!”
ইয়ারার এমন কাকুতি মিনতি শুনে আফরিন ইয়ারাকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করালেন। ইয়ারার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-—“ বোনের খুশির জন্য এতটুকু মার সহ্য করতে পারবো না?”
-—“ বোনের খুশির জন্য কিছু বলতে গেলে বোন যে তোমাকে হারিয়ে ফেলবে ভাবী!আর তোমার বোন সেটা চায় না।একদম না!”
-—“ আমাকে হারানোর ভয় পাস?” ইয়ারার থুতনি উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো আফরিন!”
-—“ খুব ভয় পাই বড়ভাবী খুব!”
-—“ কেন রে?এতো ভয় কেন তোর?”
-—“ মায়ের পরে তুমিই তো আমার একমাত্র সম্বল।আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন ভাবী।তোমাকে হারালে আমিও যে হারিয়ে যাবো!”
-—“ ইশ..বোনটা আমার কতো বড় হয়ে গিয়েছে।কতো কথা বলতে শিখে গিয়েছে!”
-—“ বয়স কি আর কম হলো গো!গুণে গুণে আটাশ হয়ে গেলো!”
বলেই ফিক করে হেসে দিলো ইয়ারা।
আফরিন ইয়ারার মুখপানে তাকিয়ে রইলেন।মেয়েটা মুখে হাসলে কি হবে!তার চোখ বলে দেয়,কতোটা যাতনায় আছে সে!আহ! মেয়েটার জীবনে কি সুখ আসবে না?”
_
-—“ ভাবী।আমি তো কখনোই চাইনি এমন দিন আমার জীবনে আসুক।তবে কেন এমন হলো ভাবী? কেন এমন হলো!বলো?” ইয়ারার কন্ঠস্বর কাঁপছে।
বড়ভাবী আফরিন গ্যাসের চুলার আঁচ একটু কমিয়ে দিয়ে ইয়ারার কাছে এলেন।ইয়ারা তখন রান্নাঘরের ভিতরেই দাঁড়িয়ে আছে।আফরিন এসে ইয়ারাকে একটা চেয়ারে নিয়ে বসালেন।জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে ইয়ারার মুখের সামনে ধরে বললেন,
-—“ নে,আগে পানিটা খেয়ে নে।তারপর কথা বল।”
-—“ পরে খাই?!”
-—“ এক্ষুনি খাবি।”
-—“ আমার হাত-পা কাঁপছে ভাবী।আমি গ্লাস ধরতে পারবো না।”
-—“ তোর ধরতে হবে না।আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।নে,পানিটা খেয়ে নে।তারপর একটু দম ছেড়ে বল,কি হয়েছে!”
আফরিন নিজেই ইয়ারাকে পানি খাইয়ে দিলো।তারপর গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে সযত্নে নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ইয়ারার মুখে লেগে থাকা পানি মুছে দিয়ে বললো,
-—“ এবার বল কি হয়েছে!”
-—“ আজকে তানজিয়াকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসার কথা ছিল না?”
-—“ হ্যাঁ তো?”
-—“ তারা এসেছে!”
-—“ হ্যাঁ এসেছে জানি তো! কিন্তু তোর কি হয়েছে।তোকে এতো অস্থির লাগছে কেন?মন খারাপ কেন তোর?”
-—“ পাত্রটা কে জানো?”
-—“ না তো,তোর ভাইয়া তো এসব বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করেনি।”
-—“ পাত্রের নাম ও জানো না?”
-—“ না তো!কি নাম?তুই জানিস?”
-—“ হ্যাঁ জানি ..ওটা তুরান!” বলেই একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো ইয়ারা।
-—“ কি বলিস?” আফরিন চমকে উঠলো।
-—“ হ্যাঁ..বড়ভাবী।”
-—“ তুই সত্যি জানিস তো?”
-—“ আমি নিজ চোখে তাকে দেখে এসেছি!”
-—“ তোর দেখায় ও তো ভুল হতে পারে।”
-—“ তাকে দেখায় ভুল?আর সেটা আমি করবো?তুমি ভাবতেও পারবে না আমি তাকে কতোটা চিনি!”
-—“ তবুও..!”
-—“ আমি সত্যি বলছি ভাবী।আমি তাকে দেখেছি।তার গলার স্বর নিজ কানে শুনেছি।তার গলার আওয়াজ তো আমি ভালো করে চিনি বড়ভাবী।সেটা তো তুমি জানো!”
-—“ হ্যাঁ..জানি তো।”
আকস্মিক তুরানের নামটা শুনে আফরিন কিছুক্ষণ একদৃষ্টে ইয়ারার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। পরিশেষে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ইয়ারাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
-—“ তা,তুরান কি বললো?”
-—“ ও আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে!”
-—“ ওমা..সত্যি!”
-—“ হ্যাঁ বড়ভাবী!”
-—“ তা তোর ভাই কি বললো?”
-—“ ভাইয়া তো ক্ষেপে গিয়েছে।”
তারপর ইয়ারা আফরিনকে আশফিন শিকদার আর তুরানের বাক্যালাপ থেকে যা যা শুনেছে সব বললো।
সব শুনে আফরিন ইয়ারাকে বললো,
-—“ তা তোর কি মত?”
-—“ যেখানে ভাইয়াই রাজি না,সেখানে আমার মত দিয়ে কি হবে ভাবী?” তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে জবাব দিলো ইয়ারা।
-—“ যদি আমি তোর ভাইকে রাজি করি।”
-—“ না না এমনটা করতে যেও না বড়ভাবী।তাহলে দশ বছর আগেকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।তখন ভাইয়া তোমায় আধমরা বানিয়ে ফেলেছিলো।আর এইবার তো তোমাকে আর ছাড়বেই না।তুমি কিছু বলতে যেও না ভাইয়াকে প্লিজ!”
ইয়ারার এমন কাকুতি মিনতি শুনে আফরিন ইয়ারাকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করালেন। ইয়ারার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-—“ বোনের খুশির জন্য এতটুকু মার সহ্য করতে পারবো না?”
-—“ বোনের খুশির জন্য কিছু বলতে গেলে বোন যে তোমাকে হারিয়ে ফেলবে ভাবী!আর তোমার বোন সেটা চায় না।একদম না!”
-—“ আমাকে হারানোর ভয় পাস?” ইয়ারার থুতনি উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো আফরিন!”
-—“ খুব ভয় পাই বড়ভাবী খুব!”
-—“ কেন রে?এতো ভয় কেন তোর?”
-—“ মায়ের পরে তুমিই তো আমার একমাত্র সম্বল।আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন ভাবী।তোমাকে হারালে আমিও যে হারিয়ে যাবো!”
-—“ ইশ..বোনটা আমার কতো বড় হয়ে গিয়েছে।কতো কথা বলতে শিখে গিয়েছে!”
-—“ বয়স কি আর কম হলো গো!গুণে গুণে আটাশ হয়ে গেলো!”
বলেই ফিক করে হেসে দিলো ইয়ারা।
আফরিন ইয়ারার মুখপানে তাকিয়ে রইলেন।মেয়েটা মুখে হাসলে কি হবে!তার চোখ বলে দেয়,কতোটা যাতনায় আছে সে!আহ! মেয়েটার জীবনে কি সুখ আসবে না?”
Post a Comment