মেঘকন্যা

মেঘকন্যা
তোমার কাছে দুইটা অপশন দিলাম।তার মধ্যে একটা'ই বেছে নিতে হবে।
তুমি তোমার বউকে ডিভোর্স দিয়ে দিবা।নতুবা আমাদের ছেড়ে দিবে।যাকেই ছেড়ে দেওয়া না কেনো তাদের সাথে কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারবে না।

সবার সামনে বসিয়ে বাবা আমাকে কথাটি বললেন।আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পৌনে চারটা বাজে প্রায়।তুবারও স্কুল থেকে ফেরার সময় এসে গেছে।
আমি নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে রাখলাম।আমার বাসায় মেহমান ভর্তী বলতে গেলে।এদের মধ্যে কি জবাব দিবো বা বাবার কাছে কি প্রশ্ন করবো বুঝতেছি না।

এরই মাঝে আমার মা পাশ থেকে বলে উঠলো।

-মিহির আমরা তোমার ছোট বেলা থেকেই সমস্ত চাওয়া পাওয়া পুরন করেছি।আমাদের তোমার কাছেও চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে।আমরা চাই তুমি তুবাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাদের সাথেই থাকো।সেই থেকে যেহেতু তোমাকে আমরা দেখে রেখছি, সামনের দিন গুলিও দেখে রাখতে পারবো।তুমি অসুস্ত তো কি হয়েছে তোমার ট্রিটমেন্ট করার যথেষ্ট সম্পত্তি আমাদের আছে।তোমরা তো দুইটা ভাই এই সব সম্পত্তি তো তোমাদেরই।তাই না?আমরা চাই তুমি তুবাকে ছেড়ে দিবা।আমাদের এই আবদার টুকু রাখো।আর যদি না পারো তাহলে কালকেই আমাদের বাসা ছেড়ে দিতে হবে।এবং চিরতরের জন্য।

-মা!আর বাবাকেও বলছি।প্লিজ আপনারা এখন চুপ করে থাকুন।তুবা একটু পরেই বাসায় ফিরবে।এই কথা গুলো যদি ও শুনে তাহলে তুবা অনেক কষ্ট পাবে।আর হ্যা আমাকে সাতটা দিন সময় দিন।এই সাত দিনে আমি যা করার করবো।হ্যা আমি মানছি তুবা ভুল করেছে।কিন্তু এই ভুলটা কিন্তু আমার জন্য হয়েছে।এটা কিন্তু মিথ্যে নয়।

-আমরা এসব কিছুই শুনতে চাচ্ছি না মিহির।যা বলার এখানের সবার সামনেই বলতে হবে।

-বাবা হঠাৎ করে কিন্তু একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।আপনাদের কাছে যতটা সহজ আমার কাছে ঠিক ততটা কঠিন।এখানে আমার জীবন মরনের প্রশ্ন বাবা।
প্লিজ আমাকে এই মূহুর্তে চাপ দিয়েন না।সাতদিন পরে আমি যা করার করে নিবো।

আমার কথায় বড় খালু সায় দিয়ে উঠে চলে গেলো।আস্তে আস্তে সবাই উঠে আমার কাছ থেকে চলে গেলো।

বাবা আর মায়ের কথা শুনে আমার শরীর ঘামিয়ে একাকার।ফুল পাওয়ারে এসি চালু করা তার মাঝ থেকেই অস্থিরতার কাজ করছে।কি করবো বুঝতেছিনা।আর আজকের এই কথা গুলো যদি কোনো ভাবেই তুবার কানে যায় তাহলে তুবা যে অনেক কষ্ট পাবে।

তুবাকে আমি ভালোবেসেই বিয়ে করেছি।প্রথম প্রথম বাবা মা রাজী না থাকলেও পরে ঠিকই মেনে নিয়েছিলো।কিন্তু আমাদের বিয়ের পরে তুবা আর ওর বাবা মায়ের কাছে যায় নি।অবশ্য তুবার বাবা মাও তুবাকে যেতে বলেছিলো কিন্তু আমাকে রেখে আর যায় নি।কারন তারা সর্ত দিয়েছিলো যে তুবাকে মেনে নিলেও আমাকে ওর বাবা মা মেনে নিতে পারবে না।আমার পরিবারে আমাদের বিয়েটা মেনে নেওয়ার একমাত্র কারন হলো আমি মোটামুটি ভালোই একটা জব করি।সো তারা আমাদের মানিয়ে না নিলেও আমি সক্ষম।

আমাদের বিয়ের চার মাস পরেই আমার বড় ধরনের বাইক এক্সিডেন্ট হয়।সবাই ভেবে ছিলো আমি মনে হয় আর বেচে থাকতে পারবো না।কিন্তু আল্লাহের রহমতে আমি বেচে রয়েছি।বেচে আছি ঠিকই কিন্তু তিলে তিলে মরে যাচ্ছি আমি।হয়তো বেচে যাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়াটাই ভালো হতো।তাহলে আর এতো কিছু শুনতে হতো না।আমি বেঁচে আছি কিন্তু পঙ্গুত্ব ভাবেই বেচে থাকতে হবে আমার।

হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে হয়।বাবা আমার ঠিক মত ট্রিটমেন্ট করতে থাকলেও দুইমাস পরে নানান ধরনের কথা শুনতে হচ্ছে। অহেতুক ভাবে তুবাকেও কথা শুনতে হচ্ছে।

একদিন রাতে হঠাৎ করে তুবা আমাকে বলে ও একটা জব করতে চায়।আম যদি বলি তাহলে তুবা জবটা করবে।আমি জিজ্ঞেস করলাম.

-কিসের জব?

-একটা প্রাইভেট স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা।আমার এক বান্ধুবী সেই স্কুলে জব করে।তুমি যদি বলো তাহলে আমি জবটা করবো।আর দেখো তুমি তো অসুস্থ,আমরা দুইটা মানুষ কিভাবে এই সংসারে ঘাড়ের উপরে বসে চলবো?

-যদি তুমি ভালো মনে করো তাহলে জবটা করতে পারো।তার আগে আমার বাবার কাছেও জিজ্ঞেস করতে পারো।

-হ্যা তার কাছেও জিজ্ঞেস করবো।

-আচ্ছা ঠিক আছে।

সেই থেকে প্রায় রাতেই তুবা মুখ গুজে কান্না করতো।আমি কিছু জানতে চাইলেও তুবা চুপচাপ ভাবে থাকতো।আমি মাঝে মধ্যে ফ্যামিলির কথা শুনে কিছুটা আঁচ করতে পারতাম।তারপরে নতুন করে আর কিছুই জিজ্ঞেস করিনি আমি।সেই থেকে আমার বুঝতে আর সমস্যা হলো না তুবা কেনো হুটহাট জব করার সিদ্ধান্ত নিলো।

আমার এই পঙ্গুত্ব জীবন দেখেও তুবা আমাকে এখনো আগের মত ভালোবাসে।আমার দেখাশুনা ঠিকঠাক ভাবে করে।সময় মত ঔষধ খাইয়ে দেয় বা দুপুরের টাইমে ফোন দিয়ে ঔষধ খেতে বলে।

তুবা যখন ওর জবটার কথা বাবাকে জানায় তখন বাবা অসম্মতি দেয়।পরে আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলার পরে তুবা জবটা করার সুযোগ পায়।

সকাল নয়টার দিকে তুবা বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় আর দুইটার দিকে ফিরে।কিন্তু তুবা এই কয়েকদিন ধরে বিকেল চারটার দিকে ফিরে।জবের পাশাপাশি তুবা  টিউশানি করে।আমি নিষেধ করেছিলাম।তারপরেও টিউশানি করে তুবা।

আমি নিশ্চুপ ভাবে দেখতাম। এছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলো না। নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হয় আমার।সারাটিদিন তুবা বাহির থেকে এসে বাসায় রান্নাবান্না সহ সকল ধরনের কাজ করেও বিভিন্ন কথা শুনে।আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকি।

ইদানীং তুবার সাথে বাসার সবাই কেনো যেনো খুব বাজে বিহেইভ করে।তারপরেও তুবা আমাকে কিছু জানায়নি।

দিন পনেরো আগে তুবার কাছে জিজ্ঞেস করি...

-আচ্ছা তুবা তুমি জব সহ টিউশানিতে টোটাল কতটা মাইনে পাও?

-এই মোটমাট তেইশ হাজারের মত হবে।

-তাহলে চলো আমরা আলাদা ভাবে একটা বাসা নিয়ে থাকি।এভাবে আর কতদিন কথা শুনবে তুমি?

-আরে কি যে বলো না!সমস্যা নাই তো আমার।তুমি বাদ দাও তো।

-উহু,আমি প্রায়ই বিভিন্ন কথা শুনতেছি,কিন্তু তুমি আমাকে কিছুই বলো নি।

-আচ্ছা বাদ দাও তুমি রাতে ব্যথার পিলটা খেয়েছো?

-হ্যা।আমি সুস্থ যে কবে হবো?

-আল্লাহের উপরে আস্থা রাখো,আল্লাহের রহমতে সুস্থ হয়ে যাবা তুমি।

এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে জল জমাট বাধলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ছয়টা বেজে গেছে প্রায়।কিন্তু তুবা এখনো বাসায় ফিরেনি।আর একটু পরেই আজান দিবে।বাসায় তো এখনো ফিরছে না।আমি ফোনটা হাতে নিয়ে তুবাকে ফোন দিলাম।ফোনটা রিসিভ করলো না। কয়েকবারই ফোন দিলাম।ওর ফোন পিক না করাতে চিন্তায় পরে গেলাম।বাসার গেইটের দিকে তাকিয়ে আছি ব্যালকনিতে বসে।

দুপুরে ঔষধ গুলো না খাওয়ার জন্য কোমড়ে আবার ব্যথা শুরু হয়েছে।আর তাছাড়া দুপুরেও খেতে বসে উঠে আসলাম।ভেবেছিলাম তুবা আসলেই খাবো।

আমার খালাতো বোন ওর বয়স বারো কি তেরো হবে।হাতে চায়ের কাপ নিয়ে এসে বললো...

-ভাইয়া চা বানিয়েছি আমি,খেয়ে দেখো!

-তুই খাইছিস? নাকি আমার কাছেই আগে নিয়ে আসলি।

-আমি তোমার এই কাপ দিয়েও এক চুমুক দিয়েছি।

আমি চায়ে চুমুক দিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম।
চেয়ারটা সামনে এগিয়ে ওর গালে হাত দিয়ে বললাম,,

-খুব সুন্দর চা বানাতে পারিস তো।

-আচ্ছা ভাইয়া ভাবি কি আর বাসায় আসবে না?

-হ্যা আসবে তো।বাহিরে কি কাজ করছে যেনো?

-কিন্তু খালামনি তো ভাবিকে অনেক কথা শুনিয়ে দিলেন।এবং নিষেধ করেও দিয়েছেন বাসায় ফিরতে।তাই তো না খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

-কি বলিস এসব?তুবা তো আমাকে কিছু জানাবে? আর মা তো কিছুই বললো না।

-আমি তো আর কিছু জানি না ভাইয়া।

এইটুকু বলেই বোন আমার কাছ থেকে চলে গেলো।তুবাকে আরেকটিবার ফোন দিলাম কিন্তু ফোন পিক করার নামই নাই।

তবে কি বাবা পরশু যেটা আমাকে বলেছে সেটা সত্যি?.....

"আমি জানি আপনি বিবাহিতা, আপনার স্বামী আছে, তবুও কথাটা বলছি৷ আমার মনে হচ্ছে আপনি খুবই নিঃসঙ্গ বোধ করছেন। আপনার কি একজন সঙ্গী প্রয়োজন?"

মেসেজটা দিকে কয়েক পলক চেয়ে রইল অনন্যা। ধীরেসুস্থে মোবাইলটা তুলে নিয়ে উত্তর দিল, "কেন মনে হলো আমি নিঃসঙ্গ?"

"প্রায় রাতেই দেখি জেগে বসে থাকেন অনলাইনে।"

"হতে পারে কাজ করছি, কিংবা আমার কোনো বিজনেস আছে, হতে পারে না? ধরেই নিলেন আমি নিঃসঙ্গ?"

"আমার ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।"

"আচ্ছা, যদি নিঃসঙ্গ হয়ে থাকি তাহলে কী করবেন?"

"আপনার একাকীত্ব দূর করার চেষ্টা করব।"

"কিভাবে?"

"কথা বলে, পাশে থেকে।"

"তাই? আপনি কি আনম্যারিড?"

"না, আমার স্ত্রী আছে, একটা মেয়ে আছে।"

"তাহলে আপনি এত রাতে অনলাইনে কী করছেন?"

"দেখুন, জাজমেন্টাল হবেন না। আমি কিন্তু আপনাকে জাজ করিনি, বরং সাহায্য করতে চেয়েছি। আমার স্ত্রী বাপের বাড়ি গেছে। আমার একা লাগছিল বলে অনলাইনে আসা। আপনাকেও প্রায়ই জেগে থাকতে দেখি বলে একটু সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করতে এলাম।"

হাসল অনন্যা। হাসির ইমো পাঠালো। তারপর লিখল, "জানেন, বিয়ের পরপর আমার স্বামীর সাথে আমার দারুণ একটা সম্পর্ক ছিল! কী ভীষণ মিষ্টি ছিল সময়গুলো! আমাকে সে ‘মেঘকন্যা’ ডাকত। আমার চোখের দিকে চেয়ে থাকত ঘন্টার পর ঘন্টা। আমার হাতের রান্না ছাড়া এক বেলা বাইরে খেতে পারত না। আমাকে জড়িয়ে না ধরে ঘুমাতে পারত না। এজন্য আমাকে বাপের বাড়িও যেতে দিতে চাইত না।"

"আর এখন?"

"এখন সে আমাকে ভুলে গেছে।"

"মানে?"

"মানে সিম্পলি ভুলে গেছে। আমি শুধু তার ছেলেমেয়ের মা। আমাকে সংসার চালানোর টাকা দিতে হবে, অসুখ হলে ডাক্তার দেখাতে হবে এটুকু দায়িত্ব সে হাসিমুখে পালন করে। আর কিছু বাকি নেই আমাদের মাঝে।"

"কেন এমন হলো?"

"কারন তার জীবনে অন্য কেউ এসেছে। এখন তাকেই ভালো লাগে। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, অন্য কারো জন্য জায়গা ছেড়ে দেবার সময় তার একবারো তার মেঘকন্যার কথা মনে হয়নি। মানুষের ভালোবাসা এত ঠুনকো কেমন করে হয় বলতে পারেন? কিছু মানুষকে তো দেখি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসছে, আমার কপালে সামান্য মিথ্যে ভালোবাসা, কিংবা বিয়ের পরের সামান্য রোমান্টিক সময়ই বরাদ্দ ছিল বোধহয়।"

"অন্য কেউ জীবনে আসার মানে তো এটা নয় যে সে আপনাকে ভালোবাসে না।"

"আপনি আপনার স্ত্রীকে ভালোবাসেন?"

"অবশ্যই।"

"তাহলে তার অনুপস্থিতিতে আমার একাকীত্ব দূর করতে এলেন যে? পুরুষ মানুষের মনে আসলে অনেক জায়গা থাকে তাই না?"

"আপনিও আমার মেসেজের উত্তর দিয়েছেন, কথা বলছেন, কিন্তু দোষ দিচ্ছেন আমার। আমি আমার পার্টনারের দোষ বলতে বসিনি, আপনি বসেছেন।"

"আপনি আমার দুঃখের কথা শুনতে চেয়েছেন বলেই বলছি। এটা ছাড়া আমার আর তো কোনো দুঃখ নেই। বাকি সব দিক থেকে পরিপূর্ণ আমি। কিন্তু জানেন, এই একটা কারনে হাসিখুশি মানুষ হাসতে ভুলে যেতে পারে, জীবনটা বিস্বাদ মনে হয়। যখন সে অন্য নারীর সাথে সময় কাটায়, আমি ব্যাপারটা কল্পনা করি, আমার মনে হয় আমার ভেতর স্লো পয়জনিং হচ্ছে। আমি বুঝি বেশিদিন বাঁচব না। মন মরে গেলে মানুষ কতদিন বাঁচে? বেশিদিন বাঁচা উচিত নয় তাই না?"

"আপনি তাকে ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন?"

"চাইলেই কি ছেড়ে দেয়াই যায়? আমার ছেলেমেয়েদের কী হবে? ওরা চমৎকার একটা জীবনযাপন করছে। ওদের মানসিক স্বাস্থ্যের খুব যত্ন নিয়েছি আমি ছোটো থেকেই। ওদের কাছে ওদের মা বাবা আইডিয়াল কাপল। এখন যদি তাদের বিচ্ছেদ হয় তাহলে ওরা কী পরিমাণে আঘাত পাবে কল্পনা করা যায় না। ওদের বাবা পরকীয়া করার সময় ওদের কথা ভাবেনি৷ এখন যদি আমিও না ভাবি, শুধুই নিজের দিকটা ভাবি, তাহলে ওদের সাথে কতটা ইনজাস্টিস হবে ভাবা যায়? এজন্য ওদের পৃথিবীতে এনেছি বলুন?"

ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ নিরবতার পর লেখা হলো,

"আপনি নিজেও নাহয় আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ুন। যে লয়্যাল না তার সাথে লয়্যাল থাকার কোনো প্রয়োজন আছে?"

অনন্যা আবারও কিছুক্ষণ হাসল। তারপর লিখল, "এত সহজ নয়। আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি৷ এতকিছুর পরেও ভালোবাসি৷ কেন বাসি জানি না। বোধহয় ভালোবাসার অভ্যাস হয়ে গেছে। সবাই চাইলেই চিট করতে পারে না।"

"তাহলে জীবনের কাছে কি আপনার কোনো এক্সপেক্টেশন নেই?"

"আছে তো! এই যেমন ধরুন আমি এখনো রোজ আশায় থাকি সে অফিস থেকে ফিরে হাসিমুখে একটু গল্প করবে। বেশি না, ধরুন দশ মিনিট। তারপর ফোন চাপুক, আমি মেনে নেব। ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ার আগে আমার কপালে একটা চুমু খাক। একবার মেঘকন্যা বলে ডাক দিক!"

"খুব বেশি ব্যক্তিগত কথা বলে ফেলছেন না?"

"আপনাকে একেবারেই চিনি না জানি না বলে বলতে পারছি। এসব আমি কাউকে শেয়ার করতে পারি না। পরিচিত কেউ বা খুব কাছের বান্ধবীকেও শেয়ার করা সম্ভব নয়। সবাই আমার স্বামীকে ভীষণ রেসপেক্ট করে। আমি তার সম্মান কোথাও কমাতে চাই না।"

"আপনার স্বামী এখন কোথায়?"

"হয়তো তার প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে কোথাও।"

"কী বলছেন এসব!"

"আমি শিওর আপনার স্ত্রীও আপনাকে বিশ্বাস করেন। রাত বিরাতে মহিলাদের মেসেজ দেয়ার কথাটা তিনি জানলে নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন না। তাকে ভালোবেসে থাকলে এসব ছেড়ে দিন। ভালো থাকুন।"

লোকটা কিছু একটা লিখছিল। অনন্যা উত্তরের অপেক্ষা করল না৷ ব্লক করে দিল। সে কেন এই লোকটাকে এসব বলল জানে না। বলে এখন নিজেরই লজ্জা লাগছে। কান্নাও পাচ্ছে।

আজ রাহাত বাড়িতে নেই। বলেছে অফিসে প্রচন্ড কাজের চাপ৷ রাতে থাকতে হবে। অনন্যা বোকা নয়। সে জানে কোথায় থাকবে সে। তার মাঝে মাঝে সহ্যের বাঁধ ভেঙে যেতে চায়। ইচ্ছে করে দু-চোখ যেদিকে যায় চলে যেতে৷

**

রাহাত মোবাইল হাতে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে বারান্দায়। বেডরুম থেকে একটা নারীকণ্ঠ ডাকছে তাকে, "তুমি কি সারারাত বারান্দায় বসে থাকবে? সকালে আমাদের অফিস যেতে হবে মনে আছে? কাল তো তোমাকে পাবো না৷ একটু কাছে এসে থাকো না!"

রাহাত কিছু বলল না৷ অফিস কলিগের সাথে তার এই সম্পর্কের কথা সে লুকিয়ে রেখেছিল সবার কাছেই। তার ধারণাও ছিল না অনন্যা কথাটা জানে।

আজ প্রেমিকার সাথে একান্তে সময় কাটাবার পর ঘুম আসছিল না বলে বারান্দায় এসে বসেছিল। অনন্যাকে অনলাইনে দেখে একটু অবাক হয়ে, কিংবা বলা যায় সন্দেহ থেকেই ফেক আইডি দিয়ে মেসেজ করেছিল তাকে। দেখতে চেয়েছিল অনন্যা কেমন রেসপন্স করে। যা করেছে তা সে আশা করেনি।

আচ্ছা, সে এতদিনেও কেন এটা বুঝতে পারল না যে অনন্যাকে সে বহুদিন মেঘকন্যা বলে ডাকেনি? অনন্যা তার সাথে এত কষ্টে আছে এটা সে সত্যিই জানত না। সে তো ভেবেছিল তার প্রেম পরকীয়ার কথা অনন্যা কোনোদিন ধরতেই পারবে না। তার মনেও হয়নি সে ওকে ঠকাচ্ছে। বরং মনে হয়েছে একটাই জীবন, একটু উপভোগ করলে দোষ কী? তার মানে তো এটা নয় যে সে অনন্যাকে ভালোবাসে না৷ কিন্তু ভালোবাসলে সে কি তাকে ঠকাতে পারত? আর যদি ভালো নাই বাসে, তাহলে এখন খারাপ লাগছে কেন?

এভাবে নিজের কাছে ধরা পড়ায় অদ্ভুত লাগছে তার৷ এখন অনন্যার সামনে কেমন করে যাবে সে? অনন্যা জানে না সে তার কাছেই তার কথা বলেছে।

বেডরুম থেকে বেরিয়ে এলো মেয়েটা। রাহাতের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, "কী ঘুমানোর ইচ্ছে নেই?"

রাহাত ছাড়িয়ে নিল নিজেকে। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "বাসায় একটু সমস্যা হয়েছে। আমাকে যেতে হবে।"

"কী হয়েছে?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল মেয়েটা।

"পরে বলব।"

রাহাত জামাকাপড় পরে বেরিয়ে পড়ল। রাতের মাত্র দুটো বাজে। এত রাতে বাসায় যাবার প্রশ্নই আসে না৷ সে বেরিয়ে এসেছে সেখানে থাকতে পারছিল না বলে।

এখানে ওখানে ঘুরে রাতটা কাটাল সে। খুব ভোরে অনন্যাকে ফোন করল সে।

অনন্যা সারারাত ঘুমায়নি। মাত্র চোখ লেগেছিল, ফোনের শব্দে জেগে উঠল সে।

"হ্যালো।"

ওপাশ থেকে ভেসে এলো রাহাতের গলা, "মেঘকন্যা, আমার একটা ভুল হয়ে গেছে। অনেক বড় ভুল। তুমি কি আমাকে ক্ষমা করবে?"

(সমাপ্ত)
💫সোর্স: YTS STORY💫

Post a Comment

Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

[blogger]

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget