তুষারের জীবনে কেয়ামতের আলামত

তুষারের জীবনে কেয়ামতের আলামত


তুষারের জীবনে কেয়ামতের আলামত এনে দিলেন নীলা ইসরাফিল। শেষ তুষারের রাজনীতি, শেষ ভালোবাসা, শেষ সামাজিক মর্যাদা। সাথে ডুবলো তার পরিবার-পরিজনের সম্মান, আর জাতীয় নাগরিক পার্টির সুনামও। নীরব মুখের আড়াল ফেলে সরাসরি স্বীকার করলেন নীলা— সেই ভাইরাল অডিওর নারী কণ্ঠ তারই। 

নীলা ইসরাফিলের পেজ থেকে নেয়া লিখাটি নিচে দেয়া হল 

আমার নাম নীলা ইসরাফিল।

আমি এনসিপির সদস্য হই বা না হই—আমি একজন যোদ্ধা। ✊

আমি যখন শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম, লেক্সাসে চড়তাম। ২৬ জন কাজের লোক ছিল। বিলাসিতার কোনো অভাব ছিল না। তবুও খারাপ প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রয়াত উপদেষ্টা সুফি-চেহারার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিভৎস হাসান আরিফকেও ছাড় দিইনি।

কারণ আমার মূল্যবোধ আমাকে শিখিয়েছে—অন্যায়ের সাথে আপোষ করা যায় না। তাই আমি পুরো সমাজ, রাষ্ট্র, ক্ষমতার শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তির অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি।

আমি জানতাম, আমি যা বলবো, কেউ বিশ্বাস করবে না। এটা অবিশ্বাস্য।

আমি জানতাম, এত সুদর্শন, এত সম্মানিত, অভিজাত একজন মানুষকে চ্যালেঞ্জ করার অপরাধে সমাজ আমাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলবে।

তবুও আমি আমার প্রতি করা অবিচারের প্রতিবাদ করে গিয়েছি—অসংখ্য প্রলোভন, ভয়, হুমকি পেয়েও আপোষ করিনি।

ফলাফল? আমার নামে ১৯টি মামলা দেওয়া হলো। কোনো আইনজীবী, এমনকি ওয়ান-ইলেভেনের উপদেষ্টা, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের বিপক্ষে দাঁড়ায়নি।

আমার ছোট মেয়ের জন্ম হয়েছে কারাগারে। এখনো আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে একসাথে ঘুমাতে পারিনি।

২০২০ সালে আমার গর্ভের সন্তানকে লাথি মেরে মেরে ফেলা হয়েছে।

তবুও আমি থামিনি। প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফ, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ, পুলিশ ও ডিবির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি।

আপনারা কীভাবে আশা করেন যে, তুষারের আমার প্রতি এই আচরণের আমি প্রতিবাদ করব না?

আমি গণ-অভ্যুত্থানের কর্মী। রাস্তায় নেমেছি, আন্দোলন করেছি। এর কারণেই হাসান আরিফ আমাকে দুই সন্তান রেখে বাসা থেকে বের করে দেয়। বলেছিল, আমার কারণে আওয়ামী লীগ বাসায় চলে আসবে।

সেই সময় গণ-অভ্যুত্থান আর বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তারা আমার অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল।

আমি সপ্রতিভ, সৃষ্টিশীল, কর্মঠ একজন মানুষ। আগস্টের পর আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মীদের সাথে আলাপ হতো। তখনই তুষারের সাথে পরিচয়—এনসিপি গঠনেরও আগে।

গত ডিসেম্বরে আমার প্রাক্তন স্বামী মুয়াজ আমাকে ঢাকা ক্লাবে সবার সামনে স্টেক নাইফ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এরপর শহিদুল ভাই, সারা আপা, ফজিয়া করিম আন্টিসহ অনেক মানবাধিকার কর্মী উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে নেপালে পাঠান।

নেপালে থাকাকালীন তুষার আমাকে প্রায়ই ফোন করত। তার আলাপের ধরন পাল্টে যায়—

“তোমার ছবি দাও”,

“তোমার ঠোঁট সুন্দর”,

“তোমার স্লোগান, প্রতিবাদী কণ্ঠ আমাকে আকৃষ্ট করে।”

আমি বারবার তুষারকে সাংগঠনিক ও ফর্মাল রাখার অনুরোধ করেছি।

বাংলাদেশের অসংখ্য নারী এভাবে ক্ষমতাবান পুরুষের সাথে সম্পর্ক ম্যানেজ করে চলতে হয়।

২৮ ফেব্রুয়ারি, এনসিপির আত্মপ্রকাশের দিন আমি বাংলাদেশে ফিরি। রোজার সময় তুষার অত্যন্ত আপত্তিকর কথা বলে। এরপর আমি কথা বলা বন্ধ করি। কিন্তু সে বারবার চাপ দেয়।

এক পর্যায়ে জানায়, ডিবি তার সাথে কথা বলেছে—আমার সম্পর্কে। তখন আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। তাই মনে হয়েছিল, হয়তো আইনগত বা নিরাপত্তা হুমকি আছে—এই কারণে আমি আলাপের ৪৭ মিনিট রেকর্ড করি।

আলাপে তুষার বলে, ডিবিকে জানিয়েছে আমি তার গার্লফ্রেন্ড। আমি তাতে প্রশ্ন তুলি। সে খারাপ প্রস্তাবও দেয়।

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি—আমি কী করেছি যে, তুমি এমন প্রস্তাব দিতে সাহস পাও?

এই আলাপ আমি মানবাধিকারকর্মী রেজাউল করিম লেনিন ও তুষারের সাবেক গার্লফ্রেন্ড বিথি সপ্তর্ষিকে জানাই। নিরাপত্তার জন্য সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরকেও অডিও দেই। প্রয়োজনে প্রকাশের অনুমতি দেই।

আমি সংগঠনের স্বার্থেই বিষয়টি চেপে রাখতে চেয়েছি। কিন্তু তুষার আমাকে সেই সুযোগ দেয়নি।

সে আমাকে এনসিপি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। সহকর্মীদের বলে—“নীলার থেকে দূরে থাকো।”

নানাভাবে সাংগঠনিকভাবে আমাকে দূরে সরাতে চেয়েছে।

কোরবানির রাতে নাহিদের সাথে দেখা হয়, তাকে জানাই। সে বলে মহানগরের শাহরিয়ার ও নিজামকে জানাতে।

আমি জানাই। পরদিন দেখি—অডিও কেটে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল!

এরপর শুরু হয় মিডিয়া ট্রায়াল। নারী সহকর্মীরাও পাশে দাঁড়ায়নি।

আমার অপরাধ—আমি পাশ্চাত্য পোশাক পরি, ‘তুমি’ করে কথা বলি, সহজ মিশি।

আমি এসব সহ্য করবো। আল্লাহ আমাকে আরও বড় বড় দুঃখ দিয়েছেন।

কিন্তু সবাই বুঝছে না—আজ যদি তুষার আমাকে দমন করতে পারে, কাল অন্য নারীও তার শিকার হবে।

সবাই নীলা ইসরাফিল নয়—

৩৫ সপ্তাহের গর্ভে সন্তান নিয়ে ৩৭ দিন জেলে থেকে জন্ম দেওয়া, তারপরও প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করা, বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে একলা লড়াই করা সবার কাজ নয়।

আমার খারাপ লাগছে এনসিপির জন্য।

আমি দলটাকে ভালোবাসি। এখানকার ছেলেমেয়েরা ভুল করলেও দেশের জন্য লড়তে চায়।

আমার কারণে তারা কলঙ্কিত হয়েছে। ট্রায়ালে পড়েছে।

আমি চেয়েছিলাম দলীয়ভাবে মীমাংসা হোক। তুষার যেন শুদ্ধ হয়। যেন কোনো নারী আর লাঞ্ছিত না হয়।

এনসিপি ভদ্রলোকদের দল হোক। নারী কর্মীরা নিরাপদ থাকুক।

অনেকে বলছে—“দ্বিতীয় ভিডিও কেন?”

কিন্তু অডিও ভাইরালের পর যা ফেস করেছি—

‘আমি সিডিওস’, ‘আমি কেন তুমি করে কথা বলি’, ‘আমি পদ-পদবির লোভে এমন করেছি’—এসব শুনেছি।

কেউ বিশ্বাস করেনি।

কেউ ফোন করে বলেনি—“তুমি ঠিক করেছো।” সবাই যেন তুষার ভিকটিম, আমি অপরাধী।

বিথি আজও তার ইস্যু মেটাতে পারেনি। তাই আমি সচেতনভাবে রেকর্ড করেছি। হয়তো ভুল করেছি। হয়তো করিনি।

তাসনুভার জন্য খারাপ লাগছে। ওর কোনো দোষ নেই। ওকেও আমার কারণে নোংরা সময় পার করতে হয়েছে।

এর বাইরে আমার কোনো গিল্টি বা রিগ্রেট নেই।

কখনো মনে হয়—হাসান আরিফ, তুষারের সাথে প্রতিটা ঘটনা যদি রেকর্ড করে দেখানো যেত—তাহলে সবাই দেখত—

আমি আগুনের উপর দিয়ে হাঁটা, সতীত্বের পরীক্ষায় পাশ করা এক নারী।

আপনাদের পরীক্ষায় পাশ-ফেল আমার দরকার নেই।


এই বিষয়ে এটাই আমার শেষ কথা। তদন্ত কমিটিকে বাকিটা বলবো।

আমি এই ঘটনাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

#Bd #বাংলাদেশ #Bangladesh #bangladeshi



Post a Comment

Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

[blogger]

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget