দেহ



দেহ
শুধু মাত্র মানসিকভাবে /প্রা/প্ত\ব\য়সীদের জন্য

মেয়েটার পরনে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা আটসাট চকচকে পোশাক! কাঁধ, গলা, বুকের উপরিভাগ সম্পুর্ণ উন্মুক্ত! বিশাল উচু এক হিল জুতা তার পরনে যেটা থেকে দড়ির মতো জিনিষ  প্যাচ খেতে খেতে সরু লিকলিকে পা বেয়ে হাটু পর্যন্ত উঠে এসেছে ! গায়ের রং শ্যামলা অথচ চুলের রং সাদাটে সোনালী! গুলশান এলাকার এদিকটায় প্রচুর খাবারের দোকান যেগুলো রাত এগারটার সময়েও কাসটমারে ভরপুর ! সেইসব দোকান থেকে আলো এসে মেয়েটির লিপগ্লস লাগানো মোটা মোটা ঠোঁট দুটোতে ঠিকরে পরেছে ! ঠোটগুলোর কারনে মেয়েটিকে কেমন যেন অন্য গ্রহের মানুষ বলে মনে হচছে ! 

       এত কিছুর পরও মেয়েটিকে মোটেই আবেদনময়ী লাগছেনা ! 
একটি মেয়ে ঢাকা থাকুক বা আঢাকা- তার আবেদনের মূল অংগ হলো চোখ আর হাসি! মেয়েটির জং ধরা লোহার মতো লালচে রং এর মুখে কোন হাসি নাই ! চোখ মাছের চোখের মতো ভাবলেশহীন! মেয়েটি দূরে তাকিয়ে কি যেন দেখছে অথবা খুজঁছে!

   আমি গাড়িতে বসে অনেকক্ষন ধরে মেয়েটিকে লক্ষ্য করছি! আমার মায়ের ব্লাড সুগার মাপার যন্ত্রের স্ট্রিপ শেষ হয়ে গেছে ! দোকানদার স্ট্রিপ আনতে গেছে ! আমি অপেক্ষা করছি ! তখনই মেয়েটার দিকে নজর যায়! হাবভাবে,মনে হলো সে কারও জন্য অপেক্ষা করছে!
     একসময় মেয়েটির চাহনি দেখে বোঝা গেল, যার জন্য সে অপেক্ষা করছিলো সেই মানুষটা চলে এসেছে! সে মানুষরূপী অমানুষটা বেটে মতোন, শুকনা প্যাকাটি, মুখে একটা মাস্ক পরে আছে ! কেমন যেন চোরের মতো গতিবিধি! দেখেই গা ঘিনঘিন করে উঠলো! -দালাল!
    সে মেয়েটির কাছাকাছি আসেনা ! পাঁচ হাত দূরে থাকতেই ইশারা দেয় আর মেয়েটি তাকে অনুসরন করে হাটতে থাকে !

   রাস্তার কেউ কেউ মেয়েটির দিকে এক পলক তাকায় আবার যে যার কাজে চলে যায় ! এই এলাকার লোকজন এসব দেখে অভ্যস্ত! 
    মেয়েটির লেবাস দেখে ভেবেছিলাম তারা হয়তো দামী কোন গাড়িতে উঠবে! কিনতু অবাক হয়ে দেখলাম, একটু দূরে যেখানে দোকানের আলো পৌছায় না সেখানে আগে থেকেই একটা সিএনজি দাড়ানো আছে ! দুজন সেটাতে উঠলো! কই যাবে এরা ? কোন হোটেলে না কোন বাসায় ? মনে মনে মেয়েটির উদ্দেশে বললাম, “যাইস না বইন ? দোহাই লাগে যাইস না! 
এরা সামান্য টাকার বিনিময়ে শরীর ভোগ করবে কিন্তু তোর আত্মার যে দুর্ভোগ হবে তার মূল্য এরা চুকাবে না বইন! এর চেয়ে হাসপাতালে আয়ার কাজ কর!”
     হাসপাতালের কথায় মনে পরলো ,জেলখানায় মাঝেমাঝেই বিভিন্ন স্পা সেন্টার থেকে দেহ পসারিনী ধরে আনা হতো ! তাদের একজনকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, “এসব করো কেন? না করে কোথাও ছোটখাট জব করলেও তো পারো !”
সে মুখ বেঁকিয়ে বলেছিলো, “ একবার হাসপাতালে জব নিয়েছিলাম, সারা মাস খাটনি করে যে বেতন পাই, এই স্পা সেন্টারে সেটা তিন দিনের বেতন! আবার কাস্টমার খুশি করতে পারলে উপরি বখশিষ - সেইটার ভাগ দালালদের দেওন লাগেনা! আর রোগীদের গু মুত … থু !” সে থু করে একদলা থুতু ফেলে!

ওকে কে বোঝাবে যে, ওর পুরো জীবনটাই গু মুত হয়ে গেছে ! 
আমি তারপরও মরিয়া হয়ে বলি,”তুমি সমাজে তোমার সম্মান এর কথা ভাববে না ?”
“সমাজ? থু..” আবার সে একদলা থুতু ফেলে -এবার আমার পায়ের কাছেই ! লাফ দিয়ে সরে যাই !
“ডাক্তার আপা, কম ইনকাম নিয়া যখন বস্তিতে থাকমু, তখন রিক্সাওয়ালা, মুদিওয়ালা,ভ্যানওয়ালা বদ নজর দিব, গায়ে গরুর মুতের মতো ঘামের গনধ নিয়া শুইতে চাইবো! থু! এখন যেখানে থাকি, যেখানে কাজ করি সেখানে সব বড়লোকেরা আসে! তাদের গায়ে ফুরফুরা দামী সেন্টের ঘ্রাণ, শরীর মাখনের মতো পিসলা, চকচকা হাত পায়ের নখ!”
আমি নির্বাক হয়ে যাই ! আজ আবার অনেকদিন পর মনে পরে মেয়েটির কথা… সমাজ? থু !
সত্যঘটনা অবলম্বনে

পুনশ্চ: লেখা পড়ে একজন এই মেয়েটির প্রকৃত নাম জানিয়েছে ! তার জীবনে নাকি অনেক ট্রাজেডি! ভদ্র গরিব ঘরের মেয়ে!
সোর্স: এফবি

Post a Comment

Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

[blogger]

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget