এই যুদ্ধ কি তবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে?



এই যুদ্ধ কি তবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে? 
অমিত গোস্বামী 

পশ্চিম এশিয়ার শান্তি বিশ বাঁও জলেঃ

এই মুহুর্তে বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে তুমুল ঝড় চলছে। বোঝা মুশকিল যে হচ্ছেটা কী! ইরান এবং ইজ়রায়েলের সংঘাতের আজ নবম দিন। সংঘর্ষের ঝাঁজ বাড়ছে।  হামলা পালটা হামলার কোনও বিরাম নেই। আমেরিকা অস্ত্র ধরবে কি না, দু’সপ্তাহের মধ্যে সে সিদ্ধান্ত নাকি নেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইজ়রায়েল  চাইছে আমেরিকা এখনই যুদ্ধে নামুক।  তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিতে যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সায় নেই বলেও আমেরিকা বাগাড়ম্বর ছাড়া আর কিছুই করছে না। ইজ়রায়েলের একার পক্ষে এই যুদ্ধ বেশি দিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। টেনেটুনে বড়জোর দু’সপ্তাহ ‘আগ্রাসন’ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তেল আভিভের। তাই তারা অল আউট যুদ্ধে যাচ্ছে। লাগাতার ক্ষেপনাস্ত্র ছুঁড়ছে। ইরানও তাই। দুই দেশই ‘পয়েন্ট অফ নো রিটার্ণ’-র দাঁড়িয়ে। আরব বিশ্ব ছাড়া পৃথিবীর সব দেশ চাইছে ইরান পরমানু শক্তিধর দেশ যেন না হতে পারে, কিন্তু ইরান পরমানু বোমা বানাতে বদ্ধপরিকর। শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরান এবং ইজ়রায়েল, দু’দেশের প্রতিনিধিই জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যেতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। কাজেই পশ্চিম এশিয়ার শান্তির খোঁজ ‘বিশ বাঁও জলে’।  

ফুটেজ খাচ্ছেন ট্রাম্পঃ

রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে  “ইরানে জমানা পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা অকল্পনীয়। এটা নিয়ে কথা বলাও সমর্থনযোগ্য নয়।” রাশিয়ার বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র মারিয়া জ়াখারোভা বলেন,'আমেরিকা ইরানে হামলা চালালে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে।' ট্রাম্প পাত্তা দেন নি। বলেছেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে ভাবুক’। অতিমধ্যে খবর ভাসছে যে পাঁচ পাঁচটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান চিন থেকে উড়ে গিয়েছে ইরানের দিকে। মুখে কিছু না বললেও  বিমানগুলি ইরানে পাঠিয়ে আদতে তেহরানের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে বেজিং। চিনের গরজ বড় বালাই। চিন তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে যে গ্যাস এবং তেল আমদানি করে, তার ৪৩ শতাংশ আসে পশ্চিম এশিয়া, মূলত ইরান থেকে। এদিকে নিজের দেশে লস এঞ্জেলেস শহর থেকে বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডের ব্যর্থতার পরে মেরিন বা সেনা নামানো ট্রাম্প ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধ বিয়ে বিবৃতি দিয়ে ফুটেজ খাচ্ছেন। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে তার কোন ভূমিকা নেই, সেকথা স্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে ভারত সরকার জানানোর পরে ‘আমি যুদ্ধ থামানোর নায়ক’ বলে চিল চিৎকার জুড়েছেন। 

রুটির লোভে লেজ নাড়ছে পাকিস্তানঃ  

ওদিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার এক সাক্ষাৎকারে বলে ফেলেছেন, ‘আমাদের যুদ্ধবিরতির আবেদনে সাড়া দিয়ে ভারত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে’। ওদিকে ওদিকে পাক সংবাদমাধ্যম ডন জানাচ্ছে যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করল পাকিস্তান! কেন? কৌশলে তিনি নাকি ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সমঝোতা করিয়েছেন। নোবেল শান্তি পুরস্কারকে বিশ্ব এ জন্যেই পাত্তা দেয় না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রটোকল ভেঙে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে মধ্যাহ্নভোজে ডাকলেন। তারপরই পাকিস্তান তাদের ইরান ৯০৫ কিমির ইরান সীমান্ত বন্ধ করে দিল। সামরিক বিমানঘাঁটি আমেরিকার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিল। অথচ এই পাকিস্তান সর্বপ্রথম সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে ইরানের পক্ষে দাঁড়াতে বলেছিল। কিন্তু যাদের দিন কাটে ভিক্ষাপাত্র হাতে দেশে দেশে ঘুরে তারা যে ইরানের পিঠে ছুরি বসাবে তা আর নতুন কী! ইতিমধ্যে ভারত আমেরিকার এফ ৩৫ বিমান কেনার প্রস্তাব ঠান্ডাঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে রাশিয়া ভারতকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সুখোই ৫৭ই কেনার প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির উৎপাদন এবং হস্তান্তর। এক্ষেত্রে ভারতের সাথে অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। ফলে আমেরিকা বেজায় চটেছে। 

এই সরকার ডোবাচ্ছে বাংলাদেশকেঃ

এবারে একটা প্রশ্ন বাংলাদেশের অনেকে করছেন তা হল বাংলাদেশ ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধে ইরানকে সমর্থনকারী দেশগুলির বিবৃতিতে সিরিয়া, পাকিস্তানের মতই স্বাক্ষরদান করল না কেন? গত বুধবার অর্থাৎ ১৮ জুন চিনের কুনমিং শহরে চিন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়। যেখানে চিনের উপবিদেশমন্ত্রী সন ওয়েডং, বাংলাদেশের বিদেশ সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী ও পাকিস্তানের বিদেশ সচিব আমনা বালোচ উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে কী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা প্রকাশ্যে আসে নি। কিন্তু তাদের মুখ্য আলোচনা ছিল চিন প্রদত্ত অস্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে ব্যর্থ হওয়া, ভারতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি স্থিমিত করা ও আমেরিকার সাথে দূরত্ব রাখা। পাকিস্তান মূলত দুমুখো নীতির দেশ। একদিকে আমেরিকাকে বলছে, গুরুদেব দয়া কর দীনজনে। অন্যদিকে চিনকে বলছে, তোমার থেকে আমি অপরিশোধ্য ঋণ নিইয়ে ৫০% রিবেটে অস্ত্র কিনছি, আমি তোমার। কিন্তু পাকিস্তান যে প্রতারক রাষ্ট্র জেনেও তাদের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয় না কেন? তাদের ভৌগলিক অবস্থান ও তাদের জমি সহজেই ব্যবহারের জন্য ভাড়া পাওয়া যায় বলে। টাকা দিলেই তারা লেজ নাড়ে। একই পন্থা নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশের বর্তমান শাসক গোষ্ঠি। দুটি কারণে তারা পারছে না তার কারণ সামরিক বাহিনী দেশের সার্বভৌমতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের মত রাজনৈতিকভাবে অচেতন নয়। ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধে চিনের নির্দেশেই বাংলাদেশ প্রতিবাদে স্বাক্ষর করে নি। 

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে ভারতের অবস্থানঃ 

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে ভারতের অবস্থান কী! এককথায় নিরাপদ দূরত্ব রাখছে ভারত। একটি জায়গায় ইজরায়েল ও ভারতের নীতিগত মিল আছে। তা হল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নো টলারেন্স নীতি। ইরান আরব বিশ্বের ১২ টি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর প্রতিপালক। আজ  লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লাদের বিরুদ্ধেও আঘাত হানল ইজয়ায়েল। তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয়েছে হিজ়বুল্লার সিনিয়র কমান্ডার মহম্মদ খাদর আল-হুসেইনির। এদিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কয়েকটি সেনাঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও রণতরী সরিয়ে নিচ্ছে আমেরিকা। পশ্চিম এশিয়ায় সবচেয়ে বড় মার্কিন সেনাঘাঁটি আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে (যা কাতারের রাজধানী দোহার অদূরে অবস্থিত) সকলের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে। পরিস্কার ইঙ্গিত দু’এক দিনের মধ্যে আমেরিকা যুদ্ধে জড়াবে। পাকিস্তানের বিমানঘাঁটিগুলি ব্যবহৃত হবে। এদিকে লাহোরে লস্কর ই তৈবার সন্ত্রাসী নেতা হাফিজ সয়িদের বাড়ি পাকিস্তান চারস্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলেছে। সরিয়ে নিয়েছে সন্ত্রাসীদের গুপ্ত আস্তানায়। তাদের ভয় ভারত আবার ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালু করে দেবে কিনা। নাহ, ভারত অত বোকা নয়। কোথায় থামতে হয়, জানে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ভারতের অর্থনৈতিক অবরোধেই কাবু হবে। চড়-থাপ্পড়ের প্রয়োজন হবে না।

Post a Comment

Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

[blogger]

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget