যৌন নির্যাতনের দন্ড বিয়েঃ নোবেল নির্দেশ
অমিত গোস্বামী
আইন-কানুন সর্বনেশেঃ
প্রতিবেশী বাংলাদেশে/ আইন-কানুন সর্বনেশে / লাঞ্ছনা কেউ নারীকে করে/ পুলিশ এসে পাকড়ে ধরে/কাজীর আজব হয় বিচার/ বিয়ে করলেই মাফ তার। সুকুমার রায়ের কবিতাকে আঁকড়ে ধরলাম আজ বাংলাদেশের এক আজব বিচার শুনে। ভারতে একটি রিয়েলিটি শো-এর দৌলতে বাংলাদেশের গায়ক মইনুল আহাসান নোবেল এপার বাংলায় বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন। এপারে ছবির গানও গেয়েছেন তিনি। তারপরে যা হয়! নেশা করে মঞ্চে মাতলামি, একাধিক বিবাহ, প্রতারণা, গার্হস্থ্যহিংসার মতো অভিযোগ অনেক বার উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এপারে মুছে গেলেও ওপারে জনপ্রিয়তা কিছুটা অবশ্যই ছিল।
নোবেল কীর্তিঃ
গত বছর নভেম্বর মাসে একটি মেয়েকে নিজের স্টুডিয়ো দেখানোর নাম করে ডেকে নিয়ে যান নোবেল। তার পর তাঁর উপর অত্যাচার করা হয়। রাত ৮টার পর ওই মহিলা বেরিয়ে যেতে চাইলে তাঁর মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন নোবেল। পরে তা ভেঙেও ফেলেন। অভিযোগ, এর পর ধর্ষণ করে তার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করেন গায়ক। ছড়িয়ে দেওয়া হয় সেই ভিডিয়ো। এর পর সাত মাস ওই মহিলাকে জোর করে নিজের কাছে আটকে রাখেন বলেও অভিযোগ। তত দিনে নির্যাতনের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যায়। পরে নির্যাতিতার বাবা-মা গিয়ে মেয়েকে নোবেলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন। গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের হয়।
কাজীর বিচারঃ
সেই মামলার রায় আজ বেরোল। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) নাজমিন আখতার অভিযোগকারিণীকে বিয়ে করার নির্দেশ দিলেন নোবেলকে। এই বিয়ে হলে তা হবে নোবেলের চতুর্থ বিয়ে। এই আদেশ দিলেন কেন আদালত? নোবেল তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে এই মামলা থেকে মুক্তি চান বলে আবেদন করেন। অভিযোগকারিণীও নাকি রাজী। তাই আদালত উভয় পক্ষের সম্মতিতেই বিয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। বুঝুন অবস্থা। ভারতে ধর্ষণের শাস্তি সর্বোচ্চ পনের থেকে কুড়ি বছরের ফৌজদারি কারাদণ্ড। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একই অপরাধে ৩৭৫ ধারায় কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে, অপরাধীর শাস্তি হবে ১০ বছর থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ড।
ক্যামনে কী?
নির্যাতনের ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরে আদালত এই নির্দেশ দেয় কী করে? ডেমরা থানার পুলিশ গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৮ নং আইন) বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধ এবং শাস্তির উদ্দেশ্যে প্রণীত। এই আইনে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এবং অর্থদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই মামলাটি হয়েছে রাষ্ট্র বনাম বাংলাদেশের গায়ক মইনুল আহাসান নোবেল এর। এক্ষেত্রে অভিযোগকারিণী একজন সাক্ষীমাত্র এবং মামলা তুলে নেওয়ার অধিকারী নন।
নারীসম্মান আজ প্রশ্নবিদ্ধঃ
বাংলাদেশের নারীদের মর্যাদা তাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের নাটক ও সিনেমায় নারীদের প্রতি দুর্ব্যবহার অনেক সময় লক্ষ্য করা গেছে। অনেকবার বিভিন্ন নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছিল। জানি না, সে’সব বন্ধ হয়েছে কিনা। কিন্তু আজকের নোবেলকে বিয়ে করার আদেশ দিয়ে মামলার সমাপ্তি ঘটানো আমার কাছে বোধগম্য হল না। এমন বিচার হয় কীভাবে?
সোর্স: অমিত গোস্বামী
Post a Comment