2025
১৮জুলাই ৩৬ জুলাই Bangladesh Bangladesh Politics bangladeshi BangladeshPolitics bd BreakingNews CNP24 Current News Bangladesh EARNINGS Google Pay Hasnat Abdullah International mahathir mohamad National NCP NID NID CORRECTION Scholarship অতিরিক্ত ম্যানেজমেন্ট অধ্যাপক আবুল বারকাত অনলাইন আবেদন অন্তর্বর্তী সরকার অফিস অফিস জব অফিস পলিটিক্স অর্থনীতিবিদ আধুনিক গান আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন আবুল বারাকাত আযান কবিতা আর্টিকেল আল মাহমুদ ইউনুস ইউরোপ ইরান ইসরায়েল ইসলাম ইসলামী জীবন ইসলামী রাজনীতি উকিল নোটিশ উচ্চতা উচ্চশিক্ষা উপন্যাস এক টাকায় রোগী দেখেন এনআইডি এনআইডি সংশোধন এনআইডি হালনাগাদ এনসিপি এন্ড্রোকিশোর এমবিবিএস ঐক্যমত ওয়াকার-উজ-জামান কবি আল মাহমুদ করোনা করোনাভাইরাস কাঠ কাঠের হিসাব গল্প গাজা গাজাবাসী গান গুগল পে গোপালগঞ্জ ট্র্যাজেডি গোল কাঠের হিসাব গ্রামীণ ব্যাংকে ঘুম চাহিদা চেয়ারম্যান জনতা ব্যাংক চেরাই কাঠের মাপ চৈত্রিকা ছোট গল্প জব জাতীয় সংবাদ জিপে জীবনযাপন জুলাই আন্দোলন জুলাই বিপ্লব জেনারেলওয়াকার জ্ঞান টিউলিপ সিদ্দিক টেক নিউজ ড. ইউনুস ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ড. মুহাম্মদ ইউনুস ডক্টর ইউনূসকে টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি তথ্যপ্রযুক্তি তুষার তুষার কান্ড তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দক্ষতা দাম্পত্য জীবন দুর্নীতি দূতাবাস দ্য ইকোনমিস্ট ধর্ম জীবন ধর্মভিত্তিক দল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ধারাবাহিক উপন্যাস ধৈর্য নতুন পলাশীর প্রান্তর নারী নারীর যৌনতা নিউরালিংক নিউরালিংক কি? নিউরালিংক কীভাবে কাজ করে নিষ্ঠাবান কর্মি নীল রক্ত নোটিশ নোবেল নোংরা রাজনীতি পরকীয়া পরমতসহিষ্ণুতা পরীক্ষার ভাইভা প্রস্তুতি পরোপকারী পারমাণবিক প্রধান উপদেষ্টা প্রযুক্তি প্রেম প্রেম ল ফিলিস্তিন বন্দী পাখি বাংলা গান বাংলাদেশ বাংলাদেশরাজনীতি বাংলাদেশে জিপে বিচার বিভাগ বিচ্ছেদ বিদেশ বিদ্যুৎ বিয়ে বিরহ বিশ্ব সংবাদ বিশ্বযুদ্ধ বিস্ময়কর প্রতিভা ব্যাক্তিত্ব ভাইভা ভাইরাল নিউজ ভারত নিউজ ভারতের প্রেসিডেন্ট ভালোবাসা মন বাড়িয়ে ছুঁই মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার কমিশন ঢাকা মানবিকতা মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ মীর মুগ্ধ মৃত্যু ও হিংস্রতা মেঘকন্যা ম্যানেজমেন্ট যৌন নির্যাতন রক্তাক্ত বাংলাদেশ রাজনীতি রাজনৈতিকসংকট রাজাকার রাতের ইবাদত রাতের ঘুম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লাইফ পার্টনার লাভ বোম্বিং শহীদ জিয়া শিক্ষা শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু সখের নারী সঙ্গীত সচিবালয় সন্তানকে অভাব চিনতে শিখান সময় মতো ঘুম সম্পর্ক সহিষ্ণুতা সাইলেন্ট ডিভোর্স সাংবাদিক সাংবাদিক ইউনিয়ন সাহিত্য সিম কার্ড সিমের রেজিস্ট্রেশন সিমের রেজিস্ট্রেশন বাতিল সীমিত চাহিদা সুন্দর জীবন সুস্থ জীবন সেনাবাহিনী সোনার খাঁচা স্ত্রী স্বামী স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ স্মার্টনেস হারানো সিম হিংস্র রাজনীতি হিংস্রতা

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিটি পাকড়াও করে নিজের দেশে নিয়ে এলেন। পাখির জন্য সোনার খাঁচা বানানো হলো। খাঁচায় ভিতরে স্বাধীনতার অভাব থাকলেও খাবারের কোনো অভাব ছিল না। সহজে অন্নসংস্থান হওয়াতে, কিংবা হয়তো বাধ্য হয়ে, সোনার খাঁচায় রূপার দাঁড়ে বসে বণিককে খুশি করতে পাখি গান করে গেলো দিনের পর দিন। 

কিছু দিন পর বণিক আবার বাণিজ্যে যাবে সেই দূর দেশে। যাবার আগে পাখির কাছে গিয়ে বললো: ‘পাখি, আবার তোমার দেশে যাচ্ছি। দেশের বন্ধুদের জন্যে তোমার কোনো বার্তা আছে কি?’ পাখি বললো: ‘বন্ধুদের কারও সঙ্গে দৈবাত্‌ দেখা যদি আপনার হয়েই যায়, তাদের জানাবেন, সোনার খাঁচায় রূপার দাঁড়ে বসে আপনার জন্য গান গেয়ে মহা সুখে আছি আমি। আমার সুখের বর্ণনা শুনেই বার্তা যা পাবার তারা পেয়ে যাবে এবং আমার কী করণীয়, আপনাকে দিয়ে সেটাও ইঙ্গিতে বলে পাঠাবে।’ 

বাণিজ্য সেরে বণিক আবার সেই বনে গিয়ে দেখলো পোষা পাখির বুনো জাতভাইয়েরা গান গেয়ে গাছে গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে। ‘তোমাদের কি স্মরণ আছে, বহু দিন আগে তোমাদের এক বন্ধুকে আমি আমার দেশে নিয়ে গিয়েছিলাম? তোমরাতো কত কষ্টে গাছের উপর বাসা বেঁধে থাকো। তোমাদের বন্ধুকে আমি সোনার খাঁচায় রেখেছি। সে তোমাদের জানাতে বলেছে, সোনার খাঁচায় রূপার দাঁড়ে বসে আমার জন্য দিনরাত গান গেয়ে সে মহা সুখে আছে।’  

বণিকের বক্তব্য কানে যাওয়া মাত্র কয়েকটি পাখি গাছের ডাল থেকে দুপদাপ করে মাটিতে পড়ে গেলো। কী ব্যাপার? কাছে গিয়ে বণিক দেখলো, সবগুলো পাখি মারা গেছে। খুবই মন খারাপ করে বণিক সেই বন থেকে বের হলেন। দেশে ফিরে এসে পাখিকে দুঃসংবাদটা দিতেও বণিকের খুবই খারাপ লাগছিল।

দেশের বন্ধুদের মৃত্যুসংবাদ শোনা মাত্র পোষা পাখিটি জ্ঞান হারিয়ে রূপার দাঁড় থেকে সোনার খাঁচায় তলায় পড়ে গেলো। প্রিয় পাখির মৃত্যুতে খুবই  মন খারাপ হলো বণিকের। মৃতদেহ বের করার উদ্দেশ্যে খাঁচার দরজা যেই খোলা হলো, পাখিটি ফুরুত্‌ করে উড়ে গিয়ে বসলো বাড়ির সামনে একটি গাছের উচু ডালে। 

প্রিয় পাখি এভাবে প্রতারণা করাতে বণিক যতটা না অবাক হলেন, তার চেয়ে বেশি দুঃখ পেলেন মনে। খাঁচায় ফিরে আসার আকুল আহ্বানে বিন্দুমাত্র সাড়া না দিয়ে পাখি বললো: ‘ওরে মূর্খ বণিক! আমার একটি বন্ধুও মারা যায়নি। খাঁচা থেকে মুক্তি কীভাবে পেতে হয়, সেই কৌশল আমাকে শেখানোর জন্যে তারা মরার ভান করেছিল!’ 

‘তুমি কি সুখী ছিলে না পাখি, আমার সোনার খাঁচায়? কোন অভাবটি তোমার আমি অপূর্ণ রেখেছিলাম?’ উত্তরে পাখি বললো: ‘শোনো বণিক, পাখি মাত্রেরই একটিই আকাঙ্ক্ষা থাকে: মুক্ত আকাশে ইচ্ছামতো সে উড়ে বেড়াবে। কোনো খাঁচায় এই আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ হয় না, সোনা কিংবা লোহা, খাঁচা যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন। 

জনগণও পাখির মতো। অপশাসনের খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে সুনীল আকাশে তারা উড়তে চায়। বেশির ভাগ শাসক সে জিয়া হোক, হাসিনা হোক, কিংবা ইউনুস, নিজের স্তুতিগীত শোনার স্বার্থে জনগণকে আটকে রাখতে চায় এক বা একাধিক খাঁচায়। মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় শাসক বদলাতে গিয়ে জনগণ ভুল করে বার বার খাঁচা বদলায়। 

বাঙালির জীবনে খাঁচার কোনো শেষ নেই, ‘পাকিস্তান’ ছিল (কিংবা এখনও আছে) একটা খাঁচা, এখন ধর্ম হয়েছে আরেকটা কঠিন খাঁচা। ‘পাকিস্তান’ নামক খাঁচা থেকে মুক্ত করেছিলেন একজন শেখ মুজিব, কিন্তু সেই মুক্তিদাতাকে যে বেঈমান বাঙালিরা দুই দুই বার হত্যা করেছে, তাদের কপালে যে ভয়ঙ্কর একাধিক খাঁচা থেকে মুক্তির আশু সম্ভাবনা নেই, তাতে সন্দেহ কী?
সোর্স: এফবি

কি আছে এই ডিস-ক্লোজার চুক্তিতে
Dr Mozahedul Hoque Repon এর ওয়াল থেকে নেওয়া।
---------------‐--------------------------------------------------------
২১ পাতার চুক্তির কপিটি মোটা দাগে ৬ ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ ৬ ধরনের শতাধিক শর্ত সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে চুক্তিতে। এগুলো হলো—কর সংক্রান্ত শর্ত, অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত শর্ত, ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত শর্ত, রুলস অব অরিজিন সংক্রান্ত শর্ত, অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত এবং বাণিজ্যিক শর্ত। 

অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত এবং বাণিজ্যিক শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ও চাপের বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। এসব শর্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি যেমন নিশ্চিত করা হয়েছে। তেমনি চীনা আমদানি কমাতেও এতে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে।  

অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত শর্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, মার্কিন বিভিন্ন মানসনদ বাংলাদেশকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নিতে বলা হয়েছে। আর যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো আইন প্রণয়ন কিংবা স্ট্যান্ডার্ড স্থাপন করতে পারেনি, সেসব ক্ষেত্রে মার্কিন স্ট্যান্ডার্ড প্রতিস্থাপন করতে বলা হয়েছে। যাতে মার্কিন পণ্য অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। 

বাণিজ্যিক শর্ত (৬টি)

১. মার্কিন সামরিক ইকুইপমেন্ট আমদানি বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে এবং চীনা সামরিক পণ্য আমদানি কমাতে হবে।

২. রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমানের মাধ্যমে মার্কিন বেসামরিক উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ আমদানি বাড়াতে হবে।

৩. মার্কিন জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধি নিশ্চিত করত হবে বাংলাদেশকে। এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে হবে।

৪. সামাজিক নিরাপত্তা খাতের জন্য মার্কিন গম আমদানি বাড়াতে হবে।

৫. সামরিক বাহিনী ও সরকারি সংস্থার জন্য মার্কিন সয়াবিন তেল আমদানি বাড়াতে হবে। এবং সয়াবিন সংরক্ষণের জন্য মার্কিন কোম্পানির অংশীদারিত্বে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।

৬.মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানাতে হবে। 

 অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত (৬টি) 

১. জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও শিপিং খাতের বিকাশে যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।  

২. বন্দর, জেটি ও জাহাজে চীনের তৈরি লজিস্টিকস সিস্টেম লগিঙ্ক (LOGINK) ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই ব্যবস্থাটি এরই মধ্যে নিরাপত্তা অজুহাতে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

৩. ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটির অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের মার্কিন পণ্য দেশটিতে রপ্তানি, পুনঃরপ্তানি করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

৪. ইউএস উৎপাদিত ও নিয়ন্ত্রিত পণ্যের আমদানি সংক্রান্ত সকল কাস্টমস তথ্য দেশটিকে দিতে হবে। 
যাতে মার্কিন সংস্থাগুলো লেনদেন চিহ্নিত করতে পারে।
 
৫. বাংলাদেশকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সিভিল ও ক্রিমিনাল ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অংশীদার করতে হবে। 

৬ বিভিন্ন দেশের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত এমন ধরনের সফটওয়্যার তৈরিতে স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে।   

ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত শর্ত (৫টি)

১. তথ্য আদান প্রদানে বৈশ্বিক ক্রস-বর্ডার গোপনীয় নীতিমালা সিবিপিআর এবং পিআরপি স্বীকৃতি দিতে হবে বাংলাদেশকে।

২. ব্যক্তিগত ডেটা গোপনীয়তা নীতিমালা প্রণয়নে মার্কিন সরকার ও দেশটির বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা বাড়াতে হবে। এবং ফিডব্যাকের প্রতিফলন থাকতে হবে।

৩. সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ ২০২৫—এ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত সেফগার্ড নিতে হবে। সাইবার অপরাধের কঠোরতর সাজা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ২০২১ সালের ওটিটি নীতিমালা সংশোধন অথবা বাতিল করতে হবে। যাতে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড সেবায় শনাক্তকরণ শর্ত না থাকে।

৫. ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাহার্টসের স্পেকট্রাম এলপিআই ও ভিএলপিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

কর সংক্রান্ত শর্ত মার্কিন পণ্য রপ্তানিতে ৩ ধরনের শুল্ক কমাতে বলেছে দেশটি। এগুলো হলো কাস্টমস ডিউটি, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি এবং রেগুলেটরি ডিউটি।

১৩ খাতে নন ট্যারিফ বাধা সংক্রান্ত শর্তঃ 

ওষুধ, কৃষি, পরিবেশসহ ১৩ খাতে নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার বা অশুল্ক বাধা চিহ্নিত করে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রায় অর্ধশত শর্ত দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

মেডিকেল ডিভাইসেসঃ

চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত মার্কিন প্রযুক্তি পণ্য আমদানিতে বেশকিছু বাধা চিহ্নিত করেছে দেশটি। এসব বাধা দূর করতে ৪টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তে মূলত মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ’র সনদ বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে মেডিকেল ডিভাইস রেগুলেটরি আন্তর্জাতিক ফোরাম-আইএমডিআরএফ এর সদস্য হতে বলা হয়েছে।

ফার্মাসিউটিক্যালসঃ

বাংলাদেশের ওষুধ খাতেও বড় নজর দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ওষুধের বাজার বিস্তৃত করতে এফডিএ’র সনদ বিনাপ্রশ্নে মেনে নেওয়ার শর্ত দিয়েছে ইউএসটিআর। মার্কিন টেরিটরির ভেতরে উৎপাদিত কিংবা এফডিএ অনুমোদিত যে কোনো উৎপাদন কেন্দ্রে তদারকি করতে পারবে না বাংলাদেশ।    

মোটর গাড়ি ও যন্ত্রাংশঃ

 মার্কিন গাড়ির প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে সব ধরনের বৈষমমূলক ব্যবস্থা তুলে নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রবেশাধিকার দিতে হবে মার্কিন মোটর ভেহিকেল নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এফএমভিএসএস এর আওতায় উৎপাদিত যে কোনো অটোমেটিভ পণ্য। অর্থাৎ মার্কিন গাড়ি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে বাড়তি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শর্ত আরোপ করা যাবে না। 

পুনঃউৎপাদিত পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃউৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশের বাজারে ছাড়তে বাড়তি কোনো লাইসেন্সিং বা পরীক্ষার শর্ত দেওয়া যাবে না।   

কৃষিঃ 

কৃষিখাতের অশুল্ক বাধা দূর করতে কড়া অবস্থানে মার্কিং যুক্তরাষ্ট্র। কৃষির বিভিন্ন উপখাতে বেশকিছু শর্ত বাস্তুবায়ন করতে বলেছে দেশটি। এসব উপখাতে মার্কিন বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সনদ মেনে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের শর্তের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি উন্নয়নের কথাও বলা হয়েছে। যেমন ডেইরি খাতে নিরাপত্তায় কমপক্ষে মার্কিন স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলার শর্ত দেওয়া হয়েছে। মার্কিন সংস্থাগুলোর দেওয়া হালাল সনদও মেনে নিতে শর্ত দেওয়া হয়েছে।

আমদানি সনদ সংক্রান্তঃ 

আমদানি সনদ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে যেসব শর্ত পূরণ করতে হয় তা দ্রুত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানাতে হবে। মার্কিন খাবার ও কৃষিপণ্য আমদানিতে অনুমতি পত্র চাইতে পারবে না বাংলাদেশ। 

মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত শর্তঃ 

মেধাস্বত্ব মার্কিন শুল্ক আলোচনার উল্লেখযোগ্য দিক। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি মেধাস্বত্ব আইন বাস্তবায়নে চাপ দিয়ে আসছে। দেশটির অভিযোগ আইপিআর না মেনে বাংলাদেশ নানা ধরনের নকল পণ্য উৎপাদন করছে। মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত ১৩টি আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেশনে যুক্ত হতে বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে দেশটি। এগুলোর মধ্যে আছে ব্রাসেলস কনভেনশন, মাদ্রিদ প্রটোকল, সিঙ্গাপুর চুক্তি, প্যাটেন্ট আইন চুক্তি, মারাকেশ চুক্তি, হেগ এগ্রিমেন্ট, বুদাপেস্ট এগ্রিমেন্ট ইত্যাদি।   

সেবাখাত ও বিনিয়োগ সংক্রান্তঃ 

সেবাখাতের কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক রিইন্সুরেন্সের বিধান বাতিল করতে বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সার্ভিস ডামেস্টিক রেগুলেশনে যুক্ত হতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশকে।   

অনতি বিলম্বে মার্কিন ফার্মগুলোর সকল পাওনা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি মুনাফা প্রত্যাবাসনে কোনো বাধা রাখা যাবে না। তেল, গ্যাস, ইনস্যুরেন্স ও টেলিকম খাতে মার্কিন কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়াতে মালিকানা সংক্রান্ত বাধা দূর করতে হবে। মার্কিন ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো নো অবজেকশন সার্টিফিকেট-এনওসি দিতে হবে। 

শ্রম সংক্রান্ত শর্তঃ 

বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিতে আইন সংশোধনসহ বেশকিছু বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসটিআরের দেওয়া চিঠিতে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, কারখানায় শ্রমিক সংগঠন করতে সম্মতিদাতা শ্রমিকের সংখ্যা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। ইপিজেডের শ্রমিকদের সংগঠন করার পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায্য দাবি আদায়ে জড়িত গার্মেন্টস শ্রমিক ও নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। 

পরিবেশ সংক্রান্ত শর্তঃ 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট বলেছে, আইন যেন পরিবেশের সুরক্ষা করে এটা বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে। কার্যকরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে বলেছে দেশটি। নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা বন্ধে সহযোগিতা বাড়াতেও শর্ত দিয়েছে ইউএসটিআর। বণ্যপ্রাণি পাচার রোধ, সমুদ্রে অনিয়ন্ত্রিত মাছ ও প্রাণি শিকার রোধেও নানা শর্ত দেওয়া হয়েছে।

আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক নতুন পলাশীর প্রান্তরে

যেভাবে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বিপুল সৈন্যবাহিনী থাকা সত্ত্বেও ভিতরের বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরদের কারণে পরাজিত হয়েছিলেন, ঠিক আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট যেন সেই ইতিহাসের ভয়াবহ পুনরাবৃত্তি!

সেই পলাশীর যুদ্ধে যেমন ইংরেজরা "ব্যবসার আজ" এসে শাসনের খুঁটি গেড়ে দিয়েছিল, ঠিক তেমনই  আমেরিকা তার বন্ধুত্বের মুখোশে নতুন এক আধিপত্যের শিকল পরাতে চায় বাংলাদেশকে। গোপালগঞ্জের নীরবতা যখন বজ্র নীরবতায় পরিণত হয়, তখনই ইতিহাস বলে—Chat ভয়াবহ চুক্তি জনগণের অগোচরে সম্পন্ন হয়েছে। কী সেই চুক্তির শর্ত? কেন তা গোপন? জনগণের হাতে কেন নেই সেই তথ্যে প্রবেশাধিকার?

আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক নতুন পলাশীর প্রান্তরে। দেশের অভ্যন্তরে জন্ম নিয়েছে একাধিক মিরজাফর। যারা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে, নিজেদের বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। ঢাকায় যেভাবে একটি কথিত আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের নামে বাংলাদেশকে পগরিণত করা হলো একটি গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাঠে, সেটি নিছক চুক্তি নয়—এটি একটি জাতীয় আত্মসমর্পণ।

আমরা কি জানি না, আফ্রিকার বহু দেশ—দক্ষিণ সুদান, বুরুন্ডি, সোমালিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া—সবাই মার্কিন আগ্রাসনের "সহযোগী চুক্তির" মাধ্যমে কীভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে? সেখানে মার্কিন বাহিনী, কনসালট্যান্ট, থিংক ট্যাংক, এনজিও আর সামরিক অফিসাররা কিভাবে গোঁজামিল দিয়ে দেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্র এবং নিরাপত্তাকে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে? আর সেই একই মডেল আজ আমাদের দেশেও বসাতে চায় এই ইউনুসীয় চক্র, তথাকথিত কিংস পার্টি এবং বিদেশী দালালদের সমন্বয়ে গঠিত এই ছায়া-রাষ্ট্র।

আঞ্চলিক অফিস খুলে দেওয়া মানে হচ্ছে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব খণ্ডিত করা। মানে হচ্ছে, আগামীতে দেশের প্রতিটি প্রান্তরে বাইরের শক্তির নজরদারি প্রতিষ্ঠিত হওয়া। মানে হচ্ছে, আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা, সামরিক বাহিনী, প্রশাসন—সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে একটি বিদেশি ব্যবস্থার ছায়া কার্যকর হওয়া।

এমনকি পাশের দেশ মিয়ানমার, যেখানে সামরিক জান্তা সরকার আছে, সেখানেও এই আঞ্চলিক অফিস করতে দেয়নি তারা। তারা বুঝেছে—একবার ঢুকতে দিলে, আর বের করা যাবে না। অথচ বাংলাদেশ, যাদের ইতিহাসে স্বাধীনতার জন্য রক্ত ঝরেছে, সেই দেশের শাসকরা আজ এই দেশকে ফের একবার উপনিবেশ বানাতে মুখিয়ে!

এই চুক্তির পরিণতি হবে ভয়াবহ। এর অর্থনীতি, কূটনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তিতে যে বিপর্যয় ডেকে আনবে, তা এখনো অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—এই ধরনের চুক্তির পর কখনো কোনো দেশ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

এখনই সময়, আমরা প্রতিবাদ করি। জাতিকে জাগিয়ে তুলি। শহর থেকে গ্রামে, ক্যাম্পাস থেকে কারখানায়, প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে বলতে হবে—বাংলাদেশ কোনো ল্যাবরেটরি নয়। এই দেশ কোনো বিদেশি প্রজেক্টের পরীক্ষার মাঠ নয়।

পলাশীর মিরজাফরদের যেমন ইতিহাস ক্ষমা করেনি, আজকের বিশ্বাসঘাতকরাও রেহাই পাবে না। আজ আমাদের কণ্ঠে থাকতে হবে বজ্রের মতো আওয়াজ—না, আর নয়!

বাংলাদেশ কারো করুণার দেশ নয়। বাংলাদেশ যুদ্ধ করে অর্জিত, রক্তে গড়া স্বাধীন ভূখণ্ড। একে আধিপত্যবাদী চক্রান্তের সামনে মাথানত করতে দেওয়া হবে না।

আজকের এই প্রতিবাদ হোক আগামী প্রজন্মের জন্য রক্ষাকবচ।

জয় বাংলা, 
জয় স্বাধীনতা।
সোর্স: এফবি

১৮জুলাই
আজ একটা গল্প বলি,

৯ অক্টোবর ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করি আমরা দুই জমজ ভাই। জন্মের পর থেকেই আমরা নাকি গোলগাল প্রকৃতির ছিলাম। একইরকম দেখতে হওয়ায় অনেক সুবিধাও নিয়েছি—একজন আরেকজনের হয়ে। যখনই মাটিতে কিছু পড়ে থাকতে দেখতাম, সাথে সাথে দু’জন দৌড় দিতাম—কে আগে সেটা বারান্দা দিয়ে বাইরে ফেলে দেবে! বারান্দা বন্ধ থাকলে বাথরুমে কমোডে ফেলে দিতাম আর খিলখিল করে হাসতাম। স্বর্ণের চেইন থেকে শুরু করে পায়ের জুতো—কোনো কিছুই আমাদের জন্য মাটিতে রাখা যেত না।

জীবনে এরকম কত যে পরীক্ষা একে অপরের হয়ে দিয়েছি! কোনো শিক্ষক আজ পর্যন্ত ধরতেই পারেনি। এভাবেই আমাদের বড় হয়ে ওঠা—একসাথে। বুঝ হওয়ার পর থেকেই দু’জনের মধ্যে সবসময় প্রতিযোগিতা লেগেই থাকত। যদিও পড়ালেখায় ওর থেকে কখনো এগিয়ে থাকতে পারিনি, তবে ফ্রিল্যান্সিং থেকে শুরু করে অন্য সবকিছুতে আমাদের টক্কর হতো সমানে সমানে।

আর একটা জিনিস ছিল—ওর সাহস। সেই সাহসের উদাহরণ দিতে গেলে গল্প শেষ হবে না। ছোট থেকে বড় হওয়ার এই যাত্রায় আমরা প্রায় সারা বাংলাদেশ একসাথে ঘুরে বেরিয়েছি—কি করি নাই একসাথে!

১৭ জুলাই ২০২৪—মুগ্ধর মৃত্যুর একদিন আগেও আমরা প্রায় রাত ১টা পর্যন্ত একসাথে কাজ করে ঘুমাতে গিয়েছিলাম। সেই রাতেও প্রতিদিনের মতো মশারি টানানো নিয়ে আমাদের ঝগড়া হয়—এটা ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মুগ্ধ নিজেই ডেকে আমাকে উঠিয়ে দিল। এমন আগে কখনো হয়নি—ও ঘুমের মধ্যে থেকে আমাকে ডেকেছে! আমাকে ঘুম থেকে তুলে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো—বিশেষ করে আম্মুকে নিয়ে। বলছিলো, ‘‘আম্মু সারাজীবন আমাদের জন্য কষ্ট করেছে, কিভাবে আম্মুকে নিজের টাকায় একটা ফ্ল্যাটে উঠাবে…’’ ওর খুব শখ ছিলো—নিজের টাকায় একদিন আম্মুকে নতুন ফ্ল্যাটে তুলবে।

একপর্যায়ে কথা বলতে বলতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ভিডিও বের করে দেখাচ্ছিলো—বলছিলো, ‘‘এখন খুলনায় থাকা উচিত ছিলো, জুনিয়রদের হেল্প করতে পারতাম।’’ কথা বলতে বলতে প্রায় ৩টা বেজে গেলো, তবু ওর কথা শেষ হয় না। আমার তখন একদিন আগের এক্সিডেন্টে হাতের নখ উঠে গিয়েছিলো, ৫টা সেলাই—ভীষণ ব্যথা করছিলো। তাই একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘‘কি শুরু করলি? ঘুমাতে দে।’’

এটাই ছিলো মুগ্ধর সাথে কাটানো আমার শেষ রাত।
সবচেয়ে বেশি ঝগড়া হতো জামাকাপড় নিয়ে। পরের দিন আন্দোলনে যাওয়ার সময় ও আমারই একটা জামা পরে বের হয়, আর যখন জানতে পারি ওর গায়ে গুলি লেগেছে—তখন আমিও ওর একটা শার্ট গায়ে দিয়ে বের হই। যখন মুগ্ধকে হাসপাতালে প্রথম দেখি—মনে হচ্ছিলো কি আরাম করে ঘুমাচ্ছে, এক শান্তির ঘুম! বোঝার কোনো উপায় ছিলো না যে ও আর নেই। মায়ের পেট থেকে যে একসাথে বেরিয়েছি—সে কিভাবে এভাবে একা চলে যায়?

সারা রাত ওর লাশের গাড়ির পাশে বসে ছিলাম—ঠিক প্রতিরাতের মতোই। পার্থক্য একটাই—গত রাতে ওর ভেতরে প্রাণ ছিলো, আজ আর নেই।
যতবারই সেদিন ওকে দেখেছি—মনে হচ্ছিলো ওর শরীর থেকে আলো বের হচ্ছে। জীবনে ওকে এতটা সুন্দর আর কখনো লাগেনি। এক পর্যায়ে মনে পড়লো—আম্মু-আব্বু তো তখনো জানে না মুগ্ধ আর নেই! তারা তখনো চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিলো। ভাবছিলাম, মা যখন মুগ্ধকে এই অবস্থায় দেখবে, তখন কী হবে?

অবশেষে সকালে তারা এলো। মুগ্ধর পাশে গিয়েই জানলো—মুগ্ধ আর নেই। সেইদিন শক্ত শাবল ভাইকে দেখলাম কিভাবে নিরীহ শিশুর মতো লাশের গাড়ি ধরে বিনা শব্দে কাঁদছিলো। কাঁদবেই বা না কেন? চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় আব্বু-আম্মু কিছু বুঝতে না পারে, সেই অভিনয় করতে গিয়ে ওর চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো—সেইদিনই একবারে বের হলো সব।

আম্মু বলতো—‘‘তোমাদের দু’জনকে একসাথে মানুষ করতে করতে আমার জীবনটা পানি হয়ে গেছে।’’ যাদের জমজ সন্তান আছে তারা জানে—দু’জনকে একসাথে বড় করা কতটা কঠিন। সেই আম্মুকে দেখলাম—কিভাবে নির্বাক হয়ে মুগ্ধর কপালে শেষ চুমু খেলো। চুমুর দৃশ্যটা দেখে মনে হচ্ছিলো—এক মা কপালে চুমু দেয়, আর আরেক মা, যাকে আমরা ‘‘দেশ’’ বলি—সে কপালে গুলি চালায়।

আজ এতটুকুই থাক।
তারপর কীভাবে মুগ্ধকে কবর দেয়া হলো? কীভাবে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত আমাদের ব্ল্যাঙ্ক চেক আর হুমকি-ধামকির মাধ্যমে কিনে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে—সেসব গল্প আরেকদিন বলবো।

যারা বাঁচে, তাদের দায় বেশি। কথা আছে—‘‘সত্য মরে না।’’ মুগ্ধর গল্পও শেষ হবে না—কারণ ওর স্বপ্নগুলো এখন আমাদের শ্বাসে বাঁচে।

জোট, ভোট ও নোটের রাজনীতি – ৬ষ্ঠ পর্ব

গোপালগঞ্জ ট্র্যাজেডি ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক শঙ্কা
___ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী

গোপালগঞ্জ ট্র্যাজেডি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত। শুরুতেই জুলাই আন্দোলনের বীর সৈনিকদের উপর গোপালগঞ্জে যে বর্বরোচিত আচরণ করা হয়েছে, সেটার নিন্দা জ্ঞাপন করছি। গোপালগঞ্জে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য কোন পক্ষ দায়ী, ইতিমধ্যেই সে দোষারোপের অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়ে গেছে। সন্দেহাতীতভাবেই এ কথা বলা যায়, পরাজিত, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর ও অনুসারীরাই দায়ী – এতে তো কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আত্মসমালোচনা করতে গেলে, বিভিন্ন পক্ষের কতক ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত, কতক ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত ভুল চলে আসে।

আমার দৃষ্টিতে জুলাইয়ের ০১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এনসিপি সারা দেশে পদযাত্রার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক ভিত্তিকে যেভাবে মজবুত করে ফেলেছিল এবং সারাদেশে নতুন ধারার রাজনীতির যে চর্চা তৈরির সুযোগ তারা সৃষ্টি করেছিল, তার অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে গোপালগঞ্জ পথযাত্রার মাধ্যমে।

আমার দৃষ্টিতে গোপালগঞ্জে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে তা আগ থেকেই তাদের বোঝা উচিত ছিল। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা রিপোর্ট তাদের কতটুকু সাহায্য করেছে, সেটাও একটা প্রশ্ন বটে। নিঃসন্দেহে গোপালগঞ্জ বাংলাদেশেরই একটি জেলা। শুধু এনসিপি নয়; যেকোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ সেখানে হতে পারে; এটা কথিত গণতান্ত্রিক অধিকার বলে। কিন্তু কখনো কখনো বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার দৃষ্টিকোণ থেকে চরম সাহসিকতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কাজকে avoid করতে হয়। আমার মনে হয়, সে দৃষ্টিকোণ থেকে এনসিপি গোপালগঞ্জের প্রোগ্রাম avoid করলেই ভালো হতো। আপাতত বলবো, রাজনীতি হচ্ছে যুদ্ধের মতো। যুদ্ধে যেভাবে জয় এবং পরাজয় উভয়টিকে মেনে নিতে হয়, রাজনীতিতেও সফলতা এবং ব্যর্থতা দুটোকেই মেনে নিতে হয়। জুলাই যোদ্ধা ও সৈনিকদেরকে আমার পক্ষ থেকে পরামর্শ থাকবে – গোপালগঞ্জের এই বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য তারা যেন তাদের ইস্পাতকঠিন দৃঢ় চেতনাকে খর্ব না করে; বরং আরও সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সাথে যেন এগিয়ে যায়। এটাই তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে।

বিগত বর্তমান সরকার দায়িত্বে আসার পর থেকে সফলতার চেয়ে তাদের ব্যর্থতার দিকগুলোই বেশি ফুটে উঠেছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো খুব একটা সফলতার পরিচয় দিতে পারেনি। জুলাই সনদ প্রকাশে কিংবা মৌলিক অনেক সংস্কার ইস্যুতে অনেকগুলো বিষয়েও তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি; বরং আমরা দেখতে পারছি, রাজনীতির অঙ্গনে ইতিমধ্যেই টক্সিন ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক নেতাগণ একে অপরকে ঘায়েল করার ক্ষেত্রে এমন সব সংলাপ, বিবৃতি ও ভাষণ দিচ্ছেন – যা রীতিমতো বিষ উদগীরণ করার মতোই। যদি এই অবস্থা চলমান থাকে, তো অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার এবং যে বিপর্যয় নেমে আসবে তার খেসারত সকল স্টেকহোল্ডার, সকল পক্ষ; এমনকি অরাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকেও দিতে হবে।

মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো, কয়েকটি বিষয়ে ইতিমধ্যেই তাদের ঐকমত্যে পৌঁছা উচিত। তা হচ্ছে –

১/ ভারতীয় আধিপত্য ও প/শ্চি/মা আধিপত্যবাদমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
২/ পাশাপাশি যে কোন আ/গ্রা/সন থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখার জন্য “মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স” গড়ে তোলা।
৩/ তৃতীয়ত: বাংলাদেশকে একটি টেকসই অর্থনীতির ওপর গড়ে তোলা।

রাজনৈতিক অনৈক্য ও বিভেদের মাধ্যমে এগুলো কখনোই বাংলাদেশের সম্ভব নয়; বরং বিগত অর্ধ শতাব্দী যেভাবে বাংলাদেশে হানাহানি, সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং পাওয়ার পলিটিক্সের ধারা চলে এসেছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ সে ধরনের একটি পুরনো কুসংস্কারপূর্ণ রাজনৈতিক ধারাতেই ফিরে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে বিভেদ এবং মতানৈক্য তা অনভিপ্রেত। বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল চাচ্ছে বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে একেবারেই নির্বাসিত করে দেওয়া। পাশাপাশি বিএনপির মধ্যেও (অনেকের মধ্যে) এক রকম দাম্ভিকতা চলে এসেছে যে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তারাই ক্ষমতায় যাবে। আমি মনে করি, এসব দিকই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নেতিবাচক দিক। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশই তৈরি হবে না। অতএব, কখনোই বিএনপির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে যা সম্ভব হবে না। অপরদিকে সব রাজনৈতিক দল মিলে যদি বিএনপিকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করে, তাহলে যে পলিটিক্যাল ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি হবে, সেজন্য বাংলাদেশ এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে ধাবিত হবে। তাতেও বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করা এবং একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলা অনিশ্চিত হবে।

দুঃখজনক সত্য যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব যারা দিচ্ছেন, তাদের মধ্যেও রয়েছে যথেষ্ট ইনসাফের অভাব। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের বুদ্ধিজীবীরাই ব্র্যাকেট বন্দী হয়ে আছেন। তারা এমন কোন পরামর্শ নিজ দক্ষতা অনুযায়ী নিজ দলকে দেন না – যেটি দলীয় স্বার্থের বিপক্ষে যায়। যতদিন পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মানুষগুলো বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের টাকা-পয়সা কামাই করে পকেট ভারি করাই সম্ভব হবে। টকশোগুলোতে টকারু হিসেবে পাণ্ডিত্য ঝাড়ার সুযোগ হবে; কিন্তু দেশ ও জাতির জন্য তারা কিছুই করতে পারবে না।

এনসিপির উচিত শক্ত ভিত্তির উপর তাদের রাজনৈতিক ভিতকে গড়ে তোলা। তার জন্য আমি বলবো, জাতীয় নাগরিক পার্টি; তাদের দলে প্রবীণ কিছু রাজনীতিবিদদেরও স্থান করে দেওয়া উচিত। তার কারণ হলো রাজনীতির দুটো দিক। যথা –
Theoretical politics
Applied politics

Theoretical politics-এ যথেষ্ট মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেন – এরকম অনেক লোক এনসিপিতে আছেন; যারা দর্শন, আইন বিভাগ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আছেন। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য Theoretical politics করার চেয়েও দরকার Applied politics। ব্যবহারিক রাজনৈতিক জ্ঞান ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সে কথার সাক্ষ্য দেয়।

৭৫ ট্র্যাজেডিতে বাকশালের পতনের পর আধিপত্যবাদ বিরোধী, সমৃদ্ধ, আত্মনির্ভর একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। তিনিও যখন বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া প্রবীণ কিছু রাজনীতিবিদকেও তিনি তার দলে জায়গা করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের হত্যার পরে আমরা দেখেছি যে, জেনারেল এরশাদ যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসলেন, তিনিও জাতীয় পার্টিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি – উভয় দল থেকেই পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতাদেরকে জায়গা করে দিয়েছিলেন।

তার কারণ হচ্ছে – তৃণমূল পর্যায় থেকে যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করে বড় হয়েছেন, রাজনৈতিকভাবে পোড় খাওয়া – বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেকোনো রাজনৈতিক দলকে শক্ত ও মজবুত রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রবীণ পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদদের প্রয়োজন আছে। আমার মনে হয়, এদিকটিতে এনসিপি অনেকটাই পিছিয়ে আছে। “জুলাই বিপ্লবের” সৈনিকগণ দুঃসাহসী জাতীয় বীর – তাতে কোন সন্দেহ নাই; কিন্তু তাদের ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে, বিবেককে পরিহার করে শুধুমাত্র আবেগপ্রবণ হয়ে রাজনীতি করতে গেলে, তাদেরকে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হতে পারে।

সেজন্য আমার পক্ষ থেকে এনসিপিকে কয়েকটি পরামর্শ:

প্রথমত: প্রত্যেক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিছু স্তম্ভের উপর। অর্থাৎ সেই রাজনৈতিক দলের মৌলিক আদর্শ কী? এনসিপিকে তার মৌলিক আদর্শগুলো কী – তা নির্ধারণ করতে হবে। তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে পরামর্শ থাকবে – যেহেতু বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র, সেহেতু এ দেশের ইসলাম ও মুসলমানকে বাদ দিয়ে দেশের স্বাধীনতাকেও কল্পনা করা যায় না। অতএব, এনসিপির মৌলিক আদর্শের মধ্যে প্রথমেই যে বিষয়টিতে স্থান বিবেচনায় আনা উচিত – তারা যেন ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী হন।

দ্বিতীয়ত: রাজনৈতিকভাবে তাদের স্পষ্ট করতে হবে জাতির কাছে যে, ভারতীয় আধিপত্যবাদের পাশাপাশি প/শ্চি/মা আ/গ্রা/সন থেকেও বাংলাদেশকে তারা মুক্ত রাখবে।

তৃতীয়ত: যে বিষয়টিতে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে সেটি হচ্ছে – দেশবিরোধী যেকোনো চক্রান্তের বিরুদ্ধে তাদের ইস্পাতকঠিন অবস্থানে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়াতে হবে। আমরা দেখতে পেয়েছি ইতিমধ্যে দেশবিরোধী কিছু ইস্যু মাথাচাড়া দিয়েছিল, তার মধ্যে –
১. করিডর ইস্যু
২. বন্দর ইস্যু

বর্তমানে চলমান যে বিষয়টি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, সেটা হচ্ছে – ঢাকায় “জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন” স্থাপন। এ বিষয়গুলোতে এনসিপি একেবারেই নিশ্চুপ – যা এ দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে অনাস্থার সৃষ্টি করে।

আমাদের জেনে রাখা উচিত এবং গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত – যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আস্থা না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কখনোই সে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হেদায়েত করুন, সফলতা দান করুন।
 

নিজের উচ্চতা দিয়ে সবাইকে নীরব করে দেন
কথায় আছে, ঈগলের পিঠে চেপে বসতে পারে একমাত্র পাখি হলো কাক। এই কাক কখনো কখনো ঘাড়ে ঠোকর মেরে, তাকে বিরক্ত করার দুঃসাহস দেখায়। কিন্তু ঈগল কি করে? সে কি তার এই বিরক্তিকর সঙ্গীর সাথে লড়াইয়ে নামে? না, ঈগল শুধু করে একটি কাজ – সে আরও উঁচুতে উড়ে যায়। যেখানে কাক টিকতে পারে না, শ্বাস নিতে পারে না। শেষমেশ কাক নিজেই হাল ছেড়ে পিঠ থেকে পড়ে যায়।

এই বাস্তবতা আমাদের জীবনের জন্যও এক অনন্য অনুপ্রেরণা। আমাদের চারপাশে অনেক কাক-স্বরূপ মানুষ রয়েছে – সমালোচক, হীনমন্য, ঈর্ষান্বিত, যারা আপনার সাফল্যকে হজম করতে পারে না। তারা কখনো আপনাকে ছোট করার চেষ্টা করবে, কখনো আপনার বিশ্বাসে আঘাত করবে। বন্ধুর ছদ্মবেশে, সহকর্মীর মুখোশে, এমনকি কাছের আত্মীয়রাও হতে পারে এই কাক-চরিত্রের ধারক।

কিন্তু আপনি যদি তাদের পাল্টা উত্তর দিতে যান, তাদের অপমানের জবাবে উত্তরে সময় ব্যয় করেন, তবে আপনি ধীরে ধীরে আপনার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেন। আপনি যদি ঈগলের মতো হন, তাহলে আপনাকে জানতে হবে – আসল লড়াইটা নিজেকে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, নিচে থাকা কাকের সাথে নয়।

আপনার সাফল্যই হবে সেরা প্রতিশোধ। যত সমালোচনা আসুক না কেন, আপনি যদি প্রতিনিয়ত নিজের কাজের মাধ্যমে উন্নতি করেন, আপনি যদি ধৈর্য ধরে নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখেন, তবে একসময় সেই সমালোচকরাই হার মানবে। কারণ আপনার উচ্চতা, আপনার মানসিক দৃঢ়তা, আপনার লক্ষ্য – এই সবই এমন জায়গায় নিয়ে যাবে যেখানে কাকেরা টিকতে পারবে না।

উচ্চতা মানে শুধুমাত্র সামাজিক মর্যাদা নয়, বরং এটি আপনার চরিত্র, আপনার ধৈর্য, আপনার সহনশীলতা, আর আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতীক। জীবনের এই পথচলায় যখনই কোনো কাক দেখবেন, নিজেকে মনে করিয়ে দিন – ঈগল কিন্তু কখনো কাকের সাথে লড়াই করে না। সে শুধু আকাশে আরও ওপরে উঠে যায়।

তাই আপনি যখন নিজের পথে হাঁটছেন, যখন চারপাশের মানুষ আপনাকে নিয়ে অকারণে বিচার করছে, তখন মনে রাখবেন – তারা আপনাকে নিচে রাখতে চায়, কারণ তারা জানে আপনি অনেক ওপরে যেতে পারবেন। আর আপনি যদি ঈগলের মতো হন, তাহলে তাদেরকে আপনার সাথে নিয়ে উঁচুতে উড়ুন, যেখানে তাদের টিকে থাকা অসম্ভব।

তাই সমালোচকের সাথে নয়, নিজের উন্নতির দিকেই মনোযোগ দিন। কারণ সত্যিকার বিজয় তখনই আসে, যখন আপনি প্রমাণ না দিয়ে নিজের উচ্চতা দিয়ে সবাইকে নীরব করে দেন।

সোর্স: এফবি

মন বাড়িয়ে ছুঁই 
পর্বসংখ্যা ০৫

সন্ধ্যা থেকেই বাড়ির অবস্থা থমথমে।ডাক্তারের ঔষুধে জ্বর কমেনা মেহনূরের। জ্বরতপ্ত অবস্থার জন্য লাল হয়ে গেছে শরীর। চেহারার অবস্থাও বেশ বির্বণ। একদিনের মধ্যে শরীরের সব সুস্থতা যেনো হারিয়ে গেছে ওর। সকাল থেকেই পেটে কিছু পরেনি মেহনূরের। মা ও বড়মা খাবারের জন্য  প্রচুর জোড়াজুড়ি করেছে, কিন্তু জ্বরাক্রান্ত মেহনূর কিচ্ছু মুখে তুলেনি। হান্নান শেখ আদরের নাতনীকে এ অবস্থায় দেখতে পারছিলেন না, বুকটা হাহাকার করে ছটফট করছিলো উনার। ডাক্তারকে এ পযর্ন্ত চারবার ডেকে ফেলেছেন তিনি, কিন্তু প্রতিবারই মোস্তফা ডাক্তার বিরক্ত গলায় বলেছেন সকাল পযর্ন্ত অপেক্ষা করতে, যদি অবস্থা আরো খারাপ হয় তাহলে দ্রুত শহরে ট্রান্সফার করতে হবে। এদিকে মারজাও জোর করে বৃদ্ধ হান্নানকে কিছু খাওয়াতে পারলেন না, নিরুপায় হয়ে বসে আছেন বাবামশাইয়ের সাথে। শানাজ, সাবা ও সুরাইয়া মেহনূরের পাশে বসে আছে। শানাজ ওর মাথার কাছে বসে একের-পর-এক তপ্ত কাপড় পানিতে চুবিয়ে কপালে পট্টি করছে। এদিকে সুরাইয়ার হাতে এখন শানাজের ফোন, সুরাইয়া একমনে সেটা নিয়ে বাংলা নাটক দেখছে। সাবা বিরস মুখে বসে থাকতেই হঠাৎ শানাজের পানে তাকিয়ে বলে, 

  - বুবু, ওকে কবিরাজ বাড়ি নিয়ে গেলে হয়না? ডাক্তারের টোটকায় তো জ্বরই কমছেনা। এমন করে চলতে থাকলে ও যে কঙ্কাল হয়ে যাবে জানোতো?

শানাজ কথাটা শুনেই চিন্তায় ডুব দিলো। জ্বরাক্রান্ত মেহনূরের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো। ভাবতেই চট করে সাবার দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বললো, 

  - কবিরাজ বাড়িতে সবাই গেলেও মেহনূর যাবেনা। তুই কি জানিস না, ওর যে বাইরে হওয়া নিষেধ? মেজো মা শুনলে কি অবস্থা করবে এখনই ভুলে গেলি? মেজো মা যদি একবার শুনে মেহনূরকে বাইরে পাঠানোর ফন্দি করা হচ্ছে, তাহলে তোর পিঠের ছাল তুলে দিবে সাবা। 

শানাজের ক্যাটক্যাট কথায় চুপ হয়ে গেলো সাবা। ফোন থেকে মুখ তুলে সরু চোখে তাকালো সুরাইয়া। সুরাইয়ার ওমন দৃষ্টি দেখে শানাজ চুপচাপ নিজের কাজে মগ্ন হলো, কিন্তু সুরাইয়া চুপ রইলো না। নিজের মায়ের নামে ওমন কথা কস্মিনকালেও সহ্য করতে পারেনা সুরাইয়া। তাই ফোনটা বিছানায় রেখে সজাগ দৃষ্টিতে শানাজের দিকে তাকালো, গমগমে গলায় বললো, 

  - শানুবুবু, আমার মা এমন কি করেছে যার কারনে মেহনূরের ব্যাপার নিয়ে উনাকে কটাক্ষ করছো? 

শানাজ ভিজা তোয়ালে চিপড়ে মেহনূরের তপ্ত গালটা মুছতেই বললো, 

  - তোর মা যে ভালো জাতের মানুষ তাই বলতে বাধ্য হই। আর শোন, এখানে বসে তর্ক করবিনা। ও অসুস্থ। এই মূহুর্তে একটা শব্দও উচ্চারণ করবিনা। যা বলার বাইরে যেয়ে বলবি, আপাতত চুপ থাক। 

শানাজের শক্ত আচরণ সুরাইয়ার ছোট থেকেই অপছন্দ। শানাজ সবার সাথে হাসিখুশি আচরণ করলেও সুরাইয়ার সাথে রণমূর্তি ধারণ করে ক্যাটক্যাট উত্তর দেয়। সুরাইয়া আর বসলো না মেহনূরের পাশে, একপ্রকার ক্ষোভ দেখিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। যাওয়ার সময় সাবাকেও টেনেটুনে সঙ্গে নিলে গেলো। শানাজ সব ঘটনা এমনভাবে অগ্রাহ্য করলো যেনো এখানে কিছু হয়নি। ওর মতো অসভ্য বোনকে শানাজ এমনেও হজম করতে পারেনা। প্রায় দুইঘন্টা মেহনূরের সেবায় শ্রম দিলো শানাজ, কিন্তু ফলপ্রসু হিসেবে কিছুই হলো না ওর। মাথায় হাত দিলে এখনো আগুনের মতো গরম। গতকাল এমন কি হয়েছে সেটাই কোনোভাবে মিলাতে পারছেনা শানাজ। বিছানার হেডসাইডে পিঠ লাগিয়ে বসলে হঠাৎ মেহনূর ঘোরের মধ্যে প্রলাপ বকতে থাকে। সবগুলো কথাই জড়িয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে এলোমেলো প্রতিটা কথা। শানাজ কপাল কুঁচকে বিড়বিড় করা মেহনূরের কাছে কান রাখলো। অস্ফুট সুরে মেহনূর বলছে, 

  - বাড়ি থেকে বিদায় করো, তাড়িয়ে দাও, দাদাভাই চলে যেতে বলো। 

শানাজ আশ্চর্য হতে গিয়ে নিজেকে শান্ত করে। মনকে সান্ত্বনা দেয় হয়তো জ্বরের ঘোরের হাবিজাবি বকছে। কিন্তু মেহনূর যখন একই কথা অজস্র উচ্চারণ করছে, তখন বাধ্য হয়ে ওর দুই বাহু ধরে কৌতুহল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, 

  - মেহনূর, তুই কি শুনতে পাচ্ছিস? তুই এগুলো কি বলছিস? মেহনূর, তাকা না। জবাব দে। মেহনূর?

জ্বরের জন্য তিল পরিমাণ চোখ খুলার শক্তি পেলোনা মেহনূর। যতোবার খুলতে যায় ততোবারই নেত্রপল্লব বন্ধ হয়ে আসে ওর। শানাজ অনেকবার চেষ্টা করে শেষে হার মানলো। আরেকবার কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরটা একটু যেনো কমেছে। স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়তেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। শানাজ চকিত ভঙ্গিতে দরজার দিকে তাকালে নীতি ও প্রীতিকে দেখতে পেলো। দুজন অনুমতির জন্য অপেক্ষা না করে নিঃশব্দে রুমের ভেতর ঢুকলো। রুমে তখন সোলারের বাতি জ্বলছিলো, সিলিং ফ্যান বন্ধ। নীতি মৃদ্যু গলায় শানাজকে প্রশ্ন করলো, 

  - মেহনূরের অবস্থা কেমন? জ্বর কমেছে? 

শানাজ মলিন মুখে মেহনূরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে। শেষে নীতির দিকে মুখ ফিরিয়ে ক্লান্ত গলায় বলে, 

  - একটু কমেছে, বেশি কমেনি। ও যে কেনো এতো অসুস্থ হয়ে গেলো বুঝতে পারছিনা। বৃষ্টির পানিতে ভিজলেও ওর জ্বর আসেনা, সেখানে কোনো কারন ছাড়াই জ্বর আসলো। 

নীতি তৎক্ষণাৎ শানাজের মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। প্রীতির দিকে দৃষ্টি রেখে ঘন করে ঢোক গিললো। এখানে প্রীতির অবস্থাও ভীতু-ভীতু। নীতি ওকে ইশারায় শান্ত, স্বাভাবিক থাকতে বললো। প্রীতি সেটায় সায় বুঝিয়ে মাথা ' হ্যাঁ ' সূচকে দুলিয়ে ফেললো।নীতি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতেই হঠাৎ কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বললো, 

  - শানাজ, যদি কিছু মনে না করো একটা রিকুয়েস্ট করি? 

শানাজ প্রশ্ন শুনে কৌতুহলে বশীভুত হলো। হেডসাইড থেকে পিঠ সরিয়ে বিষ্ময়দৃষ্টিতে বললো, 

  - মনে করার তো কিছু নেই। কিন্তু কিসের রিকুয়েস্ট?

নীতি এবার ঠোঁট ভিজিয়ে শুষ্ক গলায় বললো, 
  - না মানে, আমার মেহনূরকে খুব ভালো লাগে। মিষ্টি একটা মেয়ে। ওর আজ এই অবস্থা দেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করছেনা। তাই ভাবলাম একটু যদি বসে থাকি? শানাজ আমরা তো চলেই যাবো, আর মাত্র তো কয়টা দিন। প্লিজ একটু থাকতে দিবে? 

শানাজ কিছুক্ষণ নিরব থেকে নীতিকে থাকার অনুমতি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। নীতি শানাজের জায়গায় বসে ঘুমন্ত মেহনূরের কপালে হাত বুলিয়ে দেয়। প্রীতি এসে বিছানায় বসলে মেহনূরের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে বলে, 

  - আপু, মেহু না অনেক সুন্দর। মেয়েটাকে দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে। আমি একটা মেয়ে হয়ে যদি ওর রূপের প্রশংসা করি, তাহলে একবার চিন্তা করো ভাইয়ার কি অবস্থা হচ্ছে? আমার মন বলছে ভাইয়া ওর সিচুয়েশন শুনে ডেসপারেট ফিল করছে। কিন্তু সেটা আমাদের সামনে প্রকাশ করছেনা। 

মেহনূরের মাথায় আলতো হাতে বুলিয়ে দিতেই বুকভর্তি নিশ্বাস ছাড়লো নীতি। মাহতিম যে নিজেই অস্থির হয়ে বসে আছে সেটা নীতি স্বচক্ষে দেখেছে। নীতি যে বাধ্য হয়ে ভাইয়ের ধমক খেয়ে মেহনূরকে দেখার জন্য এসেছে, সেটা আর খুলে বলেনি কাউকে। একপর্যায়ে ঘুমে হাই তুলতে লাগলো প্রীতি। আড়াই বছরের ছোট বোনকে রুমে যেয়ে ঘুমাতে বললো নীতি। নীতির কথায় আজ্ঞা মেনে প্রীতি ঘুমাতে চলে গেলে সে রুমের আরেকটি বিছানায় যেয়ে বসে। মেহনূরের রুমে দুইটা কাঠের বিছানা, একটা জানালার কাছে, আরেকটা রুমের মাঝখানে।  মেহনূর কাথামুড়ি দিয়ে জানালার কাছে শুয়ে আছে। নীতি ভেজানো জানালাটা খুলে দিয়ে সোলারের লাইট বন্ধ করে দিলো। দ্বিতীয় বিছানায় চুপচাপ ঘুমহীন চোখে শুয়ে পরলো। আজ কোনোভাবেই ঘুমানো যাবেনা, ঘুমালে মাহতিম ওকে আস্তো রাখবেনা। নীতির ইচ্ছে করছে চোখের মধ্যে মরিচ ডলে দিতে, কিন্তু সাহসে একদম কুলাচ্ছে না। 

চারপাশ যতো নিরব হচ্ছিলো প্রকৃতির ভূতুড়ে আওয়াজ ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। দূরে কোথাও 'ঘেউ ঘেউ' করে কুকুর ডাকছে, ঝিঁঝিপোকার শব্দতরঙ্গ অদ্ভুতভাবে শোনা যাচ্ছে, মৃদ্যু বাতাসের দমকায় গাছের ডালপালা পৈশাচিক ভঙ্গিতে ভয় দেখাচ্ছে। মাটিতে লুকিয়ে থাকা শত শত নাম না-জানা পোকাগুলো বিশ্রী-বিকট শব্দ করছে। বাইরে এখন ভরা জোৎস্নার রাত, দ্বিগ্বিদিক রূপার আলোয় প্রকৃতি যেনো ঝলমল করছে। বুকের ভেতর তোলপাড় করা যন্ত্রটা মারাত্মক যন্ত্রণা দিচ্ছে। কোনোভাবেই শুয়ে-বসে-দাড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছেনা মাহতিমের জন্য। একপলকের দৃষ্টির জন্য অসহ্য লাগছে সবকিছু। ডাক্তারের কথাগুলো শোনার পর ইচ্ছে হচ্ছিলো জিপ স্টার্ট দিয়ে শহরের মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে আসতে, কিন্তু ' লোকে কি ভাববে ' এটা চিন্তা করে আর আগায়নি সে। মাহতিম রুমের ভেতর পায়চারি বন্ধ করে খোলা জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো। ট্রাউজারের পকেট থেকে মোবাইল বের করে সময়টা একবার দেখলো। রাত দুইটা আটত্রিশ বাজে এখন। জানালার বাঁ দিকে বাঁহাত হেলান দিয়ে ডানহাতে ফোনটা পকেটে পুড়লো। ডার্ক ব্রাউন রঙের টিশার্টটা ক্রমেই গরমের জন্য অসহন ঠেকতে লাগলো। নিজেকে শান্ত করতেই নিশ্বাস ছাড়ার জন্য ঠোঁট চোখা করে চোখ বন্ধ করলো। আয়নার পানে তাকিয়ে থাকা ভয়ার্ত দুই চোখ, কাঁপুনিতে থরথর করে উঠা রক্তিম-লাল ঠোঁট, কুচি গুঁজার জন্য পেটের কাছ থেকে শাড়ি উঠানো, আঙ্গুলের কবল থেকে একে-একে কুচি ছেড়ে দেওয়ার মূহুর্ত, সবই মনের দৃশ্যপটে স্পষ্টরূপে দেখতে পাচ্ছিলো। যদি আর কয়েক সেকেন্ড ওখানে দাড়িয়ে থাকতো, তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বড্ড কষ্টসাধ্য হতো। ওই দৃশ্য দেখলে মাথা অটোমেটিক কাজ করা বন্ধ করে দিতো। মাহতিম জানালা থেকে হাত সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। ওমনেই নিজেকে শক্ত করে দরজার ছিটকিনি খুলে ফেললো। খুবই সাবধানে রুমের বাইরে পা ফেলে আশেপাশে তীক্ষ্মদৃষ্টি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে লাগলো। একধাপে তিন সিড়ি করে উঠতেই চুপচাপ মেহনূরের রুমের কাছে আসলো। আবারও ডানে ও বামে সর্তক দৃষ্টিতে তাকালো। বিপদমুক্ত অবস্থা বুঝতেই চট করে ভেতরে ঢুকে রুমের দরজা আটকে দিলো। কিন্তু লাইটহীন রুমে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। মাহতিম আন্দাজের উপর ভিত্তি করে হাত এগিয়ে লাইট জ্বালালো। ওমনেই যে দৃশ্য দেখলো, তাতে প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে ঠোঁট কুঁচকে দ্বিতীয় বিছানায় কাছে আসলো। নীতি পাহারা দেওয়া বাদ দিয়ে আরামসে ঘুমাচ্ছে, এই দৃশ্য দেখে ঠাস-ঠাস করে গাল বাজিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে। রাগের মাথায় শূন্যে হাতও উঠালো মাহতিম, কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে ডাকলো, 

  - নীতির বাচ্চা উঠ্! 

নীতি ঘুমের রেশে ডানপাশ থেকে বাঁপাশ ফিরে শুলো। মাহতিম ওর অবস্থা দেখে আরো দুধাপ চটে উঠলো। ক্রোধের বশে ঠিকই ঘুমন্ত নীতির গালে ঠাস ঠাস করে চড় মারলো মাহতিম। অনেকটা ভয় ও বিষ্ময় নিয়ে হুড়মুড় করে উঠলো নীতি। গালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে মাহতিম দাড়িয়ে আছে। ভয়ে-ভয়ে দুটো ঢোক গিলে গাল থেকে হাত নামিয়ে তোতলানো সুরে বলে, 

  - ভা-ভা-ই-য়া, এই মা-মাত্রই শু-য়েছি। 

মাহতিম ক্রুদ্ধসুরে বলে উঠে, 

  - তা তো দেখতেই পাচ্ছি। তোকে আমি ঘুমানোর জন্য পাঠিয়েছি? কি বলেছিশাম মনে নেই? 
নীতি আর উত্তরের জন্য মুখ খুললো না। চোখ নিচু করে বিষণ্ন মুখে বসে থাকলে মাহতিম গলা নামিয়ে স্বর নিচু করে ওকে বাইরে যেতে বলে। নীতি প্রথমে আশ্চর্য হয়ে যায় এ কথা শুনে, পরক্ষনে মাহতিমের রাগান্বিত অবস্থা ভেবে কিছু বলেনা সে। রুমের বাইরে গিয়ে দরজা চাপিয়ে পাহাড়া দিতে থাকে। মাহতিম বুঝতে পারলো এই প্রথম সে ইচ্ছাপূর্বক মেহনূরের রুমে এসেছে। যেখানে মেহনূর অচেতন হয়ে পরে আছে। পিছু ফিরে তাকালেই সে মেহনূরকে দেখতে পাবে। কিন্তু কেমন এক জড়তা যেনো মনের অলিন্দে ছুটাছুটি করছে। মন যেনো বলছে, একবার তাকালে নিস্তার নেই মাহতিম, মস্তিষ্ক যেনো বলছে, এখানে না এসে যাবে কই? মাহতিম দুই চেতনার টানাপোড়নে কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে রইলো। মুখ উঁচু করে সোলার লাইটটা দেখে কি যেনো চিন্তা করলো, সেই মূহুর্ত্তেই সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে লাইটটা নিভিয়ে দিলো। দরজার বাইরে পাহাড়া দিতে গিয়ে সুইচের শব্দে চমকে উঠলো নীতি। সাথেসাথে আশ্চর্য দৃষ্টিতে পেছনে ফিরে তাকালো। দরজার নিচ দিয়ে আলো আসছেনা কেনো? এতোক্ষন যে আলোটা ছিলো সেটা কোথায় গেলো?মাহতিম কি সত্যিই লাইট নিভিয়ে দিলো? কেনো নিভালো? নীতি অন্তত এটুকু জানে মাহতিম খারাপ চরিত্রের ব্যক্তি না। কিন্তু আজকের সমীকরণ সে কিছুতেই মিলাতেনা পারছেনা। একচুলও না। 

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই
#পর্বসংখ্যা_০৫

  -  চলবে 

মধ্যবয়স্ক নারীর যৌনতা – এক নীরব নদীর মতো

মধ্যবয়সী নারীকে বাইরে থেকে দেখে কেউ বুঝতে পারে না, তার ভেতর কতটা জীবন বয়ে চলে। তার মুখে হয়তো একরাশ শান্তি, চোখে একটুখানি ক্লান্তি—কিন্তু এই চেহারার ভেতরে আছে এক গভীর নদী, যেটা ধীরে ধীরে বয়ে যায়। এই নদী যেন নীরব, তবে থেমে নেই। প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা, ভালোবাসা, হারানো-বিলুপ্ত কিছু স্মৃতি—সব মিলে তার কামনা তৈরি হয় এক নতুন রূপে, এক অনন্য ভাষায়।

এই বয়সে সে আর কারো মন জেতার জন্য হাসে না। সে নিজেকে লুকিয়ে রাখে না, সাজিয়ে তোলে না কেবল কারো নজর কাড়ার জন্য। বরং সে নিজেকে ভালোবাসে গভীরভাবে। জানে—তার শরীর ঠিক যেমন, তেমনটাই সুন্দর। তার যৌনতা এখন আর দেহের খেলায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে বোঝাপড়ার, সম্মান আর সংবেদনের জায়গা।

তরুণ বয়সের কামনা হঠাৎ জ্বলে ওঠে, হঠাৎ নিভেও যায়। সেখানে থাকে আবেগের ঝড়, না বুঝে ফেলার এক উন্মাদনা। কিন্তু মধ্যবয়সী নারীর কামনা অনেক বেশি ধৈর্যের, অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসের। সে জানে, কীভাবে তার শরীরের প্রতিটি প্রতিক্রিয়া বোঝে নিতে হয়। সে জানে, কখন আগলে রাখতে হয় নিজেকে, আর কখন খুলে দিতে হয় সমস্ত দরজা।

এই নারী কাউকে ছুঁতে চায়—কিন্তু ছোঁয়াটার আগে সে বোঝে নেয় সেই মানুষটার ভেতরটা। সে শুধু শরীর খোঁজে না—সে এমন একজন সঙ্গী খোঁজে, যার স্পর্শে থাকে শ্রদ্ধা, যার চোখে থাকে নিরাপত্তা। সে জানে কার পাশে ঘুমালে শান্তি নামে, আর কার পাশে থাকলে ভালোবাসা শুকিয়ে যায়।

তার কামনা আর শিশুর মতো নিষ্পাপ নয়। বরং তাতে এক ধরনের প্রাপ্তবয়স্ক মমতা থাকে, থাকে বোঝাপড়া। সে জানে কখন চাওয়া, কখন না বলা। সে জানে, ‘না’ বলাটাও নিজের প্রতি এক রকম ভালোবাসা। তার ভালোবাসা এখন আর পাগলামি নয়—তা গভীর, সযত্নে বাছাই করা, বোধসম্পন্ন।

সমাজ হয়তো ভাবে এই বয়সের নারী নিঃসাড়, নিঃস্পৃহ। কিন্তু তারা জানে না, তার ভেতরটায় প্রতিদিন ঢেউ খেলে যায়। তার চোখে জমে থাকা পুরনো গল্পের আলো ঝিলমিল করে, তার হাসিতে মিশে থাকে না বলা ভালোবাসার রেশ। এই নারী চাইলেই কারো জীবনে নীরবে ঢুকে যেতে পারে, আবার কাউকে বিদায়ও জানাতে পারে নিঃশব্দে—এক বিন্দু তিক্ততা ছাড়াই।

তার যৌনতা আজ আর কারো কাছ থেকে অনুমতি চায় না। সে নিজের শরীর, নিজের কামনা, নিজের মনের দায়িত্ব নিজেই নেয়। সে জানে—কে তার জলের গভীরে স্নান করার যোগ্য, আর কে কেবল পাথর ছুড়ে জল ঘোলা করতে চায়।

মধ্যবয়স মানে ক্ষয় নয়, সেটি এক নবজন্ম। একজন নারী এই বয়সে এসে হয়তো সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল হয়—যেন সন্ধ্যার আলোয় জ্বলে ওঠা দীপ, যা সারা দিনের ক্লান্তিকে শান্ত করে। তার কামনা আগুন নয়—তা আলো। তা জ্বলিয়ে দেয় না, তা গায়ে মেখে থাকে।
এক নদী, যে জানে কখন কার দিকে পথ খুলে দিতে হয়, আর কখন নিজেকে আগলে রাখতে হয়।
যে জানে, ভালোবাসা মানে কারো হাত ধরা নয়—বরং কারো হাতে নিজের হাত রাখার মতো আত্মবিশ্বাস অর্জন করা।

✍️
সোর্স: এফবি

রাতে দেরিতে ঘুমান তাহলে গল্পটি আপনার জন্য

যাদের রাতে ঘুমাতে দেরি হয়, তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ
একটি কথা। এক ব্যক্তি হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহাম
(রহঃ) এর সাথে তর্ক করছিলো যে-'বরকত' বলতে কিছুই
নেই।
তিনি বললেন, তুমি কি ছাগল ও কুকুর দেখেছো?
লোকটি বলল,
জি দেখেছি।
শায়খ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন- বলতো কুকুর আর
ছাগল এর মধ্যে কে বেশি বাচ্চা দেয়?
লোকটি বললো, কুকুর।
শায়খ বললেন, এদের মধ্যে তুমি কোন জন্তুটিকে বেশি
দেখতে পাও, কুকুর না ছাগল?
লোকটি বললো, ছাগল।
শায়খ ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রহঃ) বললেন,
"ছাগলকে মানুষ খায়, কোরবানির সময় কত ছাগল
কোরবান করা হয়, এরপর ও ছাগলের সংখ্যায় বেশি দেখা
যায়, কমে না। এর রহস্য কি বলে মনে হয় তোমার?
লোকটি জিজ্ঞাসা করলো- কি রহস্য শায়খ?
শায়খ বললেন- একবার ভেবে দেখো, এটা কি বরকত নয়?
লোকটি বললো, তাহলে এর কারণ কি যে ছাগলের মধ্যে
বরকত হয়, আর কুকুরের মধ্যে বরকত হয় না?
শায়খ বললেন, এর কারণ হলো ছাগল সন্ধ্যা হতেই ঘুমিয়ে
যায়, আর ভোরে জাগ্রত হয়, এই সময়টাই হয় রহমত ও
বরকত বর্ষণের মুহূর্ত। ফলে তার মধ্যে বরকত হয়। আর
কুকুর সারা রাত জাগ্রত থাকে ফজরের আগে ঘুমায়। তাই
সে বরকত থেকে বঞ্চিত থাকে।
একটু চিন্তার বিষয়, নবীজি (সঃ) এর সুন্নাত হলো-এশার
নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া। শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে
তাহাজ্জুদ পড়া, কেননা আল্লাহ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে
প্রথম আসমানে নেমে এসে বান্দাদের কে দোয়া করার জন্য
ক্ষমা চাওয়ার জন্য ডাকতে থাকেন।
আর আমরা? সাড়া রাত মোবাইলে, ইন্টারনেটে হা'রা'ম
কাজে ব্যস্ত থেকে ঠিক এই সময়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আর
ফজরের তো খবরই নেই। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই
আছেন যারা যখন শুনেন মসজিদের ফজরের আজান
হচ্ছে, ঠিক তখনই তারা ঘুমাতে যান। তাদের মনে হয়
হায়রে, ঘুমের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের এটা মনে হয়
না, আজানটা যখন হয়েই গেছে, নামাজটা পড়ে ঘুমিয়ে
পড়ি।
অথচ রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ফজরের কেবল দুই রাকাত
সুন্নাত সালাত পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা আছে সবকিছুর
চাইতে উত্তম, সুবহানআল্লাহ। তাহলে দুই রাকাত ফরজের
কতটা মর্যাদা হতে পারে? এমন অতি মূল্যবান সময় আমরা
ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেই। তাহলে আমাদের কাজ কর্মে আল্লাহ
বরকত দিবেন কিভাবে?
আবার আমরাই দোয়া করে অস্থির হয়ে যাই আর ভাবি -
আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করেন না কেন?
কিন্তু যখন আমাদের হাতে মোবাইল ছিল না, তখন সময়টা
এমন ছিল না। আগের দিনের মানুষ সন্ধ্যার একটু পর পর
সাত আটটার দিকে ঘুমিয়ে যেত। স্বামী স্ত্রী রাতে ঘুমানোর
আগে অনেক গল্প করতেন। অনেক লম্বা একটা সময়
ঘুমানোর পরে তাদের ভোর পাঁচটার দিকে উঠতে কোন
সমস্যা হতো না। ভোর বেলায় তারা খেতে খামারে কাজ
করতে চলে যেত। দুপুরের মধ্যেই কাজ শেষ করে বাড়ি
ফিরত। তারপর বউ বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে পারতো।
কিন্তু এখন আমাদের আর সেই সুযোগ হয় না। ঘুমের সময় ছাড়া আমারা 
আর কেউ বাসায় থাকি না। শুধু কাজ আর কাজ।
আমাদের সামাজিক বন্ধন ঠুনকো হয়ে যাচ্ছে। নারীরা
তাদের সঙ্গীর কাছে সময় ভিক্ষা চাইছেন, পুরুষেরাও
তাদের নারীর কাছে। কিন্তু কেউ কাউকে সময় দিতে
পারছেন না। 
তাই আসুন আমরা এখনই নিজেকে পরিবর্তন করি,
আল্লাহর বিধান সমূহকে যথাযথভাবে গুরুত্বের সাথে পালন
করি। তাহলে আশা করা যায়, তিনি আমাদের দোয়া কবুল
করবেন এবং কাজকর্মে বরকত দিবেন, ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান
করুন, আল্লাহুম্মা আমিন।

সোর্স: এফবি

লাইফ পার্টনার 
পার্ট:-০১

- Are you crazy mom, আমি একটা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে হয়ে একটা নাবালিকা মেয়ে কে বিয়ে করবো এই মেয়ে তো এখনো বিয়ে মানেই বুঝে না স্বামী সংসার মানে কি বুঝবে?

মায়ের সাথে গ্রামে যাচ্ছে মেয়ে দেখতে যা শহর থেকে  প্রায় ২৫ কিঃমিঃ দূরে তার মায়ের কোন এক বান্ধবীর মেয়ে। ফাহিমের বয়স যখন ১০ বছর তখন তারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসে আজ ১৫ বছর পর তারা গ্রামে যাচ্ছে শুধুমাত্র বান্ধবী কে একটা কথা দেওয়ার জন্য।

কানে হেডফোন দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে হঠাৎ গাড়ি টা ব্রেক করায় সামনের দিকে পড়ে যেতে নিলে সিটে ধরে নেয় তারপর ধমকের সুরে বলে

- কি হয়েছে ড্রাইভার গাড়ি থামালে কেন?

- গাড়ি আর সামনে যাবে না স্যার,কাচা রাস্তা তার উপর রাস্তা টা অনেক খারাপ।

ফাহিম কান থেকে হেডফোন খুলে গলায় ঝুলিয়ে মায়ের দিকে তাকাতেই তিনি গাড়ি থেকে নামতে ইশারা করলেন। দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে একটা জোরে নিশ্বাস নিল তারপর মায়ের পিছন পিছন হাটতে লাগলো।

সোফায় বসে আছে ফাহিম এবং তার মা সামনে নাস্তা রাখা সে ভেবেছিল গ্রামের ঘর গুলো মাটির হবে কিন্তু তার ধারণা ভুল ঘর গুলো টিনের হলেও অনেক সুন্দর মেঝে পাকা আর বিভিন্ন ডিজাইন করা গ্রাম যে এতটা আপডেড হয়ে গেছে তা সে জানতো না। মায়ের কানে কানে ফিসফিস করে বললো

- আমি একটু বাড়ি টা ঘুরে দেখি মম।

- তুই এখানকার কিছু চিনিস যদি হারিয়ে যাস।

- আমি ছোট বাচ্চা না মম যে হারিয়ে যাব আমি গেলাম।

- একদম না চুপচাপ এখানে বসে থাক এখনি মেয়ে কে নিয়ে আসা হবে।

ফাহিম বাধ্য ছেলের মতো প্লেট থেকে একটা বিস্কুট নিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ পর মেয়ে কে নিয়ে আসা হলো ফাহিম মেয়ে কে দেখে একটা বড় ধরনের শক খেলো তার হাত থেকে বিস্কুট টা পড়ে গেল। সে আবার মায়ের কানে কানে ফিসফিস করে বললো

- তোমার সাথে একটু কথা আছে মম ওইদিকে চলো।

- কি কথা এখানে বলো কিন্তু ফাহিম কিছু না বলে   মাকে টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে গেল।

- Are you crazy mom, আমি একটা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে হয়ে একটা নাবালিকা মেয়ে কে বিয়ে করবো এই মেয়ে তো এখনো বিয়ে মানেই বুঝে না স্বামী সংসার মানে কি বুঝবে?

-  তোমার কোন দিক দিয়ে একটা ১৬ বছরের মেয়ে কে অবুঝ বলে মনে হয় গ্রামের মেয়েরা শহরের মেয়ের মতো ঢং করতে না পারলেও তারা খুব ভালো করে জানে কিভাবে স্বামীর মন জয় করতে হয় এবং সংসার সামলাতে হয়।

- কিন্তু মম মেয়ে টা আমার থেকে ৯ বছরের ছোট।

- স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ৮/৯ বছরের পার্থক্য থাকা উচিত তোমার বাবার সাথে যখন আমার বিয়ে হয়ে ছিল তখন তার বয়স ছিল ২০ আর আমার ১৩।

- কিন্ত আমি একটা নাবালিকা মেয়ে কে কিভাবে বিয়ে করবো মম?

- আমি আমার বান্ধবী কে কথা দিয়েছি তার মেয়ে কে আমার পুত্রবধূ বানাবো এখন তুমি যদি চাও আমি আমার বান্ধবীর কাছে ছোট হয়ে যায় তাহলে চলে যেতে পারো।

- তুমি কিছু পারো আর না পারো ইমোশনাল ব্যাকমেইল করতে খুব ভালোই পারো।

- তুই কি তাহলে বিয়ে টা করবি?

- অবশ্যই মম তোমার সম্মান বাচাতে বিয়ে তো করতেই হবে ১ সেকেন্ড এখানে বিয়ের কথা কিভাবে আসলো?

- আমি সিদ্ধান্ত নিছি আজকেই তোদের আকদ সম্পন্ন হবে।

- অসম্ভব আমার বন্ধু বান্ধবী আছে তাছাড়া পাপা কে কিছু না জানিয়ে।

- আমি আসার সময় তোর বাবা কে জানিয়ে এসেছি হয়তো এতক্ষণে চলে এসেছে।

- তাহলে সব আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিল।

- হুম এখন চল সবাই অপেক্ষা করছে তারপর দুজনে রুম থেকে বের হলো।

-------------------

রাত ১০ টা,

একটা আলিশান বিল্ডিং এর সামনে দুটো মাইক্রো এসে থামলো একটা গাড়ি থেকে ফাহিম নেমে ভিতরে চলে গেল। ঝর্ণা চৌধুরী এসে নিজের পুত্রবধূ কে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভিতরে নিয়ে গেল তারপর ফাহিমের রুমে নিয়ে গেল  বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো

- তুমি এখানে বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।

- আচ্ছা আন্টি।

- আন্টি না মা বলে ডাকবে।

- ঠিক আছে মা ঝর্ণা চৌধুরী মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।

হাতের সিগারেট টা ফেলে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানার কাছে গিয়ে বললো

- এই মেয়ে তোর নাম কি?

- আপনি আমাকে তুই করে বলছেন কেন?

- আমি তুই করেই বলবো তোর কোন সমস্যা?

- না।

- বল তাহলে তোর নাম কি?

- আয়াত রহমান ফাহিম আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেল এতক্ষণ অনেক কষ্টে বমি আটকিয়ে রাখলেও এখন আর পারলো না গলগল করে বমি করে দিল বিছানা থেকে নামার সুযোগ টাও পেল না। ফাহিম ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তার নববিবাহিত স্ত্রী বমি করছে টাওয়াল টা ছুড়ে মেরে বললো

- তোর কি শরীর খারাপ বমি করছিস কেন?

- আসলে আমার সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয় না বমি আসে।

- তাড়াতাড়ি বমি পরিষ্কার কর আর চাদর তুলে ফ্রেশ হয়ে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়।

- কিন্তু এখানে আমার কোন কাপড় নেই।

- তাহলে কাপড় ছাড়াই শুয়ে পড়।

- আমি কাপড় ছাড়া শুয়ে পড়ি আর আপনি আমাকে সারারাত দেখেন।

- shat up আমার ক্যারেক্টার এত টাও খারাপ না যে একটা মেয়ে কে......।

- পুরুষ মানুষের ক্যারেক্টার কেমন সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।

- জানিস মানে কি আমার আগে কি কেউ এই দেহে স্পর্শ করেছে যদি এমন টা হয় তাহলে খোদার কসম এই দেহ আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিব mind it কথা টা বলে সে সোফায় ঘুমাতে চলে গেল।

আয়াত don’t care ভাব নিয়ে চাদর তুলে নতুন চাদর বিছিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো আমার আগে কি কেউ এই দেহে স্পর্শ করেছে যদি এমন টা হয় তাহলে খোদার কসম এই দেহ আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিব mind it হুহ্ দেহে স্পর্শ করা তো দূর আজ অব্দি আমার বাপ ভাই আমাকে ঠিক করে দেখতে পায় নি, আপনি ছাড়া অন্য কেউ আসুক স্পর্শ করতে তার এমন অবস্থা করবো জীবনেও বাবা ডাক শুনতে পাবে না  হুহ বলে সেও ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

❤️সোর্স: YST STORY❤️
✅ Shafiqul Islam 

মৃত্যু ও হিংস্রতার কাহিনি বদলায়নি

‘‘মানুষ’‘ এই শব্দটি যেন এক বিস্ময়, আবার এক দীর্ঘশ্বাস!! লক্ষ লক্ষ বছরের ইতিহাস-  সভ্যতার সূচনালগ্নেই মানুষ একে অপরের রক্তে হাত রাঙিয়েছে। এক সময়ের লোমশ, পাথরধারী আদিম মানুষ তার অস্তিত্ব রক্ষায় হত্যা করেছে। তা যেন প্রকৃতিরই নিয়ম ছিল। কিন্তু সময় পেরিয়ে, ভাষা এলো, নীতি এলো, ধর্ম এলো, শিল্প এলো, সভ্যতা এল- তবু রক্ত ঝরার রীতি গেল না। কেবল তার রূপ বদলেছে, জায়গা বদলেছে, কিন্তু মৃত্যু ও হিংস্রতার কাহিনি বদলায়নি।

একটা সময় ছিল, যখন হত্যা ছিল বেঁচে থাকার অপরিহার্য অঙ্গ তা মানুষের সাথে অথবা অন্য প্রানীকুলের সাথে। এখন, আধুনিক মানুষের হাতে মোবাইল, কম্পিউটার, স্যাটালাইট, এআই আর মুখে আদর্শ, ঘরে আলো তবু- মন অন্ধকারে। সেই মানুষই আরেক মানুষকে মেরে ফেলে, রাস্তায় ফেলে রাখে, চাঁদা না পেয়ে পাথরের ঘায়ে হত্যা করে। যেন সে কোনো কিছুর মূল্যই রাখে না আর। মানুষ যখন মানুষকে পাথর দিয়ে আঘাত করে, তখন তা শুধু এক দেহের মৃত্যু নয়, তা মনুষ্যত্বের অপমৃত্যু।

পৃথিবীতে অগণন প্রাণী বাস করে, কিন্তু মানুষ একমাত্র প্রানী, যে নিজের জাতকেই নিয়মিত হত্যা করে। বাঘ মারে শিকারের প্রয়োজনে, সিংহ মারে পেটের দায়ে, কিন্তু তারা হত্যা করে না।  অথচ- মানুষ মারে হিংসায়, লোভে, ক্রোধে, খামখেয়ালিতে, অভ্যাসে। সে মারে মুচকি হেসে, সে মারে চোখ বুজে, সে মারে ধর্মের নামে, রাজনীতির  নামে, কিংবা নিছক বিরক্তিতে অথবা বেহুদাই। যে হৃদয়ে ভালোবাসা জন্ম নিতে পারত, সেই হৃদয় আজ বিদ্বেষের আগুনে জ্বলছে কারণ ছাড়াই।

আজ যদি অন্য কোনো প্রাণী আমাদের দিকে তাকায়, তার চোখে বিস্ময় থাকবে না, থাকবে করুণা। একটা পাখি হয়তো গাছের ডালে বসে দেখছে মানুষ মানুষের গলা কেটে ফেলছে, রাস্তায় পাথর দিয়ে মারছে , আর পাখিটি মনে মনে ভাবছে- আমরা তো তোমাদের তুলনায় নগণ্য প্রাণ, তবু আমাদের জাতকে তো আমরা কখনো মারি না! 

একটা হরিণ হয়তো কান্না চেপে ভাবছে, "আমার তো শত্রু শুধু বাঘ; তোমাদের শত্রু তো তোমরাই!" এমনকি এক কুকুরও তার মালিকের পাশে বসে থাকলেও এখন ভয় পায়-কারণ সেই মানুষটাই একদিন তাকে বিষ খাইয়ে দিতে পারে। কী নির্মম ভাবনা ভাবতে বাধ্য হয়।

সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো, আমরা এইসব দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি এই দেশে। আজ আর মানুষ মরে গেলে কাঁপে না ভিতর। পাথর পড়লে কেবল হাড় ভাঙে না, ভাঙে একটা সমাজ, ভাঙে বিশ্বাস, ভাঙে এই বাঙালীর বাঙালিয়ানার অস্তিত্ব। তবু আমরা নির্বিকার হই, প্রতিদিন নতুন করে ভুলে যাই, আবার মানুষকেই মানুষ মারার সুযোগ করে দিই।

আমরা হয়তো অনেক উন্নত হয়েছি,  কিন্তু হৃদয়ে আমরা এখনও সেই লোমশ, আদিম মানুষই রয়ে গেছি। শুধু মাথার শিংটা এখন অদৃশ্য, পাথরটা আধুনিক হয়ে গেছে। কখনও সেটা বুলেট, কখনো চাপাতি, কখনো পাথর, কখনও শব্দের বিষ, কখনও বিচারহীনতা।

তবু কেউ কেউ এখনও মানুষকে ভালোবাসে, এখনও চোখ ভিজে যায় কারও রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখে। কেউ কেউ এখনো চুপ করে কাঁদে, রাতের  আন্ধারে মানুষের জন্য মানুষ হয়েও। 
কেননা যারা সত্যিকারের মানুষ, তাদের হৃদয়ে এখনো ব্যথা হয়। তারা জানে, এই পৃথিবী একদিন বদলাবে,একদিন এই পৃথিবী বাউলের হবে। হয়তো তারা বেঁচে থাকবে না, তবু তারা স্বপ্ন দেখে- যে একদিন আর কোনো মানুষকে আরেক মানুষের হাতে মরতে হবে না।

সেই স্বপ্নের আগে, পৃথিবী হয়তো আরেকটু কাঁদবে, বাতাসে ভেসে বেড়াবে আর্তনাদের ধ্বনি। আর কিছু পাখি, কিছু বৃক্ষ, কিছু নিরীহ প্রাণী মানুষকে দেখবে এক অদ্ভুত চোখে—বিচার নয়, করুণায়।
কারণ তারা জানে, মানুষ এখনো মানুষ হতে পারেনি।

এই দেশ, কিন্তু তার আগে—
এই পৃথিবী আরও অনেক কান্না দেখবে, হিংস্রতা দেখবে।
আরও অনেক পাথর উড়বে বাতাসে, আরো স্নাইপার থাকবে গোপনে।
আরও অনেক আধুনিক মানুষের ছায়া মিলিয়ে যাবে আদিম মানুষের গুহার আঁধারে।
সোর্স: এফবি

আবার কুনাট্যঃ অধ্যাপক আবুল বারকাত গ্রেপ্তার
হিন্দুশূণ্য বাংলাদেশ তত্ত্বের স্রষ্টা গ্রেপ্তারঃ

গত বৃহস্পতিবার রাতে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করেছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার। এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই গ্রেপ্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছিলেন। কিন্তু এ’হেন অর্থনীতিবিদকে গ্রেপ্তারের আসল কারণ কী! মূল কারণ ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় বারকাত সাহেবের ‘বাংলাদেশে কৃষি ভূমি জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ নামের বইটি। বইটির একটি অনুচ্ছেদ হলো ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভূসম্পত্তিকেন্দ্রিক প্রান্তিকতা : শত্রু ও অর্পিত সম্পত্তি আইন’। এখানে ৭১ নম্বর পৃষ্ঠায় আবুল বারকাত লিখেছেন : ‘আমার হিসেবে প্রায় পাঁচ দশকে ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ নিরুদ্দিষ্ট হয়েছেন। ’আবুল বারকাত সাহেবের এই গবেষণা বলে, দেশ থেকে প্রায় ১ কোটি ১৩ লক্ষ হিন্দু হারিয়ে গেছেন। ফলে হিন্দুদের সংখ্যা কমে আসছে। আবুল বারকাত সাহেব আরও বলেছিলেন, এরকম চললে ৫০ বছর পরে দেশে কোনো হিন্দুই থাকবে না। মনে রাখবেন সেটা ছিল শেখ হাসিনার আমল। 

বাংলাদেশে হিন্দুবিদ্বেষ পাকনীতির অনুসারীঃ

২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেন যেখানে ইতিহাসবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা বক্তা এবং সাংবাদিকদের মধ্যে গুটিকয়েক আমন্ত্রিত ছিলেন। অধ্যাপক আবুল বারকাত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের চেয়ারম্যান। আমার বক্তব্যের বিষয় ছিল ‘পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তভাগ ও পরবর্তী ঘটনাবলী’। পাকিস্তান যে পরিকল্পনাহীন ও অপ্রত্যাশিতভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এবং যার বীজ ছিল হিন্দু বিদ্বেষ, কথাটা আমি স্পষ্ট বলেহিলাম। পরবর্তীতে গণতন্ত্রের সূত্রপাতের বদলে সামরিক শাসন ও একনায়কতন্ত্রের ধাত্রীভূমি হয়ে ওঠে পাকিস্তান যার প্রভাব বাংলাদেশেও বিদ্যমান। শুধু তাই নয় স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দুরা চিরকালই নিপীড়িত ও তাদের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মোতাবেক, ১৯৫১ সালে এদেশে সংখ্যালঘুদের অনুপাত ছিল ২৩.১, যা ২০১১-তে এসে দাঁড়িয়েছে ৯.৬-এ। স্বাধীনতার আগে দেশভাগের প্রেক্ষাপটে হিন্দু-ধর্মাবলম্বী অনেকেই দেশত্যাগ করেছেন, সেটা ভিন্ন একটা প্রেক্ষাপট। ১৯৭১-এর পরেও, নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে এদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হয়েছে। ফলে আনুপাতিক সংখ্যা কমেছে দ্রুত হারে। 

প্রিয়া সাহার ক্ষোভ ও নতুন বাংলাদেশঃ

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যে চর্চা বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই ওয়াশিংটনে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রিয়া সাহা। হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন। ওই কথার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। তার দেওয়া পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, দেশে প্রতিবাদও হয়। প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে ‘দেশদ্রোহী’ কাজ বলে কঠোর শাস্তি দাবি করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু প্রিয়া সাহার ব্যাখ্যা না-শুনে কোনও আইনি ব্যবস্থা না-নেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লেখিকা তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে লেখেন, ‘ট্রাম্পকে প্রিয়া সাহা যা বলেছেন, কমই বলেছেন। খুব মাপা সময়। ভয়াবহতা বর্ণনা করার সময় তাই পাননি।’ কিন্তু ২০২৪ এর ৫ অগাস্ট যে তথাকথিত আন্দোলনের নামে শাসক বদল হল তারপরে সংখ্যালঘু নির্যাতনে খোলখুলি নেমে পড়েছে সে’দেশের দখলদার সরকার। ঘর জ্বালানো, হত্যা, আটক করে জেলে পোরা, ধর্ষণ – যা খুশি করার চিত্র পুরো বাংলাদেশ জুড়ে। মন্দির পাহারার কূনাট্য কিছুদিন প্রচারিত হলেও মন্দির-মাজার ধ্বংসের চিত্র আজ বিশ্বের কাছে ফুটে উঠেছে। সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনাগুলিকে শুধুমাত্র ‘রাজনৈতিক কারণে’ ঘটেছে বা ‘সংবাদমাধ্যমের অতিশয়োক্তি’ বলে চালানোর চেষ্টা করেছে ইউনুস সরকার। গত বছরের ৫ অগস্ট থেকে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মোট ২৩৭৪টি অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে সে’সংখ্যা ৫০০০ ছাড়িয়েছে। 

অধ্যাপক আবুল বারকাতের মুক্তি চাইঃ 

এগুলি সবই একনায়কের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার প্রচেষ্টার অঙ্গমাত্র। তাতে নতুন সংযোজন অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করা। যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য সব দেশেই বাংলাদেশের এই ধর্মীয় সহিংসতার নিন্দা করা হয়েছে। বাংলাদেশের কিছু গর্দভসদৃশ নাগরিক আছেন যারা হিন্দু নির্যাতন নিয়ে প্রসঙ্গ তুললে ভারতের মুসলমানদের ওপরে অত্যাচার হয় বলে ফেক ভিডিও ছেড়ে দেন। কিন্তু তাদের মস্তিস্ক যে পুরীষ দ্বারা গঠিত বোঝা যায় কেননা ভারতে রাস্ট্রক্ষমতায় টিঁকে থাকতে গেলে মুসলমানদের সমর্থণ জরুরী। মুসলমানরা যে ভারতে অন্যান্য ধর্মের নাগরিকদের সাথে একাসনে বসবাস করেন তা সর্বক্ষেত্রে প্রমানিত। দেখুন, অধ্যাপক আবুল বারকাত অর্থনীতির বিদগ্ধ অধ্যাপক এবং তাকে গ্রেপ্তার যে তার স্পষ্ট ও সত্যভাষনকে চেপে দেওয়ার ইউনুসীয় কুবুদ্ধি তা যে কেউ বুঝবেন। এখন প্রত্যাশা এই যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি মুক্তি পান। বঙ্গীয় হিন্দুদের এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলা প্রয়োজন। বিশেষত তথাকথিত সেক্যুদের, পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে তার আঁচ আপনার গায়েও লাগে। সেই আঁচে কি আপনি তাত্ত্বিক আলোচনা করবেন না আগুন নেভাবেন? সিদ্ধান্ত আপনাদের।

কবি আল মাহমুদ, বিস্ময়কর প্রতিভা নিয়েও বিজেতা 

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, রাত তখন ভারতীয় সময়ে সাড়ে এগারোটা। সংবাদ ভেসে এল বাংলাদেশের কবি আল মাহমুদ প্রয়াত। বাংলা কবিতাচর্চা যারা করেন তারা যতই উন্নাসিক হোন না কেন কবি আল মাহমুদকে প্রকৃত কবি হিসেবে স্বীকার করেন, কেউ প্রকাশ্যে কেউ জনান্তিকে। বাংলাদেশ সেদিন স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। একদল কবি আল মাহমুদকে সামান্য শ্রদ্ধা জানানোর বিপক্ষে। অন্যদল কবি আল মাহমুদকে মরণোত্তর সামান্য সম্মান জানাতে উদ্যোগী। কিন্তু সেদিন জিতে গেল কবি আল মাহমুদকে শেষ সম্মান জানানোর বিপক্ষীয়রা। কবির মরদেহ নেওয়া গেল না শহিদ মিনারে। তার দাফন হল না ঢাকার মিরপুরের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের কবরস্থানে। ‘বাংলা অ্যাকাডেমি’তে কিছুক্ষণের জন্যে নেওয়া হলেও তার সমাধি হল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌরাইল গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে। আমার মনে পড়ে গেল কবির লেখা একটি অমোঘ লাইন – 

পরাজিত নই নারী, পরাজিত হয় না কবিরা
দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা-উপশিরা… 

তাহলে কি সেদিন কবি পরাজিত হয়েছিলেন? নাহ, কবিরা কখনও পরাজিত হয় না।

কে আল মাহমুদ ? বাংলা ভাষার কত বড় কবি সে? ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই প্রবল বর্ষণের এক রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামের এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কবি। মাত্র ১৮ বছর বয়স ১৯৫৪ সালে সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে কবি ঢাকা আসেন। তখন থেকেই তাঁর কবিতা প্রকাশ পেতে থাকে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ পত্রিকা এবং কলকাতার ‘নতুন সাহিত্য’, ‘চতুষ্কোণ’; বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত বিখ্যাত ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে তাঁর নাম সুপরিচিত হয়ে ওঠে; তাকে নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী ‘কাফেলা’ পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘লোক-লোকান্তর’ সর্বপ্রথম তাকে স্বনামধন্য কবিদের সারিতে জায়গা করে দেয়। এরপর ‘কালের কলস’, ‘সোনালি কাবিন’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে উঠো’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থগুলো তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ঝড় তোলে ‘সোনালী কাবিন’।

‘সোনালি কাবিন’ একটি বহুমাত্রিক কবিতা। আল মাহমুদের কাব্যখ্যাতির মূল স্তম্ভ এই কবিতাটিতে বিবিধ বৈপরীত্যের সহাবস্থান ঘটেছে। কাবিনবিহীন হাত দুটি অর্পণ করেও কবি বয়ন করেন প্রতিশ্রুতির তালিকা, গ্রাম্য কিশোরীর লজ্জাবিধূর এবং অসংস্কৃতমনের কাছে হাজির করেন ইতিহাস-লোকবিশ্বাস-নৃতত্ত্ব-রাজনীতির তথ্যভারাক্রান্ত এক জটিল বাকবিভূতি। কৌমের যৌথসংগ্রামের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেষপর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকেন প্রেমাকুল এক ব্যক্তিসত্তা। তৎসম তদভব শব্দের জটিল বুননের মধ্যে অবলীলায় গেঁথে দেন মুসলমানি ‘জবান’-এর নানাবিধ শব্দের ফুল। কিন্তু এতসব বৈপরীত্য সত্ত্বেও ‘সোনালি কাবিন’ একটি আশ্চর্য কবিতা। কবি আল মাহমুদ স্মৃতিতে থেকে যাবেন মূলত এই একটি কবিতার জন্য । নিপাট সরল এক আত্মিক-দৈহিক বিবাহের পয়গাম নিয়ে দুয়ারে দাঁড়িয়ে কবি উচ্চারণ করলেন কামিনীর প্রতি 

“সোনার দিনার নেই, দেন মোহর চেয়ো না হরিনী
 যদি নাও, দিতে পারি কাবিনহীন হাত দুটি
  আত্মবিক্রয়ের স্বর্ণ কোনকালে সঞ্চয় করিনি
আহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি;  
ছলনা জানিনা বলে আর কোন ব্যবসা শিখিনি।”

প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক-লোকান্তর’(১৯৬৩) গ্রন্থে নিচু কন্ঠস্বরে তিনি তাঁর অনুভবের কথা, তাঁর পারিপাআরশ্বিক কম্পমান অগ্রসরমান জীবনের কথা বলে গেছেন । তিনি বললেন, 

‘আমার চেতনা যেন শাদা এক সত্যিকারের পাখি
বসে আছে সবুজ অরণ্যে এক চন্দনের ডালে;...... 
লোক থেকে লোকান্তরে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে শুনি
 আহত কবির গান।’ 

পরবর্তী গ্রন্থ ‘কালের কলসে’(১৯৬৬) এ চেতনা অনেক পরিণত; লোকজ উপাদানের ব্যবহারে আরো সিদ্ধহস্ত। 

‘....এই দলকলসের ভীড়ে ঝোপে আমার কাফন পরে আমি কতকাল
 কাত হয়ে শুয়ে থেকে দেখে যাবো সোনার কলস আর বৃষের বিবাদ?’ 

জসীমউদ্দীন যেখানে লোকসাহিত্যের উপাদানের উপর তাঁর কুটির তৈরী করেছেন, আল মাহমুদ সেখানে এই গ্রন্থে আধুনিক এক প্রাসাদের কারুকার্যে লৌকিক উপাদান ব্যবহার করলেন।

বছর তিনেক পরের ‘সোনালী কাবিনে’ আল মাহমুদ অলখের দেখা পেলেন; অধরাকে ধরে ফেললেন। চৌদ্দটি সনেটের সমন্বয়ে এ কবিতাগুচ্ছ বাঙলা সাহিত্যের এক মাইলফলক। এখানে আছে প্রতীকী ভাষন; নিখুঁত বর্ণনা; আবেগ স্পন্দিত স্তবক; বিচ্ছিন্ন সুন্দর লাইন।  আল মাহমুদ যখন এরকম করে বলে ওঠেন – 

আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,
পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণীর উচ্ছেদ
 এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ
যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ। 

তখন কোনো দুর্মুখেরও এ সাহস থাকে না যে বলে, এ কাব্যের আবেদন কেবল দেশের মাটিতেই সীমাবদ্ধ। গ্রামের মাটি থেকে বিচিত্র আকুল আগ্রহকে কবি উন্মোচন করেছেন, নদীর চরের প্রতি কৃষানীর অধিকার প্রতিষ্ঠার রূপকল্পে প্রমাণিত হয়েছে নারীর প্রতি পুরুষের আকাঙখার ক্ষুধার্ত নদীর উপমায় নর-নারীর কামনার চিত্র। এইতো আমাদের আল মাহমুদ এবং তার গ্রামীন প্রান্তরের উপঢৌকন যেখানে যৌনতার আন্তরিক অভিব্যক্তি ঘটেছে : 

বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল
পৌরুষ আবৃত করে জলপাইয়ের পাতাও থাকবেনা
তুমি যদি খাও আমাকেও দিও সেই ফল
জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হবো চিরচেনা ।

সোনালি কাবিন’ সাম্প্রতিক কবিতা-ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা দ্রোহী কবিতা, সর্বাপেক্ষা যৌন কবিতাও সম্ভবত, কেননা আল মাহমুদ এমন একজন শক্তিশালী অর্জুন, যিনি কামনা-যৌনতার ধনুতেও অনায়াসে বিপ্লবের ছিলা পরাতে পারতেন। অথবা বিপ্লবের বল্লমের ফলায় খচিত করতে পারেন রতির কারুকাজ।  

মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি ফিরে যান ঢাকায়। ১৯৭৩ সালে তিনি কারাবরণ করেন৷ ১৯৭৫ এ তিনি মুক্তি পান৷ এই ‘৭৩ থেকে ’৭৫ সালটাই কবির জীবনের এক সুবিশাল টার্নিং পয়েন্ট। আজীবনের সমাজতন্ত্রী, বাম রাজনীতির প্রতি সহনুভূতিশীল আল মাহমুদ ঝুঁকে পড়েন ধর্মের দিকে। এ সময় তিনি সিদ্ধান্থীনতায় ভুগছিলেন। ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’(১৯৭৬) তে সেই সিদ্ধান্তহীনতা, দ্বিধা প্রকাশিত হয়েছে বারেবারে। ইতিমধ্যে তাঁর কবিখ্যাতি পৌঁছে গিয়েছে রাষ্ট্রপতির বাসভবন পর্যন্ত৷ কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ডেকে শিল্পকলা একাডেমীর প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে নিয়োগ দেন৷ ১৯৯৩ সালে তিনি ওই বিভাগের পরিচালকরূপে অবসর নেন। 

অদৃষ্টবাদীর রান্নাবান্না’ (১৯৮০) কাব্যগ্রন্থে কবি মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকটাই কাটিয়ে উঠে নিজের বিশ্বাসকে ধর্মের দিকে টেনে নিয়ে এলেন। মহানবী হযরত মোহাম্মাদকে(স) নিয়ে লিখলেন, - 

“গভীর আঁধার কেটে ভেসে ওঠে আলোর গোলক
সমস্ত পৃথিবী যেন গায়ে মাখে জ্যোতির পরাগ
তাঁর পদপ্রান্তে লেগে নড়ে ওঠে কালের গোলক
বিশ্বাসে নরম হয় আমাদের বিশাল ভূভাগ।” (হযরত মোহাম্মদ)

আর ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’(১৯৮৫), ‘আরব্যরজনীর রাজহাঁস’(১৯৮৭) এবং ‘প্রহরান্তরের পাশফেরা’(১৯৮৮)- এই তিনটি গ্রন্থে কবি নিজের নতুন বিশ্বাসগত পরিচয়কে নির্দ্বিধায় মেলে ধরলেন। চিৎকার করে বলে উঠলেন, - ‘

মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে
মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদেই অন্তিম তৃপ্তি;
আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি।”
(বখতিয়ারের ঘোড়া)।

‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ কবিতা সংকলনে কবি আল মাহমুদ এমন একটি ঐতিহাসিক চরিত্রকে তাঁর কাব্যিক বন্দনায় সিক্ত করেছেন যিনি বাস্তবে বইহীন পৃথিবীরই স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি। মাত্র আঠারো অশ্বারোহী ব্যবসায়ীর ভেক ধরে তিনি গৌড় অধিকার করেছিলেন বলে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। কিন্তু কাহিনীটি আংশিক প্রমাদযুক্ত। মুসলমানদের শৌর্যবীর্যে মোহাবিষ্ট একজন অতীতকাতর মুসলমান হিসেবে আল মাহমুদ সেই বীর আর তার ঘোড়াকে বন্দনা করে পদ রচনা করতেই পারেন। কিন্তু সেই বীরের শৌর্যবীর্যের সাথে একটি ঐতিহাসিক কলঙ্কও যে অনপনেয় হয়ে আছে সেটা আল মাহমুদ ভাল করে জানলেও তাঁর কাছে সেই কলঙ্কের চেয়ে মহিমান্বিত ছিল বখতিয়ার খলজীর ঐতিহাসিক বিজয়- 

আল্লার সেপাই তিনি, দুঃখীদের রাজা। 
যেখানে আজান দিতে ভয় পান মোমেনেরা,
আর মানুষ করে মানুষের পূজা,
সেখানেই আসেন তিনি। 
খিলজীদের শাদা ঘোড়ার সোয়ারি।

ক্রমেই তার মৌলবাদ তার কবিতায় মাথা চাড়া দেয় যখন  তার কন্ঠে যখন উচ্চারিত হয় – 

এই পার্বত্য উপত্যকার 
প্রতিটি পাহাড়চুড়ো এবং পবিত্র স্তম্ভগুলোর শপথ, শপথ 
পবিত্র কাবা তাওয়াফকারী এখানে উপস্থিত প্রতিটি 
নর-নারীর। যদি দলবদ্ধভাবে একবার, শুধু একবার। এমনকি 
নিরস্ত্রভাবেও একবার। যদি 
আমার দেশ প্যালেস্টাইন। 
শত্রু অধিকৃত একটা শহর। আপনাদের 
প্রথম কেবলা। একবার যদি ভাইগণ। 
আল কুদসের দিকে মুখ ফেরান, একবার।.......”(মীনার প্রান্তরে ইয়াসির আরাফাত)।

কবি আল মাহমুদের কবিতায় ১৯৯০-এর দশক থেকে বিশ্বস্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস উৎকীর্ণ হতে থাকে; এজন্য তিনি তথাকথিত প্রগতিশীলদের সমালোচনার মুখোমুখি হন। ১৯৯৩ সালে বের হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’।  ইসলামি আদর্শের প্রতিফলন ঘটতে থাকে তাঁর লেখায়। তিনি লেখেন – 

অথচ ঘুমের মধ্যে কারা যেনো, মানুষ না জ্বীন
আমার কবিতা পড়ে বলে ওঠে আমিন, আমিন।

কিন্তু ধর্মবিশ্বাসের সাথে ধর্মব্যবসায়ীদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অগণিত মানুষ হত্যাকারী রাজাকারদের গুলিয়ে ফেলেন। তিনি হাত মেলান জামাতীদের সাথে। আলবদর আলশামসের ঘৃণ্য খুনিদের সাথে। আল মাহমুদ বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় গণহত্যার রূপকার গোলাম আজমের পক্ষে যে বাক্য রচনা করেছিলেন তা ক্রোধ সৃষ্টি করে সমগ্র বাঙালিদের পক্ষে: 

"অধ্যাপক গোলাম আযম এর মত প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ এই উপমহাদেশে ক্রমাগত বিরল হয়ে এসেছে। তাঁর জীবনের খুটিনাটি বিষয় এবং রাজনৈতিক বিনিময়ের কৌতুহল উদ্দিপক ঘটনা অনেকেরই অজানা। তিনি সাহসী মানুষ এবং সুদৃঢ় মনবলের অধিকারী। তার বয়স আশির কোঠায়। কিন্তু তিনি অটুট স্বাস্হ্য এবং রাজনৈতিক ধীশক্তি সম্পন্ন। গত ৮০-র দশকে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলা দিয়ে জাতিকে এক ঘনায়মান রাজনৈতিক দুর্যোগ থেকে উদ্ধার করেছেন। এতে বুঝা য়ায়, তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এই ৮০ বছর বয়সেও সতেজ এবং উদ্ভাবনাময়।" 

আল মাহমুদ একালে কমিউনিস্ট ছিলেন। তারপর হলেন মুসলিম জাতীয়তাবাদী। তারো পরে হলেন জিহাদী মুসলমান। তিনি গোলাম আযম, সাঈদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বাংলা ভাষার প্রধান কবিদের একজন হয়ে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি ছিলেন দুর্বল। লাইনে দাঁড় করিয়ে যারা মানুষ মেরেছিলো, নারীদের গণিমতের মাল করে পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলো যারা- সেই লোকদের অপরাধগুলো তিনি অপরাধ মনে করতেন না। তার বখতিয়ারের ঘোড়া কবিতায় এই লাইনগুলো দেখলে চিত্র পরিষ্কার হবে , 

‘মা পাখা ঘোরাতে ঘোরাতে হাসেন,
আল্লার সেপাই তিনি, দুঃখীদের রাজা।
যেখানে আজান দিতে ভয় পান মোমেনেরা,
আর মানুষ করে মানুষের পূজা,
সেখানেই আসেন তিনি।‘

এই সময় ঔদ্ধত্যের চরমে উঠলেন কবি আল মাহমুদ। সারা বাংলাদেশ উত্তাল ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে। বসল গন আদালত। দাবি একটাই। লক্ষ লক্ষ বাঙালির হত্যাকারী পাকিস্তানীদের দোসর রাজাকারদের বিচার চাই। প্রশ্ন করা হল আল মাহমুদকে – ’৭১ এর বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক গোলাম আজমের বিরুদ্ধে যে গন আদালত বসানো হয়েছে, সে সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কি? আল মাহমুদ উত্তরে বললেন – 
"আমি মনে করি গন আদালত যারা বসিয়েছে তারা দেশদ্রোহী। যারা গন আদালত বসায় তারা দেশের শত্রু।"  

এর পরে আল মাহমুদকে সাধারণ মানুষ ছুঁড়ে ফেলে দেয় তাদের মননের সীমার বাইরে। উপেক্ষিত আল মাহমুদ পরে দুঃখ করে লিখেছেন – 

“আমার কাঁধে বিরাট সংসার। আমার রোজগার দিয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করতে হয়েছে। ভালো কোনো চাকরি আমাকে কেউ দেয়নি। প্রচুর শ্রম দিতে হয়েছে। নানা ধরনের গদ্য লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু করতে পারলাম না। বন্ধুদের, কবিদের দেওয়া মানসিক চাপ উপেক্ষা করে সমাজে জায়গা করে নিতে হয়েছে আমাকে। কেউ কোনো স্পেস আমাকে দিতে চায়নি। অনেক ধাক্কা খেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, জেলও খেটেছি। আমাকে বলো, একজন কবি আর কী কী করতে পারে? আমাকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়নি। এখন কোনো কিছুতেই আমার আর আফসোস নেই।”

কিন্তু এই উপেক্ষাপ্রাপ্তি তার অনিবার্য ছিল। দেশের আগে কখনো কবিতার উতকর্ষ নয়। যারা আল মাহমুদের গুণগ্রাহী তার ব্যক্তি আল মাহমুদ নয় তার কবিতার অনুরাগী। কলকাতাও তাই। এখানকার বেশিরভাগ কবি ও কবিতাপ্রেমীরা কবি আল মাহমুদের পদস্খলন জানেন না। তাই তারা কাগজে সোচ্চারে বলেন – আল মাহমুদ ‘মৌলবাদী’ এই কুযুক্তি মানি না। আল মাহমুদ যে কলকাতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন – 

“কলকাতায় গেলে আমাকে পরিচিত ও অপরিচিতজনেরা ঘিরে থাকে। তারা আমাকে পাঠ করে। তোমার জানা উচিত, ওখানকার বড় পত্রিকাগুলো আমার লেখা যেকোনো সময় ছাপাতে আগ্রহী। সেখানে আমার কবিতার অনেক পাঠক আছে। কলকাতায় তো আমাকে কেউ মৌলবাদী বলে না!”

না, কথাটা ঠিক নয়। কলকাতা জানে না যে কবি আল মাহমুদের অর্থের জন্যে শেখ মুজিবের কাছে আত্মসমর্পণ করে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাওয়ার গল্প, জিয়ায়ূর রহমানের কাছে মাথা বিকিয়ে সাহিত্য জগতে মুরুব্বি হওয়ার গল্প, স্বৈরাচারী এরশাদের কাব্য সহায়ক হয়ে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে বনানীতে জমি পাওয়ার গল্প, ’৭১ এর ঘাতক দালাল গোলাম আজমের জীবনী লেখার সাহায্যকারী হিসেবে জীবনযাপনের গল্প। কলকাতা জানে তার অসাধারণ কিছু কবিতা। তার প্রথম কবিতা থেকেই যেখানে তিনি লেখেন – 

আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখো বুকের গঠন
লুকানো যায়না তবু অনিবার্য যৌবনের ফুল
প্রতীকের মত যেন জেগে থাকে তোমার জঘন ।” (অহোরাত্রঃ লোক লোকান্তর) । 
কবি আল মাহমুদের কবিতা অবশ্যই বেঁচে থাকবে। গৌরবে, শ্রদ্ধায়।  কিন্তু তিনি থাকবেন আক্ষেপে তার লেখা কবিতার মত -  

“মরণের পরে শুধু ফিরে আসে কবরের ঘাস
যতক্ষণ ধরো এই তাম্রবর্ণ অঙ্গের গড়ন
তারপরে কিছু নেই,তারপর হাসে ইতিহাস”। 

ইতিহাস ব্যক্তি আল মাহমুদকে পিছু তাড়া করবেই যেমন করেছিল নাৎসি সমর্থক কবি এজরা পাউন্ডকে। কারণ মানব সভ্যতার আগে কবিতা নয়।

তুমি আমার চৈত্রমাসের শ্রাবণ
সূচনা পর্ব

কনে দেখতে এসে কনের বদলে তার ফুপুকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো তুরান।তুরানের এমন অদ্ভুত প্রস্তাব শুনে উপস্থিত সবাই হতবিহ্বল হয়ে তার দিকে চেয়ে থাকলো।

কনের পিতা আশফিন শিকদার নিজের দু হাতের মুঠো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করলেন।তিনি ভেবেছিলেন আজকেই তুরানের সাথে নিজ কন্যা তানজিয়ার এংগেজমেন্ট সেরে ফেলবেন।সেই অনুযায়ী আজকে অনেক কাছের দূরের আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যাবে,তা কি তিনি জানতেন!

আশফিন শিকদারের ফর্সা মুখে বারবার রক্তলাল আভা টগবগ করে উঠছে। কিন্তু চাইলেও তিনি তার রাগটা প্রকাশ করতে পারছেন না।তিনি জানেন,মাথা গরম করলে কিছুই হবে না।হিতে বিপরীত হতে পারে।তার’চে ভালো মাথা ঠান্ডা রেখে তুরানকে বুঝানো।তুরান যা বলছে,তা কখনোই সম্ভব নয়।

আশফিন শিকদারের চেহারার পরিবর্তন তুরান ও দেখছে।তবে,এতে তার কিছুই যায় আসে না।সে নিশ্চিন্তে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।হাতে থাকা কোল্ড ড্রিংকের গ্লাসটায় একটু পরপর চুমুক দিচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে সে। মাঝেমধ্যে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজে চলেছে আপনমনে।নিজের কথা বলে ফেলেছে সে। আপাতত তার আর কিছুই বলার নেই।

বহুক্ষণ নিরব সব, নিস্তব্ধতায় ঢাকা পুরো শিকদার বাড়ি।ক্ষণবাদে নিরবতা ভাঙলেন আশফিন শিকদার।সোফা থেকে উঠতে উঠতে তুরানকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-—“ তোমার সাথে পার্সোনাল কিছু কথা আছে।আমার রুমে আসবে একটু?”
তুরান কোনো প্রত্যুত্তর করলো না।মাথা নেড়ে ইশারায় না বললো।

আশফিন শিকদারের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।তবুও ভদ্রতা দিয়ে রাগ নিবারণ করার চেষ্টা করলেন তিনি।ড্রয়িংরুমে থাকা লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন,সবাই যেন বাড়ির ভিতরে চলে যায়।গিয়ে রেস্ট নেয়।

মেহমানদের কারোরই আশফিন শিকদারের কথা অমান্য করার জো নেই।তাই অনেক কৌতুহল থাকা সত্ত্বেও সবাই বাড়ির ভিতর চলে গেলো।
সবাই চলে গেলে আশফিন শিকদার তুরানকে প্রশ্ন করলেন,
-—“ তুমি যা বলছো ভেবে বলছো‌ তো?”
-—“ আমাকে দেখে কি আপনার অসুস্থ মনে হয়?”
তুরানের পেঁচানো কথা শুনে আশফিন খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।একটু দমে গিয়ে গলার স্বর রুক্ষ করার প্রয়াস করে তুরানকে বললো,

-—“ তুমি কি সত্যিই তানজিয়াকে বিয়ে করবে না?”
-—“ অবশ্যই না।”
-—“ কেন?কেন বিয়ে করতে চাও না আমার মেয়েকে?কি কম আছে তার মধ্যে?”

-—“দশ বছর আগে আপনার বোনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনি আপনার বোনকে আপনি আমার হতে দেননি,আর আজকে বলছেন আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে!বাহ্ শিকদার সাহেব বাহ!”

-—“ তখন আমি বুঝিনি তুরান যে তুমি আমার বংশের যোগ্য জামাই।আজ যখন বুঝতে পেরেছি,তখন আমার বোনের বয়স হয়ে গিয়েছ।আমাদের বংশে বিবাহ উপযুক্তা হিসেবে আমার মেয়ে তানজিয়া ব্যাতীত আর কেউ নেই।আর আমার মেয়ে রুপে গুণে যথেচ্ছা সুন্দরী।তোমার বউ হিসেবে একদম পারফেক্ট!”

—“ ভুল বলছেন! ইয়ারা ছাড়া কেউই আমার জন্য পারফেক্ট না।সে ব্যাতীত কেউ আমার যোগ্য না কখনো ছিল,আর না কখনো কেউ হতে পারবে!”

-—“ খালি ইয়ারা আর ইয়ারা।তার নাম ছাড়া আর কোনো কথাই নেই যেন এই শালার!” মনে মনে কথাটুকু বললো রুমের ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা তানজিয়া!নিজের পছন্দের ফুপুকেও আজ কেমন হিংসা হচ্ছে তার।আগে তো সে এমন ছিল না।তাহলে আজ কেন হচ্ছে এমন!আর ভাবতে পারলো না তানজিয়া। হঠাৎই রেগে গেলো সে।রাগ মিটাতে ছাদে চলে গেলো সে।

এইদিকে তুরানের কথায় আশফিন শিকদারের মাথায় যেন আগুন ধরে গেলো।অতীব কষ্টে নিজের রাগ নিবারণ তুরানকে বললেন,

-—“ তুমি কি সত্যিই আমার মেয়েকে বিয়ে করবে না?”
-—“ কোনো সন্দেহ?” শান্ত গলায় জবাব দিলো তুরান।
-— “ দেখো তুরান,আরেকটু ভাবো!”
-—“ এখানে দেখাদেখির বা ভাবাভাবির কিছুই নেই শিকদার সাহেব।আমি আমার মতে সর্বদা অটল!”
-—“ তবুও একবার ভাবো।আমার মেয়ে খুব সুন্দরী!”
-—“ শাট আপ মিস্টার আশফিন শিকদার।বারবার নিজের মেয়েকে সুন্দরী সুন্দরী বলে চিল্লিয়ে কি করার চেষ্টা করছেন?কি ভেবেছেন আপনি হ্যাঁ?আপনার মেয়ে কচি দেখে,তার রুপের গুণগান শুনে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবো?
এমনটা ভাবলে নিরাশ হবেন মিস্টার শিকদার।আমার জীবনে একজনই ছিল,যাকে ভালোবাসা যায়।আপনার মতো সো কল্ড গণমান্য ব্যাক্তির মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবো না মিস্টার শিকদার,পারবো না।” প্রায় রেগেই কথাটুকু বললো তুরান।

-—“ তু..রা..ন!” চিৎকার করে উঠলেন আশফিন শিকদার।

-—“ উঁহু হু হু..গলা নিচে‌।একদম নিচে!আপনি জানেন না,আপনি কার সাথে কথা বলছেন!”

-—“ তুমি কি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো?শিকদার ম্যাশন এর মালিকের সাথে কথা বলছো তুমি।”

-—“ আপনিও নিশ্চয়ই ভুলে যাননি আমি কে?আমি চৌধুরী ইন্ড্রাসটিজ এর একমাত্র কর্ণধার তুরান ইফতেখার চৌধুরী।আপনি যে টাকা ইনকাম করেন,তা আমার ম্যানেজারদের বেতনের থেকেও কম!”

—“ তু…রান!” ক্ষেপে গেলেন আশফিন শিকদার।
—“ জি বলুন!” তুরানের ভারী স্বর শান্ত হয়ে গেলো নিমেষেই।রুমের ডানদিকের জানালার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো সে।

তুরানের হঠাৎ শান্ত হয়ে যাওয়া দেখে আশফিন শিকদার খানিকটা অবাকই হলেন বটে। তুরানের দিকে তাকাতেই দেখলেন,সে কোথাও একটা তাকিয়ে আছে।তার দৃষ্টি অনুসরণ করে যখনি পিছু ফিরে জানালার দিকে তাকালেন,তখনি কারো হালকা বাতাসে জানালার পর্দা উড়ে গেলো। তৎক্ষণাৎ কেউ একজন জানালার ধার থেকে সরে গেলো বলে মনে হলো।তা দেখে আশফিন শিকদারের চোয়াল আরো শক্ত হয়ে গেলো,মুখে লাল আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে লাগলো। কিছু একটা বুঝে উনি তাড়াহুড়ো করে বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন!

_

-—“ ভাবী।আমি তো কখনোই চাইনি এমন দিন আমার জীবনে আসুক।তবে কেন এমন হলো ভাবী? কেন এমন হলো!বলো?” ইয়ারার কন্ঠস্বর কাঁপছে।

বড়ভাবী আফরিন গ্যাসের চুলার আঁচ একটু কমিয়ে দিয়ে ইয়ারার কাছে এলেন।ইয়ারা তখন রান্নাঘরের ভিতরেই দাঁড়িয়ে আছে।আফরিন এসে ইয়ারাকে একটা চেয়ারে নিয়ে বসালেন।জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে ইয়ারার মুখের সামনে ধরে বললেন,
-—“ নে,আগে পানিটা খেয়ে নে।তারপর কথা বল।”
-—“ পরে খাই?!”
-—“ এক্ষুনি খাবি।”
-—“ আমার হাত-পা কাঁপছে ভাবী।আমি গ্লাস ধরতে পারবো না।”
-—“ তোর ধরতে হবে না।আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।নে,পানিটা খেয়ে নে‌।তারপর একটু দম ছেড়ে বল,কি হয়েছে!”

আফরিন নিজেই ইয়ারাকে পানি খাইয়ে দিলো।তারপর গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে সযত্নে নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ইয়ারার মুখে লেগে থাকা পানি মুছে দিয়ে বললো,
-—“ এবার বল কি হয়েছে!”
-—“ আজকে তানজিয়াকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসার কথা ছিল না?”
-—“ হ্যাঁ তো?”
-—“ তারা এসেছে!”
-—“ হ্যাঁ এসেছে জানি তো! কিন্তু তোর কি হয়েছে।তোকে এতো অস্থির লাগছে কেন?মন খারাপ কেন তোর?”
-—“ পাত্রটা কে জানো?”
-—“ না তো,তোর ভাইয়া তো এসব বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করেনি।”
-—“ পাত্রের নাম ও জানো না?”
-—“ না তো!কি নাম?তুই জানিস?”
-—“ হ্যাঁ জানি ..ওটা তুরান!” বলেই একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো ইয়ারা।
-—“ কি বলিস?” আফরিন চমকে উঠলো।
-—“ হ্যাঁ..বড়ভাবী।”
-—“ তুই সত্যি জানিস তো?”
-—“ আমি নিজ চোখে তাকে দেখে এসেছি!”
-—“ তোর দেখায় ও তো ভুল হতে পারে।”
-—“ তাকে দেখায় ভুল?আর সেটা আমি করবো?তুমি ভাবতেও পারবে না আমি তাকে কতোটা চিনি!”
-—“ তবুও..!”
-—“ আমি সত্যি বলছি ভাবী।আমি তাকে দেখেছি।তার গলার স্বর নিজ কানে শুনেছি।তার গলার আওয়াজ তো আমি ভালো করে চিনি বড়ভাবী।সেটা তো তুমি জানো!”
-—“ হ্যাঁ..জানি তো।”

আকস্মিক তুরানের নামটা শুনে আফরিন কিছুক্ষণ একদৃষ্টে ইয়ারার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। পরিশেষে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ইয়ারাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
-—“ তা,তুরান কি বললো?”
-—“ ও আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে!”
-—“ ওমা..সত্যি!”
-—“ হ্যাঁ বড়ভাবী!”
-—“ তা তোর ভাই কি বললো?”
-—“ ভাইয়া তো ক্ষেপে গিয়েছে।”
তারপর ইয়ারা আফরিনকে আশফিন শিকদার আর তুরানের বাক্যালাপ থেকে যা যা শুনেছে সব বললো।
সব শুনে আফরিন‌ ইয়ারাকে বললো,
-—“ তা তোর কি মত?”
-—“ যেখানে ভাইয়াই রাজি না,সেখানে আমার মত দিয়ে কি হবে ভাবী?” তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে জবাব দিলো ইয়ারা।
-—“ যদি আমি তোর ভাইকে রাজি করি।”
-—“ না না এমনটা করতে যেও না বড়ভাবী।তাহলে দশ বছর আগেকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।তখন ভাইয়া তোমায় আধমরা বানিয়ে ফেলেছিলো।আর এইবার তো তোমাকে আর ছাড়বেই না।তুমি কিছু বলতে যেও না ভাইয়াকে প্লিজ!”
ইয়ারার এমন কাকুতি মিনতি শুনে আফরিন ইয়ারাকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করালেন। ইয়ারার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-—“ বোনের খুশির জন্য এতটুকু মার সহ্য করতে পারবো না?”
-—“ বোনের খুশির জন্য কিছু বলতে গেলে বোন যে তোমাকে হারিয়ে ফেলবে ভাবী!আর তোমার বোন সেটা চায় না।একদম না!”
-—“ আমাকে হারানোর ভয় পাস?” ইয়ারার থুতনি উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো আফরিন!”
-—“ খুব ভয় পাই বড়ভাবী খুব!”
-—“ কেন রে?এতো ভয় কেন তোর?”
-—“ মায়ের পরে তুমিই তো আমার একমাত্র সম্বল।আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন ভাবী।তোমাকে হারালে আমিও যে হারিয়ে যাবো!”
-—“ ইশ..বোনটা আমার কতো বড় হয়ে গিয়েছে।কতো কথা বলতে শিখে গিয়েছে!”
-—“ বয়স কি আর কম হলো গো!গুণে গুণে আটাশ হয়ে গেলো!”
বলেই ফিক করে হেসে দিলো ইয়ারা।
আফরিন ইয়ারার মুখপানে তাকিয়ে রইলেন।মেয়েটা মুখে হাসলে কি হবে!তার চোখ বলে দেয়,কতোটা যাতনায় আছে সে!আহ! মেয়েটার জীবনে কি সুখ আসবে না?”

✅ সোর্স: YST STORY ✅ 


উদ্দেশ্যসফল জুলাই ‘বিপ্লব’, ব্যর্থ কে বলে? 
অমিত গোস্বামী   

উদ্দেশ্য – ১

বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনের ভরসাপূর্তি বা বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের যে শিরোনাম উঠে আসছে তা হল - শেষ পর্যন্ত জুলাই অভ্যুত্থান কি ব্যর্থ? এখন সবাই ‘অভ্যুত্থান’ বলছেন, ‘বিপ্লব’ নয়। জুলাই আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল? শাসক বিদায়। কাজেই প্রথম উদ্দেশ্য সফল। 

উদ্দেশ্য – ২

ভারতবিরোধিতা ও হিন্দু বিরোধিতা বাংলাদেশের চিরকালীন রাজনৈতিক পুঁজি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দখলদার প্রধান সেই হাওয়াতে চিকেন নেক, উত্তর পূর্ব রাজ্য, ২৬ লক্ষ ভারতীয়র বাংলাদেশে চাকরি করার গপ্পো দিয়ে উসকে দিতে পেরেছেন। চিন্ময় স্বামীকে জেলে রাখা, আওয়ামী সংযোগের অভিযোগে হিন্দুদের ঘর পোড়ানো, নরসুন্দর বাপ-বেটাকে ইসলাম অবমাননার দায়ে মেরে জেলে পাঠানো, হিন্দু নারী ধর্ষণ সবই এই বিরোধিতার ফসল। কাজেই দ্বিতীয় উদ্দেশ্য সফল। 

উদ্দেশ্য – ৩

মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, একাত্তর পাকিস্তানের সবচেয়ে অস্বস্তিকর জায়গা ছিল। নতুন শাসকদেরও তাই। বঙ্গবন্ধুর মুর্তির মাথায় প্রস্রাব করে মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরকে মুছে ফেলার সূত্রপাত। ৩২ নং ধানমন্ডি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ধ্বংস করে ইতিহাস মোছার বাধাহীন সাফল্য অবশ্যই এই জুলাই বিপ্লবের তৃতীয় উদ্দেশ্যসফল কীর্তি। 

উদ্দেশ্য – ৪

চতুর্থ উদ্দেশ্য সত্যিই মহান। ভারতের সাথে বানিজ্য ঘাটতি মেটানো। ভারত থেকে বাংলাদেশে যেত ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য যার বেশিটাই ছিল তুলো, সুতো ও পোশাক শিল্পের যন্ত্রাংশ। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসত ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য যার মধ্যে পোশাক, পাট ও প্লাস্টিকজাত পণ্য মুখ্য ছিল। যে তুলো, সুতো বা যন্ত্রাংশ যেত তার পরিমাণ ৬৫০ কোটি ডলার। সেগুলি পোশাক হয়ে ফিরত ভারতে ও ভারতের দেওয়া ফ্রি ট্রান্সশিপমেন্টে যেত ইউরোপ ও আমেরিকায়। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার ৮০ শতাংশ পূর্ণ হত পোশাক ব্যবসা থেকে। জুলাই আন্দোলনের বাজিগর ভারত থেকে তুলো, সুতো বা যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করেছে। বেশ করেছে। নিজেদের উৎপাদনের ক্ষমতা নেই বলে আমদানি করছে চিন থেকে ২৪% বেশি মূল্যে। এদিকে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট, স্থল বন্দর ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ ব্যবসাও বন্ধ। কিন্তু বানিজ্য ঘাটতি তো মিটেছে। 

উদ্দেশ্য – ৫

শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল তৈরি করে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের যে উন্নয়ণমুখী ভাবমুর্তি তৈরি করেছিলেন, এটা ঠিকই। কিন্তু বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা ছিল না। শাসনযন্ত্রের দমনপীড়ন ছিল। পাকিস্তান সংস্কৃতিতে বহু আগে সৃষ্ট অনুশাসনহীনতা, আইন-শৃঙ্খলা অমান্য করা, নারী নিপীড়ন, ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যার উত্তরাধিকার বাংলাদেশের কিছু মানুষ বহন করছিল। বহন করছিল দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার বীজ। ফলে বিদেশি শক্তির অর্থায়নে ও বুদ্ধিতে শেখ হাসিনা উৎখাতের উদ্দেশ্যর সার্থক রূপায়ন ঘটাতে সক্ষম হল। 

উদ্দেশ্য – ৬

পূর্বতন শাসককে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেও নির্বাচন পরীক্ষায় পাস করে নয়, বরং মৌলবাদী শক্তির সাহায্যে যতদিন সম্ভব ক্ষমতা কুক্ষিগত রকরে রাখাও এই আন্দোলনের একটি অপ্রকাশ্য উদ্দেশ্য ছিল। সেই উদ্দেশ্যসাধনে সম্পূর্ণ সফল জুলাই আন্দোলন। 

উদ্দেশ্য – ৭

নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র হজমিগুলি খাওয়ানো জুলাই আন্দোলনের নেতাকূলের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতার চিটেগুড় খেয়ে স্থুলতাপ্রাপ্তি। বাস্তববোধশূন্য কিছু ছাত্রনেতা ও তাদের পরিবার আজ দু’হাতে দেশকে লুটছে। কাজেই আন্দোলনের এই উদ্দেশ্যও সফল। যখন বিভিন্ন অঙ্গবিহীন জুলাই যোদ্ধাদের ছবি সোশাল মিডিয়াতে ভেসে আসে, তখন জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে এই মৌলবাদী অনুশাসনহীন অর্থনৈতিক নিম্নগামিতা দেখার জন্যে আপনারা রাজপথে নেমেছিলেন? উন্নত চিকিৎসা অবধি পান নি। সাহায্য ও ভাতার ঘোষনা শুনেছেন, কিন্তু হাতে পান নি। তাহলে আপনাদের দেশপ্রেম কোন পদ্মার জলে লাট খাচ্ছে? 

ভারতের প্রাপ্তিঃ 

জুলাই আন্দোলনের উদ্দেশ্যসফলতার কথা বললাম। এবার একটা ঘটনা বলি। ২০১৮ সালের মে মাসে, ভারত সফর থেকে ফিরে যাওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা শিরোনাম করেছিলো, "বাংলাদেশ ভারতের কাছে প্রতিদান চায়"। কেন? কারণ সেই সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চাপ দিয়েছিল। সেই সূত্র ধরে সাংবাদিক মনজুরুল আহাসান বুলবুল শেখ হাসিনার কাছে আনন্দবাজারের শিরোনামের সত্যতা জানতে চান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি তা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে। প্রতিদিনের বোমাবাজি গুলি থেকে আমরা তাদের শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে।‘ বাংলাদেশ সংবাদ মাধ্যম ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি তা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে।‘ এটাকে শিরোনাম করে বাংলাদেশ মিডিয়া ধোঁয়াশা ছড়ালো। কিন্তু পরের কথাটা অর্থাৎ শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স যে ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্যে শান্তি ফিরিয়েছিল, তার উল্লেখ বিশেষ ছিল না। কথাটা একশভাগ সত্যি ও গত দশ বছরে এটাই ভারতের প্রাপ্তি বাংলাদেশের কাছ থেকে। 

ভারতের পদক্ষেপঃ 

এর বাইরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের প্রাপ্তি শূণ্য। ফ্রি করিডোর, রেল সংযোগ কিছুই পায় নি। তাই ভারত এখন আগের মত নমনীয় অবস্থানে নেই। ফ্রি ট্রান্সশিপমেন্ট, ৭০ টি স্থল বন্দরে অবাধ পণ্য পারাপারের সুবিধা, বিনা পয়সায় ভারতের ওপর দিয়ে গ্রিডের মাধ্যমে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, সস্তায় ডিজেল ভারতের থেকে নেওয়া যা দিয়ে বাংলাদেশের ১১৭ টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, সব কিছুই বাংলাদেশের প্রাপ্ত সুবিধা ছিল যার বেশ কিছু ভারত তুলে নিয়েছে। বাকিগুলি তোলা সময়ের অপেক্ষা। ক্রমাগত ‘পুশ ইন’ বা সীমান্তে ভারতীয় অঞ্চলে প্রবেশ করলে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী গুলি চালাচ্ছে আত্মরক্ষার দোহাই দিয়ে। আগামী ২০২৬ এ গঙ্গা নদী চুক্তি। সেখানেও ভারত যে তাদের শর্তে নদীচুক্তি করবে তাও জানিয়ে দিয়েছে। এগুলি জুলাই আন্দোলনের ফলশ্রুতি। দেশ মানে কী? শাসক বিদায়? নাকি সর্বাঙ্গীন উন্নয়ণ? এই জুলাই আন্দোলন বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে যে বিভাজনের জন্ম দিয়েছে সেই রাস্তা থেকে ফিরতে অনেক সময় লাগবে। 

এ কেবল দিবা রাত্রে… 

বাংলাদেশ যে পিছাচ্ছে তা আজ অন্ধ সরকার সমর্থক ছাড়া সবাই বুঝতে পারছেন। জুলাই আন্দোলনে রাস্ট্রের নির্দেশে যেদিন থেকে গুলি চলেছিল সেদিনই সেটা আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে উঠেছিল। আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের প্রস্তাব এসেছিল। ভারতীয় জনসমাজ তার তীব্র নিন্দা করেছিল। আজ আজ? বাংলাদেশ নিয়ে বললেই সম্মিলিত হুক্কাধ্বনি শোনা যায়। মনে হয় - এ কেবল দিনে রাত্রে জল ঢেলে ফুটা পাত্রে বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে।

Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget