সচিবালয়ের কর্মচারিদের কান্না, আমলাতন্ত্রের গদগদ হাঁসি

"আনুগত্য না করলে চাকরি বাতিল! সচিবালয়ের কর্মচারিদের কান্না, আমলাতন্ত্রের গদগদ হাঁসি"

মূল লেখা:

গত কয়েকদিন ধরে সচিবালয় এলাকায় কিছুটা ভিন্ন দৃশ্য। ফাইলপত্রে ধুলার আস্তরণ জমছে, টাইপরাইটারের আওয়াজ কমে গেছে, আর ক্যান্টিনের চায়ের কাপে ঠোঁট না ছুঁইতেই কর্মচারিরা রাস্তায়। হ্যাঁ, সচিবালয়ের কর্মচারিরা আন্দোলন করছে।

কেন করছে?
কারণ সরকার ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামের এক অদ্ভুত এবং ভয়ানক ক্ষমতাসম্পন্ন আইন পাস করেছে। এই আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো কর্মচারী ‘অনানুগত্য’ দেখায়, তবে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারণ বা বেতন কেটে দেওয়া যাবে।

এখানেই প্রশ্ন—
১. আনুগত্য বলতে কাকে বুঝানো হচ্ছে?
২. সেই আনুগত্যের সীমারেখা কী?

উত্তর বেশ সোজা—এখানে ‘আনুগত্য’ মানে উর্ধ্বতন ক্যাডার অফিসারদের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য। আপনি যদি একজন ২য়, ৩য় বা ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হন, তাহলে আপনার জন্য এখন থেকে ক্যাডার অফিসারের মুখের কথাই হবে আইন। তার "না" মানেই আপনার "না" বলা যাবে না।

একটা উদাহরণ দেই—
ধরেন, এক সিনিয়র অফিসার বললেন, “আমার কলমটা খুঁজে দাও।” আপনি বললেন, “স্যার, কলম তো আপনার পকেটেই।”
এটাই হতে পারে আপনার “অনানুগত্য।” পরদিন দেখবেন, অফিসে ঢুকতেই গার্ড বলছে, “স্যার, আপনার চাকরি তো কাল রাতেই গায়েব হয়ে গেছে!”

এই আইনের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, ‘আনুগত্য’ শব্দটির সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। মানে—উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মেজাজ খারাপ? আপনি বিপদে।

আরো ভয়াবহ উদাহরণ—
ধরেন, এক পুলিশ সদস্যকে বলা হলো, “গুলিবর্ষণ করো।”
তিনি বললেন, “না, স্যার, ওরা তো নিরস্ত্র।”
ব্যস! তাকে চাকরি থেকে তৎক্ষণাৎ বিদায় জানানো হতে পারে এই আইনের বলে।

এই আইনকে ঘিরেই এখন সচিবালয়ের ১০ম-২০তম গ্রেডের কর্মচারিরা রাস্তায়।
তবে আশ্চর্যের ব্যাপার—১ম থেকে ৯ম গ্রেডের সিনিয়র ক্যাডাররা কিন্তু চুপ।
কারণ এই আইনে তাদেরই সুপার পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। মানে তারা এখন আধা-রাজা।

প্রশ্ন হলো—
ইউনুস সরকার হঠাৎ আমলাদের এত সুপ্রিম পাওয়ার দিয়ে কী বোঝাতে চায়?
সম্ভবত এতোদিন আমলারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এবার সরকার তাদের কিনে নিচ্ছে—ক্ষমতা দিয়ে, সুবিধা দিয়ে, কিংবা "খুব মিষ্টি হাসি দিয়ে!"

আন্দোলনকারীরা এখন শুধু বেতন, পদোন্নতি না—নিয়োজিত হয়েছে নিজের স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে।
আর কিছু অতি উৎসাহী "জাতীয় প্রপাগান্ডা বাহিনী" এখন এই আন্দোলনকে বলছে,
"ফ্যাসিস্ট", "ভারতের দালাল", "আওয়ামী চেতনার বিরোধিতা"—ইত্যাদি ইত্যাদি!
আরে ভাই, আন্দোলনকারীরা চাকরি বাঁচাতে নেমেছে, দালালি করতে না!

সুতরাং,
এই আন্দোলনের প্রতি কেউ হাসবেন না, বরং ভাবুন—
কালকে যদি সরকারি চাকরিতে ঢুকেন, আপনি হবেন এই আইনের ভুক্তভোগী!

---

শেষ কথাঃ
"চাকরি চাইলে মাথা নিচু করো, অন্যথায় মাথা নিচু করিয়ে দেওয়া হবে!"
এই তো হল ‘নতুন স্বর্ণযুগের’ চাকরিবিধি।

সোর্স: এফবি

Post a Comment

Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

[blogger]

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget