ঐকমত্যে ব্যর্থ অধিকাংশ দল, দ্বিতীয় পর্যায়ে সমাধানের আশা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা সেসব বিষয়ে ঐক্যমত্যের আশা করছে কমিশনে। এছাড়া সংবিধান সংস্কার নাকি পুনর্লিখন, সেসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দল নেবে।
তিনি বলেন, মে মাসের শেষ বা জুনের শুরুতে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করে জুলাইয়েই জাতীয় সনদ দিতে চায় কমিশন।
সোমবার (২৬ মে) বিকেল তিনটায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা রোধে গঠিত ঐকমত্য কমিশন প্রথম পর্যায়ে ৪৫ অধিবেশনে আলোচনা করেছে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। এর পর আনুষ্ঠানিক এই ব্রিফিং করলো কমিশন।
এদিন কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ জানান, প্রধান প্রধান যেসব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে, সেসব নিয়ে সব দল নিয়ে এক টেবিলে বসে কমিশন আলোচনা করবে। সংবিধান সংস্কার না পুনর্লিখন, সে সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিতে হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, প্রস্তাবিত সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু বিষয়ে জনগণের মতামত জানতে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে জরিপ পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আলী রীয়াজ জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা রদ করে আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। প্রবীণতম তিন জন বিচারকের মধ্য থেকে একজনকে বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো একমত জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত। কিছু দল এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাই চাইছে। আর সবাই ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধী দল থেকে নির্বাচনের পক্ষে।
৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পক্ষে সবাই একমত হলেও কী কী বিষয়ে ভোট দিতে পারবেন সংসদ সদস্যরা তা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি বলে জানান কমিশনের সহ সভাপতি।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, কতো বার নির্বাচিত হতে পারবেন, একই ব্যক্তি কতো বার প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান, সংসদ নেতা হতে পারবেন, এনসিসি গঠন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদসহ কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। তাছাড়া তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর সংশোধন নিয়ে সবাই একমত হয়েছেন। পাশাপাশি অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ সংশোধনের বিষয়ে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
দেশের পুরাতন চার বিভাগকে চার প্রদেশে বিভক্ত করা, বিদ্যমান জেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল, ওয়ার্ড সদস্যদের ভোটে পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাবে একমত হওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক দল ছাড়াও সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কমিশন একাধিক দিন আলোচনা করেছে। তাছাড়াও আরও আলোচনা পরিকল্পনা আছে বলেও জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি।
সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কিংবা শপথ ভঙ্গ করলে কমিশনারদের মেয়াদ পরবর্তী সময়ে উত্থাপিত অভিযোগ প্রস্তাবিত সংসদীয় কমিটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর বিধান করার ব্যাপারে বেশিরভাগ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বলে জানান তিনি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখার লক্ষে মানবতাবিরোধী আইন ও আরপিও সংশোধন করার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো। এর আইনি দিক বিবেচনার অধিকাংশ দল গুরুত্ব দিয়েছে।
দলগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে বলেও জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি।
একাত্তর/এসি
https://ekattor.tv/78388
Post a Comment