May 2025
১৮জুলাই ৩৬ জুলাই Bangladesh Bangladesh Politics bangladeshi BangladeshPolitics bd BreakingNews CNP24 Current News Bangladesh EARNINGS Google Pay Hasnat Abdullah International mahathir mohamad National NCP NID NID CORRECTION Scholarship অতিরিক্ত ম্যানেজমেন্ট অধ্যাপক আবুল বারকাত অনলাইন আবেদন অন্তর্বর্তী সরকার অফিস অফিস জব অফিস পলিটিক্স অর্থনীতিবিদ আধুনিক গান আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন আবুল বারাকাত আযান কবিতা আর্টিকেল আল মাহমুদ ইউনুস ইউরোপ ইরান ইসরায়েল ইসলাম ইসলামী জীবন ইসলামী রাজনীতি উকিল নোটিশ উচ্চতা উচ্চশিক্ষা উপন্যাস এক টাকায় রোগী দেখেন এনআইডি এনআইডি সংশোধন এনআইডি হালনাগাদ এনসিপি এন্ড্রোকিশোর এমবিবিএস ঐক্যমত ওয়াকার-উজ-জামান কবি আল মাহমুদ করোনা করোনাভাইরাস কাঠ কাঠের হিসাব গল্প গাজা গাজাবাসী গান গুগল পে গোপালগঞ্জ ট্র্যাজেডি গোল কাঠের হিসাব গ্রামীণ ব্যাংকে ঘুম চাহিদা চেয়ারম্যান জনতা ব্যাংক চেরাই কাঠের মাপ চৈত্রিকা ছোট গল্প জব জাতীয় সংবাদ জিপে জীবনযাপন জুলাই আন্দোলন জুলাই বিপ্লব জেনারেলওয়াকার জ্ঞান টিউলিপ সিদ্দিক টেক নিউজ ড. ইউনুস ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ড. মুহাম্মদ ইউনুস ডক্টর ইউনূসকে টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি তথ্যপ্রযুক্তি তুষার তুষার কান্ড তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দক্ষতা দাম্পত্য জীবন দুর্নীতি দূতাবাস দ্য ইকোনমিস্ট ধর্ম জীবন ধর্মভিত্তিক দল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ধারাবাহিক উপন্যাস ধৈর্য নতুন পলাশীর প্রান্তর নারী নারীর যৌনতা নিউরালিংক নিউরালিংক কি? নিউরালিংক কীভাবে কাজ করে নিষ্ঠাবান কর্মি নীল রক্ত নোটিশ নোবেল নোংরা রাজনীতি পরকীয়া পরমতসহিষ্ণুতা পরীক্ষার ভাইভা প্রস্তুতি পরোপকারী পারমাণবিক প্রধান উপদেষ্টা প্রযুক্তি প্রেম প্রেম ল ফিলিস্তিন বন্দী পাখি বাংলা গান বাংলাদেশ বাংলাদেশরাজনীতি বাংলাদেশে জিপে বিচার বিভাগ বিচ্ছেদ বিদেশ বিদ্যুৎ বিয়ে বিরহ বিশ্ব সংবাদ বিশ্বযুদ্ধ বিস্ময়কর প্রতিভা ব্যাক্তিত্ব ভাইভা ভাইরাল নিউজ ভারত নিউজ ভারতের প্রেসিডেন্ট ভালোবাসা মন বাড়িয়ে ছুঁই মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার কমিশন ঢাকা মানবিকতা মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ মীর মুগ্ধ মৃত্যু ও হিংস্রতা মেঘকন্যা ম্যানেজমেন্ট যৌন নির্যাতন রক্তাক্ত বাংলাদেশ রাজনীতি রাজনৈতিকসংকট রাজাকার রাতের ইবাদত রাতের ঘুম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লাইফ পার্টনার লাভ বোম্বিং শহীদ জিয়া শিক্ষা শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু সখের নারী সঙ্গীত সচিবালয় সন্তানকে অভাব চিনতে শিখান সময় মতো ঘুম সম্পর্ক সহিষ্ণুতা সাইলেন্ট ডিভোর্স সাংবাদিক সাংবাদিক ইউনিয়ন সাহিত্য সিম কার্ড সিমের রেজিস্ট্রেশন সিমের রেজিস্ট্রেশন বাতিল সীমিত চাহিদা সুন্দর জীবন সুস্থ জীবন সেনাবাহিনী সোনার খাঁচা স্ত্রী স্বামী স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ স্মার্টনেস হারানো সিম হিংস্র রাজনীতি হিংস্রতা

"তোমার মুঠোফোনই হোক তোমার অস্ত্র,
তোমার কণ্ঠ হোক গর্জে ওঠা বুলেট।
তুমি স্থান করে নেবে মানুষের হৃদয়ে।
তোমার কথায় উঠবে প্রতিবাদ,
মানুষ নামবে রাস্তায়, শুরু হবে বিপ্লব।"

সকালের সূর্য তখনো ঢেকেই আছে মেঘে। ঢাকা শহরের এক কোণে বসে আছে তরুণ ছেলেটা—নাম তার অপূর্ব। গায়ে সস্তা শার্ট, হাতে পুরনো ফোন। সারারাত ঘুম হয়নি। দেশের খবর দেখেছে, নেতাদের নিয়ে বিতর্ক, জনতার কান্না, সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড়। অপূর্বর মনে প্রশ্ন—“এই দেশ কি আর বদলাবে না?”

তার পাশের দোকানে বয়স্ক এক চা-ওয়ালা বসে। নাম জাহিদ কাকা। মুখে হালকা হাসি, চোখে অভিজ্ঞতার ছাপ।
অপূর্ব জিজ্ঞেস করল,
— “কাকা, এত বছর তো দেখলেন… কিচ্ছু কি বদলায় না?”
জাহিদ কাকা হালকা চুমুক দিয়ে বললেন,
— “বদলায়। তবে সেটা নেতা বদলালেই হয় না, বদলাতে হয় মানুষকে।”

অপূর্ব অবাক।
— “মানুষ কিভাবে বদলাবে?”
— “যেমন তুমি বদলাচ্ছো। তুমি এখনো হাল ছাড়ো নাই, খুঁজছো, জানছো, প্রশ্ন করছো। এটা একটা বিপ্লব, মন থেকে শুরু হওয়া বিপ্লব।”

জাহিদ কাকা চুপ করে গেলেন। তারপর আস্তে বললেন,
— “দেখো বাবা, একটা সময় ছিল, কেউ সত্য বললেই সে গায়েব হয়ে যেত। মিডিয়াগুলো ছিল পুতুল, আর নেতা ছিল রাজা। কিন্তু এখন? এক মোবাইল ক্যামেরাই অনেক কিছু বদলে দিচ্ছে।”

অপূর্বর চোখ চকচক করে উঠল।
সে বুঝল, এই যে সে প্রতিবাদ করে, কথা বলে, অন্যায়ের ভিডিও শেয়ার করে—এটাই বদলানোর শুরু।

সে ভাবল,
“নেতারা আসে যায়। কেউ চাঁদাবাজি করে, কেউ দেশের টাকা পাচার করে। কেউ খাল কেটে কুমির আনে, আবার সেই কুমিরেই নিজেই হারিয়ে যায়।
কিন্তু যারা সত্যি আলোর মানুষ, তারা কি চিরদিন ক্ষমতায় থাকে না—তা-ই বা কে বলল?
ভালো মানুষরা আসে, শুধু একটু দেরি করে।
আর আমরা যদি না হাল ছাড়ি, সেই আলোর পথ ঠিকই তৈরি হবে।”

সেদিন থেকে অপূর্বর দিন বদলে গেল।
সে এখন শুধু ট্রল বা ভাইরাল ভিডিও দেখে না—নিজেই ভিডিও বানায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, সত্য তুলে ধরে।
সে এখন জানে,
“ক্ষমতা থাক বা না থাক, সত্যের পাশে দাঁড়ানোই আসল নেতৃত্ব।
আর সে নেতৃত্ব শুরু হয় নিজের ভেতর থেকে।”

সেদিন চায়ের দোকানের পাশ থেকে এক আলো ছড়িয়ে পড়েছিল।
নেতারা তখনও লুকোচ্ছে ক্যামেরার ভয়েই,
আর অপূর্বর মতো ছেলেরা হয়ে উঠছিল আলোর যোদ্ধা।

কারণ, ছায়ার নেতারা কতদিনই বা থাকবে?
আলো একদিন ঠিকই জ্বলে উঠবে।
তুমি যদি হাল না ছাড়ো।

তোমার মুঠোফোনই হোক তোমার অ*স্ত্র,
তোমার কণ্ঠ হোক গর্জে ওঠা বু*লেট।
তুমি স্থান করে নেবে মানুষের হৃদয়ে।
তোমার কথায় উঠবে প্রতিবাদ,
মানুষ নামবে রাস্তায়, শুরু হবে বিপ্লব।

শুধু একটা শর্ত—তুমি হতে হবে সত্যের পক্ষের।
আর যদি ওরা হয় মিথ্যা, লোভী, অত্যাচারী,
তবে আর দেরি কিসের? শুরু করো আজই!

আমরাই শক্তি।
আমরাই দেশের পাহারাদার।
আমাদের চোখ খোলা, কণ্ঠ জাগ্রত, হৃদয় দুর্ভেদ্য।
সত্যের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে—আমরাই আলো।

#বাংলাদেশ #Bangladesh #bangladeshi #BD #BNP #BNPNEWS #eid #TarequeRahman


গাজাবাসীর কান্না স্বর্গে পৌঁছে যাচ্ছে: পোপ লিও

আন্তর্জাতিক | 28th May, 2025 7:51 pm



অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ লিও। তিনি বলেন, গাজায় হামলায় শিকার শিশু ও বাবা-মায়েদের কান্না স্বর্গে পৌঁছে যাচ্ছে।

বুধবার (২৮ মে) সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে এক সভায় তিনি গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে এসব কথা বলেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ‘পূর্ণ সম্মান’ প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, গাজা উপত্যকায় মৃত সন্তানদের শরীর ধরে থাকা বাবা-মায়েদের কান্না ক্রমেই স্বর্গে পৌঁছে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দায়িত্বশীলদের প্রতি আমার অনুরোধ, লড়াই বন্ধ করুন এবং সকল জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করুন। মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন।

গত ৮ মে নির্বাচিত হয়ে পোপ ফ্রান্সিসের স্থলাভিষিক্ত হন পোপ লিও। সভায় তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের আবেদনও জানান।

এদিকে গাজায় ‘গণহত্যা’ চালানোর দায়ে ইসরায়েল সরকার ও মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ৮০০ জনের বেশি আইনজীবী, শিক্ষক ও সাবেক বিচারপতি।

চিঠিতে ইসরায়েলের সংঘটিত ‘আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন’ বন্ধে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। খোলা চিঠিতে বলা হয়, গাজায় গণহত্যা চালানো হচ্ছে। সেখানে গণহত্যার একটি গুরুতর ঝুঁকি বিদ্যমান।

এতে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজাবাসীর নিশ্চিহ্ন হওয়া ঠেকাতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট ও অন্যান্য আদালতের সাবেক বিচারপতিসহ বিশিষ্ট আইনজীবীরা চিঠিতে সই করেছেন।

সোর্স: যমুনা টিভি

"আনুগত্য না করলে চাকরি বাতিল! সচিবালয়ের কর্মচারিদের কান্না, আমলাতন্ত্রের গদগদ হাঁসি"

মূল লেখা:

গত কয়েকদিন ধরে সচিবালয় এলাকায় কিছুটা ভিন্ন দৃশ্য। ফাইলপত্রে ধুলার আস্তরণ জমছে, টাইপরাইটারের আওয়াজ কমে গেছে, আর ক্যান্টিনের চায়ের কাপে ঠোঁট না ছুঁইতেই কর্মচারিরা রাস্তায়। হ্যাঁ, সচিবালয়ের কর্মচারিরা আন্দোলন করছে।

কেন করছে?
কারণ সরকার ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামের এক অদ্ভুত এবং ভয়ানক ক্ষমতাসম্পন্ন আইন পাস করেছে। এই আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো কর্মচারী ‘অনানুগত্য’ দেখায়, তবে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারণ বা বেতন কেটে দেওয়া যাবে।

এখানেই প্রশ্ন—
১. আনুগত্য বলতে কাকে বুঝানো হচ্ছে?
২. সেই আনুগত্যের সীমারেখা কী?

উত্তর বেশ সোজা—এখানে ‘আনুগত্য’ মানে উর্ধ্বতন ক্যাডার অফিসারদের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য। আপনি যদি একজন ২য়, ৩য় বা ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হন, তাহলে আপনার জন্য এখন থেকে ক্যাডার অফিসারের মুখের কথাই হবে আইন। তার "না" মানেই আপনার "না" বলা যাবে না।

একটা উদাহরণ দেই—
ধরেন, এক সিনিয়র অফিসার বললেন, “আমার কলমটা খুঁজে দাও।” আপনি বললেন, “স্যার, কলম তো আপনার পকেটেই।”
এটাই হতে পারে আপনার “অনানুগত্য।” পরদিন দেখবেন, অফিসে ঢুকতেই গার্ড বলছে, “স্যার, আপনার চাকরি তো কাল রাতেই গায়েব হয়ে গেছে!”

এই আইনের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, ‘আনুগত্য’ শব্দটির সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। মানে—উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মেজাজ খারাপ? আপনি বিপদে।

আরো ভয়াবহ উদাহরণ—
ধরেন, এক পুলিশ সদস্যকে বলা হলো, “গুলিবর্ষণ করো।”
তিনি বললেন, “না, স্যার, ওরা তো নিরস্ত্র।”
ব্যস! তাকে চাকরি থেকে তৎক্ষণাৎ বিদায় জানানো হতে পারে এই আইনের বলে।

এই আইনকে ঘিরেই এখন সচিবালয়ের ১০ম-২০তম গ্রেডের কর্মচারিরা রাস্তায়।
তবে আশ্চর্যের ব্যাপার—১ম থেকে ৯ম গ্রেডের সিনিয়র ক্যাডাররা কিন্তু চুপ।
কারণ এই আইনে তাদেরই সুপার পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। মানে তারা এখন আধা-রাজা।

প্রশ্ন হলো—
ইউনুস সরকার হঠাৎ আমলাদের এত সুপ্রিম পাওয়ার দিয়ে কী বোঝাতে চায়?
সম্ভবত এতোদিন আমলারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এবার সরকার তাদের কিনে নিচ্ছে—ক্ষমতা দিয়ে, সুবিধা দিয়ে, কিংবা "খুব মিষ্টি হাসি দিয়ে!"

আন্দোলনকারীরা এখন শুধু বেতন, পদোন্নতি না—নিয়োজিত হয়েছে নিজের স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে।
আর কিছু অতি উৎসাহী "জাতীয় প্রপাগান্ডা বাহিনী" এখন এই আন্দোলনকে বলছে,
"ফ্যাসিস্ট", "ভারতের দালাল", "আওয়ামী চেতনার বিরোধিতা"—ইত্যাদি ইত্যাদি!
আরে ভাই, আন্দোলনকারীরা চাকরি বাঁচাতে নেমেছে, দালালি করতে না!

সুতরাং,
এই আন্দোলনের প্রতি কেউ হাসবেন না, বরং ভাবুন—
কালকে যদি সরকারি চাকরিতে ঢুকেন, আপনি হবেন এই আইনের ভুক্তভোগী!

---

শেষ কথাঃ
"চাকরি চাইলে মাথা নিচু করো, অন্যথায় মাথা নিচু করিয়ে দেওয়া হবে!"
এই তো হল ‘নতুন স্বর্ণযুগের’ চাকরিবিধি।

সোর্স: এফবি

কুখ্যাত রাজাকার এটিএম আজহারকে মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস দিয়েছে ইউনুসের ক্যাঙ্গারু কোর্ট।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কুখ্যাত এই রাজাকারকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ ও হুমকি দিয়ে আসছিল জামায়াত।

১৯৭১-এ আজহার জামায়াতের সে সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। পদাধিকার বলেই আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার ছিলেন তিনি, যে বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম দমনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য। আজহারের বিরুদ্ধে ছয়টি গুরুতর মানবতাবিরোধী অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের মধ্যে দুটি গণহ'ত্যা, একটি ধ'র্ষণ, চারটি হ'ত্যা এবং অ'পহরণ, আটক, নি'র্যাতনের তিন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমানিত। 

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃ'ত্যুদণ্ড দেয়, যা ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ বহাল রাখে। রায় বহাল রাখলে এলাকায় খুশির মাতন উঠে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ১:

১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর শাখার সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাসানী (ন্যাপ নেতা) ও রংপুর শহরের আয়কর আইনজীবী এ ওয়াই মাহফুজ আলী ওরফে জররেজ মিয়াসহ ১১ জনকে অ'পহরণ করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সাতদিন আটক রেখে নি'র্যাতন চালানো হয়। এরপর ৩ এপ্রিল তাদের রংপুর শহরের দখিগঞ্জ শ্মশানে নিয়ে ব্রাশফা'য়ার করে হ'ত্যা করে আজহারের লোকজন। এ সময় দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে মন্টু ডাক্তার আহত হলেও বেঁচে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার শরীরে সেই গুলির জখম ছিল।

অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আজহার ট্রেনে করে নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ট্যাক্সেরহাট রেলগুমটিতে যান। সেখান থেকে ধাপপাড়া যাওয়ার পথে দুই পাশের একাধিক গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায় তারা। ধাপপাড়ায় পৌঁছে তারা মোকসেদপুর গ্রামে গুলি চালিয়ে ১৪ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে হ'ত্যা করে।

অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল দুপুর ১২টা থেকে ৫টার মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আজহারুল ইসলাম রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিলের আশেপাশের গ্রামে হামলা চালিয়ে এক হাজার দুইশর বেশি নিরীহ হিন্দু গ্রামবাসীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এছাড়া আরো অন্তত দুইশ’ লোককে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এছাড়া গ্রামগুলোর বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে তারা।

অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে বদর বাহিনীর সদস্য ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর শাখার সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলাম কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপকের স্ত্রীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গু'লি করে হ'ত্যা করে।

অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর শাখার সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যরা এবং স্থানীয় বিহারীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনের তথ্য সংগ্রহ করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করত। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা অনেক পরিবারের সদস্যদের অ'পহরণ, আটক ও নি'র্যাতন চালানো হয়। ওই সময়ের মধ্যে রংপুর শহর এবং আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মনসুরা খাতুনসহ অসংখ্য নারীকে ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধ'র্ষণসহ শা'রীরিক নি'র্যাতন চালানো হয়।

অভিযোগ ৬: একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় শওকত হোসেন রাঙাকে নির্যাতন করেন অভিযুক্ত এটিএম আজহার। এরপর রাঙার ভাই ও ছাত্রলীগের কারমাইকেল কলেজ শাখার ছাত্রলীগ কর্মী রফিকুল হাসান নান্নুকে রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে অ'পহরণ করে রংপুর কলেজের শহীদ মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন ও জখম করা হয়। পরে নাসিম ওসমান নামের এক অবাঙালির সহায়তায় নান্নুকে ছাড়িয়ে আনেন তার বড়ভাই সাজ্জাদ জহির।

জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে এটিএম আজহারের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দলটি রাজধানীর পল্টনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত এই বিষয়ে আরও সোচ্চার হয়েছে। দলের আমির ড. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা ইউনুস প্রশাসনের কাছে আজহারের মুক্তি ও দলের নিবন্ধন পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।

বর্তমানের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এর চীফ প্রসিকিউটর (রাজাকার গোলাম আযমের আইনজীবী) এর হস্তক্ষেপে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত এটিএম আজহারের রিভিউ আবেদনের ওপর আপিল শুনানির অনুমতি দেয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা এটাই প্রথম কোনো মামলা যে মামলায় রিভিউ থেকে মূল আপিল শুনানির অনুমতি দিয়েছিল আদালত।

প্রথম দিনের আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ বেঞ্চ পরবর্তী শুনানির জন্য আদেশ দেন।

আজকের শুনানিতে তার মৃত্যুদন্ড রায় থেকে খালাস দিয়েছে ইউনুসের ক্যাঙ্গারু কোর্ট। মূলত ইউনুসের সাথে এসব ডিল অনেক আগেই হয়েছে। এখন শুধু সুযোগ বুঝে খোপ মেরেছে।
সোর্স: এফবি


৫৪ বছরে বাংলাদেশ ভারতকে কী সুবিধা দিয়েছে, কতটা পেয়েছে

স্বাধীনতার পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের করা প্রথম চুক্তিটি ছিল ২৫ বছর মেয়াদি মৈত্রী চুক্তি। এর পরপরই হয় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি। দুই দেশের মধ্যকার এই বাণিজ্য চুক্তি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য ছিল। বলা যায়, ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক দ্রুতগতিতে এগিয়েছে। আবার একই সঙ্গে সেই সময়টা ছিল চোরাচালানের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। আর এতে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার পর ফারাক্কা বাঁধসহ নানা বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। এরশাদ আমলে অবশ্য সম্পর্কের মধ্যে উত্থান-পতন ছিল কম। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আবারও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। এ সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অনেক ধরনের অগ্রগতি দেখা দেয়। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমর্থনও পেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আবারও টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। বাণিজ্যব্যবস্থা নিয়ে পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে অর্থনীতিতে। তবে এর প্রভাব শেষ পর্যন্ত কত দূর পর্যন্ত গড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এবার দেখা যাক গত ৫৪ বছরে দুই দেশ অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কত ধরনের চুক্তি ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য টাইমলাইন (১৯৭২-২০২৫)

শওকত হোসেনঢাকা

১৯ মার্চ ১৯৭২, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের ভূমিকাকে স্বীকৃতি ও কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি সই হয়। এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে ২৫ বছরের একটি কৌশলগত ও কূটনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি। প্রাথমিকভাবে ২৫ বছরের জন্য চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। মেয়াদ শেষে ১৯৯৭ সালে এই চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে নবায়ন করা হয়নি।

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য প্রথম কৌশলগত বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি। যদিও এ চুক্তিকে ‘ভারতের আধিপত্যবাদ’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বলেও সমালোচনা আছে।

২৮ মার্চ ১৯৭২, প্রথম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রথম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয় ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ। এ নিয়ে ২৯ ও ৩০ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম বাণিজ্য চুক্তি অনুসারে উভয় দেশ আন্তর্জাতিক সীমানার ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে পণ্যসামগ্রী বিনিময় করবে এবং ট্রানজিট–সুবিধা পাবে। চুক্তিটি এক বছর মেয়াদের জন্য, তবে ছয় মাস পরে দুই দেশ বাস্তবায়ন পুনর্বিবেচনা করবে। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী এবং ভারতের পক্ষে বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী এল এন মিশ্র।

চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে আগামী এক বছরে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের বাণিজ্য অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে আমদানি করবে মাছ, কাঁচা পাট, ফারনেস অয়েল, ন্যাপথাল, জুট ব্যাচিং অয়েল, আধা পাকা গরুর চামড়া, সিল্কের সুতা, তাঁতের তৈরি সুতি দ্রব্য, গুড়, আয়ুর্বেদীয় ওষুধ এবং বইপুস্তক ও সাময়িক পত্রপত্রিকা। ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করবে সিমেন্ট, অ্যাসফল্ট, স্টোন, জিপসাম, লাইমস্টোন, তুলার সুতা, কেমিক্যাল ও ওষুধপত্র, মসলা, তামাক, যন্ত্রের খুচরা অংশ, বইপুস্তক ও সাময়িক পত্রপত্রিকা।

ভারত–বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যগ্রাফিক্স: প্রথম আলো

১ নভেম্বর ১৯৭২, প্রথম অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন চুক্তি

ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট ও ট্রেড প্রোটোকল চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহার করে পারস্পরিক বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনের জন্য একটি কাঠামো স্থাপন করে। এ কাঠামো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

১৯৭২ সালের ২ নভেম্বর এ বিষয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ভারত প্রথম বাণিজ্য চুক্তির আলোকে নতুন নৌপরিবহন চুক্তি সই করা হয়। চুক্তিটি প্রথম পর্যায়ে পাঁচ বছর স্থায়ী হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নদীপথে ভারত চলাচল ও পরিবহনের সুবিধা লাভ করবে, যা ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ করা হয়েছিল।

ভারতের পরিবহন ও জাহাজ চলাচল দপ্তরের সচিব পিমপুংকর এবং বাংলাদেশের নৌচলাচল সচিব সুলতানুজ্জামান চুক্তিতে সই করেন। এই চুক্তির ফলে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন এবং নদীপথে পণ্যসামগ্রী পরিবহনের ব্যবস্থা হবে।

প্রসঙ্গত, এই প্রোটোকল পরে নবায়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যেমন ২০১৫ সালে এটি পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হয় এবং পরে ২০২০ সালের ২০ মে দ্বিতীয় সংযোজন সই করা হয়। এর মাধ্যমে নতুন রুট ও পোর্ট অব কল যুক্ত করা হয়।

৫ জুলাই ১৯৭৩, ৩ বছর মেয়াদি বাণিজ্য চুক্তি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিন বছর মেয়াদি একটি বাণিজ্য চুক্তি সই হয় ঢাকাতেই। বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও অধ্যাপক ডি পি চট্টোপাধ্যায় দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সই করেন।

এ নিয়ে ৬ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তির অধীনে প্রথম বছর সাড়ে ৩০ কোটি টাকা করে মোট ৬১ কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী উভয় দেশের মধ্যে বিনিময় করা হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে চুক্তি কার্যকর হবে এবং প্রতি ছয় মাস পরপর চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে উভয় দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের মন্ত্রী জানান, নতুন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ভারতে ২০ কোটি টাকার কাঁচা পাট, সাড়ে ৪ কোটি টাকার নিউজপ্রিন্ট, সাড়ে ৩ কোটি টাকার শুঁটকি ও তাজা মাছ, ১ কোটি টাকার চামড়া, ২২ লাখ টাকার সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন, ৫ লাখ টাকার আয়ুর্বেদী ও ইউনানি ওষুধ, ১০ লাখ টাকার ছায়াছবি, ৫ লাখ টাকার শিমুল তুলা, ৫ লাখ টাকার ওষুধ, ৫ লাখ টাকার মসলা এবং আরও ১ কোটি টাকার বিবিধ পণ্য রপ্তানি করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৬ কোটি টাকার কয়লা, ৫ কোটি ২০ লাখ টাকার কাঁচা তামাক, সাড়ে ৭ কোটি টাকার তুলা, ২ কোটি টাকার সুতা, ১ কোটি টাকার টেক্সটাইল সুতা, ২২ লাখ টাকার সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন, ১০ লাখ টাকার ছায়াছবি ছাড়াও খুচরা যন্ত্রাংশ, কেমিক্যাল, টুথব্রাশ, যন্ত্রপাতি, বাইসাইকেল, মসলা ইত্যাদি আমদানি করবে।

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪, ট্রেড অ্যান্ড পেমেন্টস অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রেড অ্যান্ড পেমেন্টস অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি (টিপিএ) সই হয় ১৯৭৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য ও অর্থ পরিশোধ (ব্যালান্স ট্রেড অ্যান্ড পেমেন্ট অ্যারেঞ্জমেন্ট) ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে। এর মাধ্যমে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে একটি ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট পরিচালনার ব্যবস্থা চালু হয়, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পরপর বাণিজ্যিক লেনদেনের হিসাব মেলানো হতো।

পরে ১৯৭৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর একটি প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে রুপিভিত্তিক বাণিজ্য বাতিল করে মুক্ত রূপান্তরযোগ্য মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ADVERTISEMENT

১৭ ডিসেম্বর ১৯৭৪, রুপিবাণিজ্য বন্ধ ও মুদ্রা রূপান্তর

প্রোটোকলটি ১৯৭৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সই হলেও কার্যকর হয় পরের বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। এই প্রোটোকলের মাধ্যমে রুপিভিত্তিক বাণিজ্য বাতিল করে মুক্ত রূপান্তরযোগ্য মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। দিল্লিতে বাংলাদেশের বাণিজ্যযন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমেদ ও ভারতে বাণিজ্যমন্ত্রী দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় চুক্তিতে সই করেছিলেন।

১৯৭৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক সংবাদে এটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ও ভারত বর্তমান টাকায় বাণিজ্যের বদলে ১লা জানুয়ারি থেকে অবাধ বিনিময়যোগ্য মুদ্রার বাণিজ্য করতে একমত হয়েছে। টাকার বাণিজ্যের মেয়াদ ছিল আরও আঠারো মাস। ১৯৭৩ সালের ৫ই জুলাই স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তির অধীনে বর্তমান সুষম বাণিজ্য ও দায় পরিশোধ ব্যবস্থা ১৯৭৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত টাকায় কার্যকর থাকার কথা ছিল। টাকায় এই বাণিজ্য ব্যবস্থাতেই পরিবর্তন আনা হয়।’ খসড়া চুক্তিতে স্বাক্ষর দেওয়ার পর ভারতে বাণিজ্যমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, টাকার বাণিজ্যিক লেনদেনে উভয় দেশে সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি খাতের যে অনীহা রয়ে গেছে, যার ফলে বাণিজ্যে আকাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি, সে কারণে বিনিময় পদ্ধতি পাল্টানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।

১২ জানুয়ারি ১৯৭৬, পরবর্তী বাণিজ্য প্রোটোকল

আওয়ামী লীগ সরকার আর নেই। নতুন সরকারের সময় সম্পর্ক অনেকটা তিক্ত হয়েছে। কমে গেছে পারস্পরিক বাণিজ্য। এ অবস্থায় সম্পর্ক উন্নয়ন, বিশেষ করে বাণিজ্য বাড়াতে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য তৎকালীন বাণিজ্যসচিব নুরুল ইসলাম ভারত সফর করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ছয় দিন আলোচনা শেষে একটি সম্মত কার্যবিবরণীতে সই করেছিলেন। আলোচনায় ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য সচিব ড. পি সি আলেকজান্ডার। এ সময় কয়লা ও নিউজপ্রিন্টের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়।

৪ অক্টোবর ১৯৮০, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন

মূলত ১৯৭২ সালে দুই দেশের যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল, এটা ছিল তারই সম্প্রসারিত সংস্করণ বা নবায়ন। এ নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে ৫ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনের মূল শিরোনাম ছিল, ‘পারস্পরিক আনুকূল্যের শর্তে বাংলাদেশ-ভারত নয়া বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর’। ভারতের তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এলে এই চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী। এই চুক্তির মেয়াদ ছিল তিন বছর। তবে দুই দেশ সম্মত হলে চুক্তিটি আরও তিন বছর বাড়ানো যাবে।

৮ নভেম্বর ১৯৮৩, ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট প্রোটোকল নবায়ন

নবায়ন করার সময় নতুন রুট ও পোর্ট অব কল যুক্ত করা হয়। ঢাকায় দুই দেশের প্রতিনিধিরা তিন দিন আলোচনা শেষে ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট প্রোটোকল নবায়ন করা হয়। এটা নিয়ে ৯ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘ভারতীয় জাহাজ চলাচলের প্রোটোকল নবায়ন’।

১১ এপ্রিল ১৯৯৩, সাপটা চুক্তি স্বাক্ষর

ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্কের সপ্তম শীর্ষ সম্মেলনে সার্ক সদস্যরা সাপটা (সার্ক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যব্যবস্থা) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

১ জানুয়ারি ২০০৬, সাফটা কার্যকর

দক্ষিণ এশিয়া অগ্রাধিকার বাণিজ্যব্যবস্থা বা সাপটার পরিবর্তে কার্যকর হয় দক্ষিণ এশিয়া মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বা সাফটা। এই ব্যবস্থা কার্যকর হয় ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এর আগে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ২০০৪ সালের ৬ জানুয়ারি এ–সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়া মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল কার্যকর হওয়ায় সার্ক সদস্যদেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যে পর্যায়ক্রমে শুল্ক হ্রাস শুরু করে।

১৩ আগস্ট ২০০৮, এলডিসি স্কিমে বাংলাদেশ

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) হংকং সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) ক্ষেত্রে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত–সুবিধা দেওয়ার নীতি নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ভারত ২০০৮ সালের ১৩ আগস্ট ডিউটি ফ্রি ট্যারিফ প্রেফারেন্স (ডিএফটিপি) স্কিম ফর এলডিসিজ নামে একটি ব্যবস্থা চালু করে, যাতে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত হয়।

১২ জানুয়ারি ২০১০, শেখ হাসিনার ভারত সফর

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বেশ কিছু চুক্তি সই হয়। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং।

সে সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো:

  • বাংলাদেশ ও ভারত একে অন্যের সমুদ্র, রেল ও সড়কপথ ব্যবহার করবে।

  • নেপাল ও ভুটানে ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশকে তার ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভারতের।

  • অন্যদিকে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেবে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও মোংলা বন্দর নেপাল ও ভুটানও ব্যবহার করতে পারবে।

  • ভারতকে আশুগঞ্জ ও বাংলাদেশকে শিলঘাট পোর্ট কল ব্যবহারে দুই পক্ষ সম্মত।

  • বাংলাদেশের রেলব্যবস্থার সংস্কার, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও নদী পুনঃখননের জন্য ১০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা দেওয়ার ঘোষণা ভারতের।

  • টিপাইমুখ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়, এমন কিছু না করার ঘোষণা ভারতের।

  • বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রাধিকার তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রীদের বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত।

  • বাংলাদেশের বিদ্যুৎ–ঘাটতি মেটাতে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে রাজি ভারত।

২০১০ সালে দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১, মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর

চার দিনের সফরে যেসব চুক্তি হয়:

  • বাংলাদেশের জন্য ৪৬টি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার ঘোষণা।

  • সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তি, সীমান্তে যৌথ টহল, অনুপ্রবেশ ও হত্যাকাণ্ড কমাতে ঐকমত্য।

  • ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য পাসপোর্ট ছাড়াই দুই দেশের নির্দিষ্ট এলাকার চলাচলের ব্যবস্থা।

  • লাইন অব ক্রেডিট সম্প্রসারণ। ভারত আগের ঘোষিত ১ বিলিয়ন ঋণের অংশবিশেষ প্রকল্পে খরচে সম্মতি।

  • তবে হয়নি তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি।

অথচ মূল আলোচনাই ছিল তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তীব্র আপত্তি জানিয়ে সফরে যোগ না দেওয়ায় চুক্তি আর হয়নি। বলে রাখা ভালো সেই চুক্তি আর কখনোই হয়নি।

৬ জুন ২০১৫, নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর

২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার ঢাকা সফরে আসেন। সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে ২২টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:

  • স্থলসীমান্ত চুক্তি: ১৯৭৪ সালের ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্ট (এলবিএ) বাস্তবায়নে সম্মতি ও বিনিময় দলিল হস্তান্তর। ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়। এর মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭ হাজার ১৬০ জন বাসিন্দা) ও বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (৩৭ হাজার ৩৬৯ জন বাসিন্দা)

  • ২০০ কোটি ডলারের লাইন অব ক্রেডিট বা ঋণসীমার ঘোষণা।

  • উপকূলীয় শিপিং চুক্তি: এর আওতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরগুলোর মধ্যে সরাসরি সমুদ্রপথে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি।

  • রেলপথ সংযোগ চুক্তি ও পুনরায় চালু ঘোষণা।

  • দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন।

  • সীমান্ত হাট সম্প্রসারণ চুক্তি।

  • বিদ্যুৎ সহযোগিতা ও সংযোগ চুক্তি।

  • শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক চুক্তি: এর আওতায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিনিময়, রবীন্দ্র-নজরুল স্মরণোৎসব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ঘিরে গবেষণা ও প্রকাশনা।

  • আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু।

  • অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তির নবায়ন।

নৌপথে বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তি প্রথম স্বাক্ষরিত হয় ১৯৭২ সালে। চুক্তি ২০১৫ সালের ৬ জুন পুনরায় নবায়ন করা হয় পাঁচ বছরের জন্য, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়।

পরে ২০২০ সালের ২০ মে দ্বিতীয় সংযোজন স্বাক্ষরের মাধ্যমে চুক্তিটি আবার সম্প্রসারিত হয়। এতে ভারতের হলদিয়া এবং বাংলাদেশের মোংলাসহ নতুন রুট ও বন্দর যুক্ত করা হয়।

রয়টার্স প্রতীকী ছবি

১ জুলাই ২০১৫, বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন

পাঁচ বছরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আবার নবায়ন।

৫ নভেম্বর ২০১৭, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি

২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে ক্রয় চুক্তি করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চুক্তিটি পিডিবি এবং আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের মধ্যে সম্পাদিত হয়, যার আওতায় ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গড্ডা জেলায় অবস্থিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। যদিও উচ্চমূল্যসহ এই চুক্তি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।

২৫ অক্টোবর ২০১৮, ট্রানজিটের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের চুক্তি

ভারতীয় পণ্যের ট্রানজিটের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের চুক্তি স্বাক্ষর। এর মাধ্যমে ভারত চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (নর্থ–ইস্ট ইন্ডিয়া) পণ্য পরিবহনের ট্রানজিট–সুবিধা পায়। যদিও এ থেকে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে না বলে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।

২১ জুলাই ২০২০, প্রথম ট্রানজিট চালান

প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রানজিট চালান চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতীয় ট্রাক ত্রিপুরায় পৌঁছায়।

১৮ মার্চ ২০২৩, ভারত-বাংলাদেশ ডিজেল পাইপলাইন উদ্বোধন

ভারতের আসাম থেকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ডিজেল সরবরাহ এর উদ্দেশ্য। জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার আন্তসীমান্ত পাইপলাইন উদ্বোধন করা হয়। পাইপলাইনের মধ্যে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার বাংলাদেশে এবং বাকি ৫ কিলোমিটার ভারতে বসানো হয়েছে। ১৫ বছরের চুক্তির আওতায় পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিবছর আড়াই লাখ টন থেকে চার লাখ টন ডিজেল আমদানি করা যাবে। ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট মন্ত্রিসভার অর্থনীতিবিষয়ক কমিটির অনুমোদনের পর চুক্তিটি সই করা হয়েছিল।

১ এপ্রিল ২০২৩, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর স্থায়ীভাবে ব্যবহারের অনুমতি

ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর স্থায়ীভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক অনুমতি দেয়। এ বিষয়ে স্থায়ী ট্রানজিট আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এর আগে ২০১৮ সালে ভারতে এ নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে ঢাকা ও দিল্লি। ২০১৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে একটি ভারতীয় পণ্যের চালান আগরতলা যায় আখাউড়া হয়ে। ২০২২ সালে মোংলা বন্দর দিয়ে আরও দুটি রুটে পরীক্ষামূলক ট্রানজিট নেয় দেশটি।

৮ এপ্রিল ২০২৫, ট্রানজিট–সুবিধা বাতিল করল ভারত

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরের ঘটনা। বন্দর ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) সেই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয়।

১৫ এপ্রিল ২০২৫, স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বাতিল বাংলাদেশের

বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পোশাকশিল্পের সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল করে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতা আমদানি করা যাবে।

সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধায় হিলি ও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। ১৫ এপ্রিল থেকে এই অনুমতির মেয়াদ শেষ হলে সরকার আর সময়সীমা বাড়ায়নি।

১৭ মে ২০২৫, স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ ভারতের

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ থেকে আসা তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিকসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এখন এসব পণ্য শুধু কলকাতা ও নভো সেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। ভারতের সিদ্ধান্ত আসলে মোট চারটি। যেমন:

প্রথমত, ভারতের কোনো স্থলবন্দর ব্যবহার করে সেখানে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করতে পারবে না। রপ্তানি করতে হবে কলকাতার হলদিয়া বন্দর ও মুম্বাইয়ের নভো সেবা বন্দর দিয়ে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও সুতার উপজাত ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না।

তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়েও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও সুতার উপজাত ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা দিয়ে এসব পণ্য রপ্তানি হবে না।

চতুর্থত, ভারত বাংলাদেশের মাছ, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), ভোজ্যতেল ও ভাঙা পাথর আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। এ ছাড়া ভারতের বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকবে না।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, বিস্কুট-কেক, আসবাবসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে স্থলপথে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এতে দুই দিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সোমবার সয়াবিন তেল ছাড়া আর কোনো পণ্য যায়নি। বাংলাদেশ সীমান্তে বন্দরে অপেক্ষারত পণ্যবাহী ট্রাক। আখাউড়া স্থলবন্দর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১৯ মেছবি: শাহাদৎ হোসেন

শেষ কথা

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখলেও দেওয়া-নেওয়ার ভারসাম্যে একধরনের অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালের মৈত্রী চুক্তি দিয়ে সম্পর্কের সূচনা হলেও দীর্ঘ ৫৪ বছরে বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার, বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ, জলপথ, সড়ক ও রেলপথ ব্যবহারের সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশ দিয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগের সুবিধা। ডিজেল পাইপলাইন, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, বিদ্যুৎ রপ্তানি, লাইন অব ক্রেডিট, সীমান্তহাট, বাণিজ্যচুক্তি—সবকিছুতেই ভারত পেয়েছে বাস্তব সুবিধা।

পাল্টা হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে কিছু আর্থিক সহায়তা, সীমিত পণ্য প্রবেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং কিছু অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। তবে প্রতীক্ষিত তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি আজও হয়নি। ট্রানজিট থেকেও পায়নি তেমন আর্থিক সুবিধা। ঋণ সহায়তা দিলেও ভারতীয় পণ্য কেনা ও ভারতীয় ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার শর্ত প্রকল্পের মান ও উপযোগিতা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। আর সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে অনেকটাই নাজুক করেছে। মোটা দাগে বলা যায়, ৫৪ বছরে ভারত কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হয়েছে, আর বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে প্রতিশ্রুত প্রতিদান ও ন্যায্য সুযোগের।

সোর্স: প্রথম আলো


আবারো ফ্লু তে আক্রান্ত। প্রিয় জন্মভূমি মীরজাফর ও ঘষেটি বেগমদের প্রেতাত্নাদের ষড়যন্ত্রে উথাল-পাতাল। অনেক কিছুই বলার ছিলো, মন চাইলেও শরীর বিদ্রোহ করছে। শরীর যুক্তি দেয় কি হবে কথা বলে, যে দেশে এক বেলা খাবারের লোভ দেখিয়ে বাসভর্তি করে লোক আনা যায় কথিত আন্দোলন ও জনসমাবেশের জন্যে? কি হবে কথা বলে, যে দেশে তথাকথিত শিক্ষিতরা বিবেক বন্ধক দেয় দলীয় আনুগত্যের কাছে? কি হবে কথা বলে, যে দেশে পাখির মতো গুলি চালিয়ে                                                    শিশুদের হত্যা করা হয়, গরীবের রক্তচোষে লুটেরার দল বিদেশে বিলাসী প্রাসাদ বানায়, সুইস ব্যাংকে ডলারের পাহাড় জমায় – আবার সেই খুনি ও লুটেরাদের পক্ষ দাঁড়াবার মানুষরূপী অমানুষদের অভাব হয় না? 


বিবেক বলে, ঠিক একারণেই আরো বেশী করে কথা বলা দরকার। মানুষ কে জানানো দরকার। সত্য কথা বারবার বলা দরকার। সত্য অনুপস্থিত থাকলে মিথ্যা মাঠ দখল করে ফেলে, আলো নিভে গেলে অন্ধকার গ্রাস করে ফেলে চারপাশ। 


ভারতীয় আধিপত্যবাদ তার শত্রু চিনতে ভুল করে না। কিন্তু মিত্র চিনতে ভুল করে জন্মভূমির আত্নভোলা মানুষগুলো। সে সুযোগটিই নিচ্ছে ভারতীয় আধিপত্যবাদের উচ্ছিষ্টভোগী এদেশীয় দালালগুলো। 


ভারতীয় আধিপত্যবাদ তার পথের কাঁটা ড. ইউনুস কে আর একদিনও সহ্য করতে রাজী নয়। তারা চায় ড. ইউনুস আজকেই পদত্যাগ করে চলে যাক। তাদের প্রচেষ্টা প্রায় সফল হতে চলেছিলো, যখন ড. ইউনুস পদত্যাগ করার কথা ভাবছিলেন। ভারতীয় মেডিয়ায় সাজোসাজো কলরব শুরু হয়ে গিয়েছিলো, ড. ইউনুস পদত্যাগ করছেন। 


এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ড. ইউনুসের পাশে দাঁড়ালেন জুলাই বিপ্লবের প্রাণ পুরুষেরা। আবারো ব্যর্থ হয়, ভারতীয় আধিপত্যবাদের চক্রান্ত। ব্যর্থ হবার পরেই ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও তার এদেশীয় দোসরেরা চড়াও হয় তাদের উপর যাদের কারণে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয় – ড. খলিলুর রহমান, ডাক্তার পিনাকী ভট্টাচার্য, ড. কনক সারোয়ার এবং ইলিয়াস হোসেইন প্রমুখ। 


সরাসরি পদত্যাগ দাবী করে ড. খলিলুর রহমানের। বিদেশী নাগরিকত্বের মিথ্যা অভিযোগ তুলে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র দেশকে ভালোবেসেই অন্যদেশের নাগরিকত্ব নেননি সেই মানুষটির উপর মিথ্যা অভিযোগ তুলতে দ্বিধাবোধ করেনি ভারতীয় আধিপত্যবাদের দালাল ঐসব নীচাশয় লোকগুলো। 


কেনো ড. খলিল কে টার্গেট করা হলোঃ 

• ড. খলিল হলেন সেই ব্যক্তি যার কারণে ওয়াকার মুক্তিকামী ছাত্রজনতার উপর চূড়ান্ত ক্র্যাকডাউন চালাতে পারেনি। যেহেতু ড. খলিল জাতিসংঘের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান ছিলেন তাই তিনি তার সাবেক সহকর্মীদের মাধ্যমে এই মহৎ কাজটি করতে পেরেছিলেন। যেমনটি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার Volker Turk বিবিসি HARDtalk এর সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “"The big hope for them was actually our voice, was my voice, and was also what we were able to do and we put the spotlight on the situation. And we actually gave the warning to the army that if they get involved, it means that they may not be allowed to be a troop-contributing country anymore," said Turk. "As a result, we saw changes." কাজেই ড. খলিল হলেন এই মূহুর্তে ভারতীয় আধিপত্যবাদের জাতশত্রু। তাই কোনো রকম রাখঢাক না রেখেই ভারতের RAW এর পোষ্য বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের মাধ্যমে ড. খলিলের পদত্যাগের দাবী করা হয়। বলে রাখা ভালো, যতদূর জানা যায়, ড. ইউনুসও এব্যাপারে সরাসরি জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে কথা বলেছিলেন। এবার আশা করি বুঝতে পারছেন, কেনো ওয়াকার বুকে পাথর চাপা দিয়ে ড. ইউনুসকে মেনে নিয়েছিলো।


• চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে ড. ইউনুস যেভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদের শৃংখল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি সাজাচ্ছেন এবং বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন তার পিছনে যে মানুষটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছেন তিনি হলেন ড. খলিল। তাই ড. ইউনুস কে থামাতে হলে ড. খলিল কে বিদায় করতে হবে।  


• রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের স্বার্থে যা যা করা দরকার ছিলো তার সব কিছুই করেছে বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে। কিন্ত ড. খলিল ভারতীয় সেই ছক পাল্টে দিচ্ছেন। তার দক্ষ কূটনীতিতে ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। 


• বিগত ছয় বছর যাবৎ নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে পিনাকী দা’ ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। পিনাকী দা’র এক্টিভিজম ছিলো আগ্নেয়গিরির গর্ভে লাভাকে চরমভাবে উত্তপ্ত করার মতো যা প্রবল কম্পনে উদ্গীরণের অপেক্ষায় ছিলো। বীরশ্রেষ্ঠ আবু সাঈদের শাহাদাৎ ছিলো সেই প্রবল কম্পন, বাকীটা ইতিহাস। পাহাড় ও সমতল থেকে, মাঠ পেরিয়ে, গ্রাম ছাড়িয়ে ছাত্র-জনতার বাধভাঙ্গা জোয়ার আগ্নেয়গিরির লাভার মতো ছড়িয়ে পড়েছিলো। পিনাকী দা’র এই এক্টিভিজমের মেন্টর / গুরু হলেন ড. খলিলুর রহমান, আমাদের প্রিয় খলিল ভাই। সেই ড. খলিল কে উপদেষ্টা পরিষদে তাও আবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে মেনে নেয়া ভারতীয় আধিপত্যবাদের জন্যে খুবই কঠিন। তাই তো তারা পালিত দালাল সালাউদ্দিন ও আমীর খসরুদের মাধ্যমে ড. খলিলের পদত্যাগ দাবী করছে। 


কেনো পিনাকী দা’ কে টার্গেট করা হলোঃ

আমার মনে হয় না এব্যাপারে আর কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দরকার আছে। 

• শেখ হাসিনা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রকাশ্য শত্রু হলেন পিনাকী দা। কাদের বিরোধিতার কারণে পিনাকী দা’ এখনো বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না এবং উপদেষ্টা পরিষদে নেই এ কথা বুঝতে নিশ্চয়ই আইনস্টাইন হবার দরকার নেই। যারা বিপ্লবী সরকার গঠন করতে দেয়নি, যারা জুলাই বিপ্লবকে স্বীকার করে না, যারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের দালাল ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার সমস্ত অপকর্মের দোসর – তারা জানে পিনাকী দা’ কে এবং তিনি কিভাবে তাদের কে বাঁশ দিয়েছেন। কাজেই পিনাকী দা’র পিছনে তারা আগের চেয়েও বেশী আক্রমণাত্বক। 


• ওয়াকার ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার শিকড়-বাকড় জেনারেলরা তাদের মিশন যাদের কারণে বাস্তবায়ন করতে পারছে না তাদের অন্যতম হলেন পিনাকী দা’। তাই পিনাকী দা’র পিছনে কচুক্ষেতীদের ভাড়া করেছে ওয়াকার গং। 


• ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার জয় বাংলা করার জন্যে প্রধান ও সবচেয়ে বেশী ভুমিকা রেখেছেন পিনাকী দা। আওয়ামীলীগ, শেখ মুজিব পরিবার ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের আইকন ছিলো এই ধানমন্ডি ৩২। যেহেতু পিনাকী দা হলেন ধানমন্ডি ৩২ জয় বাংলা করার সিপাহসালার তাই স্বাভাবিক ভাবেই তিনি হলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা, ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও তাদের এদেশীয় দোসরদের প্রধান টার্গেট। 


• সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিপ্লবকে সংগঠিত করে ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাতের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পিনাকী দা। পৃথিবীর ইতিহাসে এজাতীয় ঘটনা এটাই প্রথম। আমি অন্যান্য ইনফ্লোয়েন্সারদের ভূমিকাকেও ছোট করছি না বা অস্বীকার করছি না। আমার মনে হয় একথা সবাই স্বীকার করবেন যে, বুদ্ধিবৃত্তিক বয়ান সৃষ্টির প্রধান ভূমিকাটি ছিলো পিনাকী দা’র। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রধান সিপাহসালার আমারদেশ পত্রিকার মজলুম সম্পাদক শ্রদ্ধেয় ড. মাহমুদুর রহমান। 


ঠিক একই কারণে ড. কনক সারোয়ার ও প্রিয়ভাই ইলিয়াস হোসেইন কে টার্গেট করে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে ভারত, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দল আওয়ামীলীগ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে উনাদের পরিবার পরিজন জেল, জুলুম ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন তবুও তারা জন্মভূমির জন্যে নিজেদের দায়িত্বপালন থেকে কখনো পিছপা হননি। 


ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনারদের কে সরাসরি টার্গেট করে কিভাবে একের পর এক আক্রমণ চালানো হচ্ছে তা তো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। হাসনাত আব্দুল্লাহ সহ অন্যান্যরা হুমকির মুখে সারাক্ষণ। 


এটা নিতান্তই দূর্ভাগ্যের বিষয়, যে বিএনপি বিগত দেড় দশক ফ্যাসিস্ট হাসিনার অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার, সে বিএনপিই ভারতের দালালদের দ্বারা কব্জা হয়ে গেছে। সালাউদ্দিন, আমীর খসরুর মতো ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রকাশ্য দালালেরা দলটির নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করেছে ইতিমধ্যেই। 


ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট খুনিদের বিচারকে পাশ কাটিয়ে তারা যেনতেন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। জনগণের কাছে আজ একথা স্পষ্ট যে, বিএনপি’র এইসব সুবিধাভোগী দালালদের কারণেই ব্যাপক জনসমর্থন ও বিরাট কর্মীবাহিনী থাকা সত্ত্বেও দলটি ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। 


আজকে যখন আমি লিখছি, তখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনার ছোবলে মৃত্যুর মিছিল থামেনি। এখনো হস্পিটালের বেডে কাতরাচ্ছেন জুলাই বিপ্লবের আহত যোদ্ধাগণ। এসবের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে একটি দল নির্বাচন ও ক্ষমতার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। হতাশা, ক্ষোভ ও অপমানে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিষপান করেছেন জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো চার যুবক। তারা পুনর্বাসন ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন।


কী আর বলবো, বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি ক্রমশঃ। 


সময় এসেছে নতুন করে শপথ নেবারঃ


“কসম জন্মভূমির মাটি

কসম লাল সবুজের পতাকা

আহনাফ, ওয়াসিম ও আনাসের রক্তের কসম

শহীদের রক্ত মাড়িয়ে দুর্বৃত্তের শাসন

আমি মেনে নেবো না

শহীদের পবিত্র দেহ কে 

কখনো ক্ষমতার সিঁড়ি হতে দেবো না”। 


ইনকিলাব জিন্দাবাদ। 

মইনুল হক 

ডেট্রয়েট, মিশিগান।

সোর্স: এফবি


অন্তর্বর্তী সরকারের সংকট কাটলো নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হলো

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের 'কথিত পদত্যাগের ভাবনা' নিয়ে তৈরি হওয়া সংকটের আপাত নিরসন হলেও প্রকৃত অর্থে সংকট কাটলো, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হলো, সেই প্রশ্নও আলোচনায় আসছে।

মূলত সরকারের দুই 'ছাত্র' উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক দাবির পাশাপাশি দলগুলোর নির্বাচনের জন্য তারিখসহ রোডম্যাপ চাওয়ার কারণে সামনে নতুন সংকটের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

আবার পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ শনিবার যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানেও 'দলগুলোকে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দেয়ার সুর' আছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, সরকারের নিরপেক্ষতার স্বার্থেই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগসহ তাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।

অন্যদিকে নতুন দল এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলছেন, 'পদত্যাগ জনিত' সংকটের নিরসন হয়েছে, কিন্তু বিএনপির নতুন নতুন শর্তের কারণেই সংকটের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের বলছেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হলে সংকটের আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না বলেই তার ধারণা।

যদিও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের মতে, সংকট আরও ঘনীভূত হওয়া আশঙ্কা করছেন তিনি। কারণ যেসব ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে পরিষ্কার ঘোষণা সরকারের কাছ থেকে এখনো আসেনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন দাবি নিয়ে সরকারের ওপর হয়তো চাপ বাড়াচ্ছে বিএনপি, কিন্তু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে বিলম্ব হলে এসব দাবিকে ঘিরেই সংকট জোরদার হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সাথে সরকারের সম্পর্ক কেমন হয়, তাও সামনে দেখার বিষয় হবে বলে তারা মনে করেন।

নতুন সংকটের প্রশ্ন কেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ধারণা, সাম্প্রতিক সময়ে করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সম্প্রতি সেনাপ্রধানকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে যেসব বক্তব্য এসেছে, সেসব বিষয়ে সরকারের দিক থেকে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য আসেনি।

ওই সংবাদ প্রকাশের পর বিএনপি পরিষ্কারভাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে।

"সেনাবাহিনীর সাথে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে কার কারণে, সেটা চিহ্নিত করে আমরা তাকে সরিয়ে দেয়ার কথা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। সেনাপ্রধান তো ভুল কিছু বলেননি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ।

এছাড়া বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আদালতের রায়ের পর শপথ নেয়ার দাবিতে কাকরাইল এলাকায় তার সমর্থকদের অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটিও বিএনপির পছন্দ হয়নি।

শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিলো, 'বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবিদাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার–বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে'।

মি. আহমেদ বলছেন, "আদালতের রায়ের পর ইশরাককে শপথ না পড়ালে তার সমর্থকরা রাস্তায় নামলে সেই দায় তো তাদের হতে পারে না। এটি জনগণের অধিকার"।

অন্যদিকে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে 'এখতিয়ার-বহির্ভূত' শব্দ গুলো উল্লেখ করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ সেনাপ্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে করিডর, বন্দর ও নির্বাচনের তারিখ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ আসার পর সরকার সমর্থকরা অনেকে এই শব্দগুলো ব্যবহার করে নানা প্রচার প্রচারণা করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গত শুক্রবার একটি ফেসবুক পোস্টে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে লিখেছিলেন, 'ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বক্তব্যে সেনাপ্রধান জুরিশডিকশনাল কারেক্টনেস রক্ষা করতে পারেননি'। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর এটা ছিল সরকারি কোন কর্মকর্তার প্রথম মন্তব্য। যদিও পরে তিনি সেই স্ট্যাটাস মুছে ফেলেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলছেন, "উপদেষ্টা পরিষদ যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে এক ধরনের পরোক্ষ চাপ ও হুমকি দেখছি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে, যা শুভ লক্ষণ নয়'।

তিনি বলেন, "সংকটের গভীরতাই সরকার উপলব্ধি করতে পারছে না। নিজেদের নিরপেক্ষতার বিষয়েও তারা মনোযোগী নয়। আবার সরকারের যেসব বিষয়ে প্রশ্ন এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে অবস্থানও সরকার পরিষ্কার করেনি। ফলে সংকট সামনে আরও ঘনীভূত হতে পারে"।

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের প্রসঙ্গ এনেছে। বিএনপির সমমনা দলগুলোও বিএনপির এ অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

"যারা বিতর্কিত তাদের সরাতে হবে। ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে নতুন দলের যোগসাজশ আছে।তাদের সরিয়ে দিলেই সরকারের সমালোচনা বন্ধ হতে পারে। এটিই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি," বলেছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ।

নতুন দল অর্থাৎ এনসিপির আরিফুল ইসলাম আদীব বলছেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধান উপদেষ্টাকে সব দল যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তা থেকে বড় রাজনৈতিক দলটি সরে এসেছে বলে তিনি মনে করেন।

"তারাই এখন নতুন নতুন শর্ত দিয়ে সংকটের বীজ বপন করছে। বড় দল ডিকটেট করবে আর প্রধান উপদেষ্টা সে অনুযায়ী কাজ করবে সেজন্য তো তাকে ছাত্র জনতা আনেনি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তবে সবগুলো দলই বলছে যে, তারা চান না অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এখনি সরকার ছেড়ে যান বরং তারা চান তার নেতৃত্বেই দ্রুত নির্বাচন হোক। এক্ষেত্রে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে আর জামায়াত ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছে। এনসিপি বিচার ও সংস্কার এগিয়ে নির্বাচনের কথা বলছে।

কিন্তু তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের ইস্যুটি কতদূর গড়ায় কিংবা বিএনপি এই বিষয়ে কতটা অনড় হয়, তার ওপর সামনের পরিস্থিতির অনেকটাই নির্ভর করবে বলেও অনেকে মনে করছেন।

যদিও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ মোঃ আব্দুল্লাহ তাহের বলছেন, তারা সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং তার ধারণা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এলেই এসব বিষয়ে সংকট আর থাকবে না।

"আপাত সংকট নিরসন হয়েছে। মূলত নির্বাচনের রোডম্যাপ না আসাতেই সন্দেহ সংশয় তৈরি হচ্ছিলো। এটা স্পষ্ট হলেই মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তবে সরকারের দিক থেকে গত দুই দিনে যেসব বক্তব্য এসেছে, তাদের কেউ কেউ একে সংকট হিসেবে দেখতে রাজি নন।

শনিবার বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সাথে বৈঠকের পর সংকট কাটবে কিনা, এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, এটা সংকটের কী হলো, আমরা জানি না। আজকে খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশের তিনটি নেতৃস্থানীয় পার্টির সাথে প্রধান উপদেষ্টার মিটিং হয়েছে।"

তবে এসব বৈঠকে আগে সকালে উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনির্ধারিত বৈঠকের পরে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল, সেখানে সরকার দায়িত্ব পালনে নানা বাধার মুখোমুখি হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। দায়িত্ব পালন 'অসম্ভব' সরকার জনগণকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে বলেও বলা হয়েছে।

'সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ সাব্বীর আহমেদ বলছেন, সরকার একটি দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে মনে করেই বিএনপি নতুন দাবি এনেছে বলে মনে করেন তিনি।

"এবারের সংকট কাটলেও এখন দেখার বিষয় হবে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে বিএনপিকে আস্থায় নেয়। না হলে নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরও যেসব ইস্যু সামনে এসেছে সেগুলো নিয়ে সরকারের অবস্থানও পরিষ্কার করতে হবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মি. আহমেদ মনে করেন, সরকার আলোচনা অব্যাহত রাখলে এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে অনেক দাবিই ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে, যা সম্ভাব্য সংকট এড়াতে ভূমিকা রাখবে।

আরেকজন বিশ্লেষক শারমীন আহমেদ বলছেন, "বিএনপির মতো একটা বড় দলের দাবিকে সরকার কীভাবে সামলাবে সেটার ওপর নির্ভর করবে নতুন করে কোনো সংকট তৈরি হবে কি-না। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা মাধ্যমে দলটি আস্থায় এনে আলোচনার সুযোগও সরকারের সামনে আছে"।

মিজ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারপার্সন।

তার মতে, নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সংকট এড়াতে সংস্কারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ অংশকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।





ঐকমত্যে ব্যর্থ অধিকাংশ দল, দ্বিতীয় পর্যায়ে সমাধানের আশা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা সেসব বিষয়ে ঐক্যমত্যের আশা করছে কমিশনে। এছাড়া সংবিধান সংস্কার নাকি পুনর্লিখন, সেসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দল নেবে। 

তিনি বলেন, মে মাসের শেষ বা জুনের শুরুতে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করে জুলাইয়েই জাতীয় সনদ দিতে চায় কমিশন। 

সোমবার (২৬ মে) বিকেল তিনটায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা রোধে গঠিত ঐকমত্য কমিশন প্রথম পর্যায়ে ৪৫ অধিবেশনে আলোচনা করেছে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। এর পর আনুষ্ঠানিক এই ব্রিফিং করলো কমিশন।

এদিন কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ জানান, প্রধান প্রধান যেসব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে, সেসব নিয়ে সব দল নিয়ে এক টেবিলে বসে কমিশন আলোচনা করবে। সংবিধান সংস্কার না পুনর্লিখন, সে সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, প্রস্তাবিত সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু বিষয়ে জনগণের মতামত জানতে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে জরিপ পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আলী রীয়াজ জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা রদ করে আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। প্রবীণতম তিন জন বিচারকের মধ্য থেকে একজনকে বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো একমত জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত। কিছু দল এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাই চাইছে। আর সবাই ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধী দল থেকে নির্বাচনের পক্ষে।

৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পক্ষে সবাই একমত হলেও কী কী বিষয়ে ভোট দিতে পারবেন সংসদ সদস্যরা তা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি বলে জানান কমিশনের সহ সভাপতি।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, কতো বার নির্বাচিত হতে পারবেন, একই ব্যক্তি কতো বার প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান, সংসদ নেতা হতে পারবেন, এনসিসি গঠন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদসহ কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। তাছাড়া তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর সংশোধন নিয়ে সবাই একমত হয়েছেন। পাশাপাশি অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ সংশোধনের বিষয়ে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।

দেশের পুরাতন চার বিভাগকে চার প্রদেশে বিভক্ত করা, বিদ্যমান জেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল, ওয়ার্ড সদস্যদের ভোটে পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাবে একমত হওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

রাজনৈতিক দল ছাড়াও সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কমিশন একাধিক দিন আলোচনা করেছে। তাছাড়াও আরও আলোচনা পরিকল্পনা আছে বলেও জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি।

সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কিংবা শপথ ভঙ্গ করলে কমিশনারদের মেয়াদ পরবর্তী সময়ে উত্থাপিত অভিযোগ প্রস্তাবিত সংসদীয় কমিটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর বিধান করার ব্যাপারে বেশিরভাগ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বলে জানান তিনি।

মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখার লক্ষে মানবতাবিরোধী আইন ও আরপিও সংশোধন করার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো। এর আইনি দিক বিবেচনার অধিকাংশ দল গুরুত্ব দিয়েছে।

দলগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে বলেও জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি।

একাত্তর/এসি

https://ekattor.tv/78388

ঐকমত্য কমিশনআলী রীয়াজ



অন্তর্বর্তী সরকারের সংকট কাটলো নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হলো

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের 'কথিত পদত্যাগের ভাবনা' নিয়ে তৈরি হওয়া সংকটের আপাত নিরসন হলেও প্রকৃত অর্থে সংকট কাটলো, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হলো, সেই প্রশ্নও আলোচনায় আসছে।

মূলত সরকারের দুই 'ছাত্র' উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক দাবির পাশাপাশি দলগুলোর নির্বাচনের জন্য তারিখসহ রোডম্যাপ চাওয়ার কারণে সামনে নতুন সংকটের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

আবার পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ শনিবার যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানেও 'দলগুলোকে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দেয়ার সুর' আছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, সরকারের নিরপেক্ষতার স্বার্থেই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগসহ তাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।

অন্যদিকে নতুন দল এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলছেন, 'পদত্যাগ জনিত' সংকটের নিরসন হয়েছে, কিন্তু বিএনপির নতুন নতুন শর্তের কারণেই সংকটের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের বলছেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হলে সংকটের আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না বলেই তার ধারণা।

যদিও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের মতে, সংকট আরও ঘনীভূত হওয়া আশঙ্কা করছেন তিনি। কারণ যেসব ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে পরিষ্কার ঘোষণা সরকারের কাছ থেকে এখনো আসেনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন দাবি নিয়ে সরকারের ওপর হয়তো চাপ বাড়াচ্ছে বিএনপি, কিন্তু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে বিলম্ব হলে এসব দাবিকে ঘিরেই সংকট জোরদার হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সাথে সরকারের সম্পর্ক কেমন হয়, তাও সামনে দেখার বিষয় হবে বলে তারা মনে করেন।


নতুন সংকটের প্রশ্ন কেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ধারণা, সাম্প্রতিক সময়ে করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সম্প্রতি সেনাপ্রধানকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে যেসব বক্তব্য এসেছে, সেসব বিষয়ে সরকারের দিক থেকে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য আসেনি।

ওই সংবাদ প্রকাশের পর বিএনপি পরিষ্কারভাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে।

"সেনাবাহিনীর সাথে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে কার কারণে, সেটা চিহ্নিত করে আমরা তাকে সরিয়ে দেয়ার কথা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। সেনাপ্রধান তো ভুল কিছু বলেননি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ।

এছাড়া বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আদালতের রায়ের পর শপথ নেয়ার দাবিতে কাকরাইল এলাকায় তার সমর্থকদের অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটিও বিএনপির পছন্দ হয়নি।

শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিলো, 'বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবিদাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার–বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে'।

মি. আহমেদ বলছেন, "আদালতের রায়ের পর ইশরাককে শপথ না পড়ালে তার সমর্থকরা রাস্তায় নামলে সেই দায় তো তাদের হতে পারে না। এটি জনগণের অধিকার"।

অন্যদিকে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে 'এখতিয়ার-বহির্ভূত' শব্দ গুলো উল্লেখ করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ সেনাপ্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে করিডর, বন্দর ও নির্বাচনের তারিখ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ আসার পর সরকার সমর্থকরা অনেকে এই শব্দগুলো ব্যবহার করে নানা প্রচার প্রচারণা করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গত শুক্রবার একটি ফেসবুক পোস্টে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে লিখেছিলেন, 'ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বক্তব্যে সেনাপ্রধান জুরিশডিকশনাল কারেক্টনেস রক্ষা করতে পারেননি'। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর এটা ছিল সরকারি কোন কর্মকর্তার প্রথম মন্তব্য। যদিও পরে তিনি সেই স্ট্যাটাস মুছে ফেলেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলছেন, "উপদেষ্টা পরিষদ যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে এক ধরনের পরোক্ষ চাপ ও হুমকি দেখছি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে, যা শুভ লক্ষণ নয়'।

তিনি বলেন, "সংকটের গভীরতাই সরকার উপলব্ধি করতে পারছে না। নিজেদের নিরপেক্ষতার বিষয়েও তারা মনোযোগী নয়। আবার সরকারের যেসব বিষয়ে প্রশ্ন এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে অবস্থানও সরকার পরিষ্কার করেনি। ফলে সংকট সামনে আরও ঘনীভূত হতে পারে"।

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের প্রসঙ্গ এনেছে। বিএনপির সমমনা দলগুলোও বিএনপির এ অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

"যারা বিতর্কিত তাদের সরাতে হবে। ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে নতুন দলের যোগসাজশ আছে।তাদের সরিয়ে দিলেই সরকারের সমালোচনা বন্ধ হতে পারে। এটিই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি," বলেছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ।

নতুন দল অর্থাৎ এনসিপির আরিফুল ইসলাম আদীব বলছেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধান উপদেষ্টাকে সব দল যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তা থেকে বড় রাজনৈতিক দলটি সরে এসেছে বলে তিনি মনে করেন।

"তারাই এখন নতুন নতুন শর্ত দিয়ে সংকটের বীজ বপন করছে। বড় দল ডিকটেট করবে আর প্রধান উপদেষ্টা সে অনুযায়ী কাজ করবে সেজন্য তো তাকে ছাত্র জনতা আনেনি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তবে সবগুলো দলই বলছে যে, তারা চান না অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এখনি সরকার ছেড়ে যান বরং তারা চান তার নেতৃত্বেই দ্রুত নির্বাচন হোক। এক্ষেত্রে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে আর জামায়াত ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছে। এনসিপি বিচার ও সংস্কার এগিয়ে নির্বাচনের কথা বলছে।

কিন্তু তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের ইস্যুটি কতদূর গড়ায় কিংবা বিএনপি এই বিষয়ে কতটা অনড় হয়, তার ওপর সামনের পরিস্থিতির অনেকটাই নির্ভর করবে বলেও অনেকে মনে করছেন।

যদিও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ মোঃ আব্দুল্লাহ তাহের বলছেন, তারা সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং তার ধারণা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এলেই এসব বিষয়ে সংকট আর থাকবে না।

"আপাত সংকট নিরসন হয়েছে। মূলত নির্বাচনের রোডম্যাপ না আসাতেই সন্দেহ সংশয় তৈরি হচ্ছিলো। এটা স্পষ্ট হলেই মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তবে সরকারের দিক থেকে গত দুই দিনে যেসব বক্তব্য এসেছে, তাদের কেউ কেউ একে সংকট হিসেবে দেখতে রাজি নন।

শনিবার বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সাথে বৈঠকের পর সংকট কাটবে কিনা, এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, এটা সংকটের কী হলো, আমরা জানি না। আজকে খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশের তিনটি নেতৃস্থানীয় পার্টির সাথে প্রধান উপদেষ্টার মিটিং হয়েছে।"

তবে এসব বৈঠকে আগে সকালে উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনির্ধারিত বৈঠকের পরে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল, সেখানে সরকার দায়িত্ব পালনে নানা বাধার মুখোমুখি হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। দায়িত্ব পালন 'অসম্ভব' সরকার জনগণকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে বলেও বলা হয়েছে।

'সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ সাব্বীর আহমেদ বলছেন, সরকার একটি দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে মনে করেই বিএনপি নতুন দাবি এনেছে বলে মনে করেন তিনি।

"এবারের সংকট কাটলেও এখন দেখার বিষয় হবে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে বিএনপিকে আস্থায় নেয়। না হলে নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরও যেসব ইস্যু সামনে এসেছে সেগুলো নিয়ে সরকারের অবস্থানও পরিষ্কার করতে হবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মি. আহমেদ মনে করেন, সরকার আলোচনা অব্যাহত রাখলে এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে অনেক দাবিই ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে, যা সম্ভাব্য সংকট এড়াতে ভূমিকা রাখবে।

আরেকজন বিশ্লেষক শারমীন আহমেদ বলছেন, "বিএনপির মতো একটা বড় দলের দাবিকে সরকার কীভাবে সামলাবে সেটার ওপর নির্ভর করবে নতুন করে কোনো সংকট তৈরি হবে কি-না। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা মাধ্যমে দলটি আস্থায় এনে আলোচনার সুযোগও সরকারের সামনে আছে"।

মিজ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারপার্সন।

তার মতে, নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সংকট এড়াতে সংস্কারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ অংশকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

সোর্স: BBC BANGLA

সেনাপ্রধান এবং বিএনপিকে কী বার্তা দিলেন ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ইস্যুতে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আগেই আলোচনা করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান। এবার তিনি প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপি ও সেনাপ্রধানকে ঘিরে এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন তার ইউটিউব চ্যানেলে। গতকাল ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেছে রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। মূলত এই মিটিং এর স্টেটমেন্টকে কেন্দ্র করেই এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক তার ইউটিউব চ্যানেলে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন।



ডা. জাহেদ উর রহমান এর মতে এটা একটি অর্থহীন বৈঠক এবং এখানে বিএনপিকে হিউমিলিয়েট করা হয়েছে। তার মতে এখানে একটি ম্যাসেজ পরিকল্পিতভাবে আমাদের (জনগণ) দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ডা. জাহেদ এর ভাষ্যে, ‘আমার কাছে মনে হয় পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের মেসেজ আমাদেরকে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মেসেজ সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। সোজা বাংলায় বলতে গেলে সেনাপ্রধান এবং বিএনপিকে ধমক বা হুমকি দেয়া হয়েছে।’



এসময় ডা. জাহেদ উর রহমান গতকালের সেই মিটিং এর স্টেটমেন্টের অংশ ‘যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের উপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যথ্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা সংস্কার উদ্যোগ বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠ নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’ এটি তুলে ধরে ডা. জাহেদ দাবী করেন, ‘এখানে প্রথম কথাটা হচ্ছে সেনা প্রধানকে একটা অফিশিয়াল ফরমাল বক্তব্যে তুলে আনা হলো। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য। সেনাপ্রধান সাম্প্রতিক সময়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন শুধু এটা না এর আগেও তিনি রাওয়া ক্লাবে একটা বক্তৃতা করেছেন সেটা নিয়েও সরকারের মধ্যে স্ট্রেস তৈরি হয়েছিল।’



এসময় তিনি আরও বলেন, ‘সেনাপ্রধান তার এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য দিয়েছেন কিনা তার উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল কিনা বক্তব্য এগুলো নিয়ে সরকারের অবস্থান থাকতে পারে। সরকার তাকে ডেকে প্রধান উপদেষ্টা এটা নিয়ে তাকে সতর্ক করতে পারেন। এটা নিয়ে তাকে তিরস্কার করতে পারেন।  কিন্তু অফিশিয়াল স্টেটমেন্টে এটা আনা হয়েছে। তার মানে সরকার সেনাপ্রধানকে হুমকি বা ধমক দিচ্ছেন এটা জনগণের সামনে অফিশিয়ালি সরকার দেখাচ্ছেন।’ ডা. জাহেদ এর মতে, সেনা প্রধানকে এভাবে ধমকানোর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে বুঝাচ্ছেন যে তাদের হ্যাডম আছে।



ডা. জাহেদ উর রহমান তার আলোচনার এক পর্যায়ে মন্তব্য করেন, এতদিন রাস্তা বন্ধ করে যমুনার সামনে গিয়ে অনেক অনেক আন্দোলন হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের টনক নড়েনি। কিন্তু যখনি ইশরাক হোসেন তাকে মেয়র করার দাবিতে আন্দোলনে নামলেন তখনি সমস্যা হলো। এরপর তিনি বলেন, ‘শত শত এই ধরনের রাস্তা ব্লক করার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা করেছি যে সরকারকে কঠোর হতে হবে আইন প্রয়োগ করতে হবে বল প্রয়োগ করতে হবে। আমি বলেছি অনেক সমালোচিত হয়েছি কিন্তু বলেছি বহুবার। সরকার যদি নৈতিকভাবে এবং আইনের মধ্যে থেকে প্রপোরশনেটলি বল প্রয়োগ করে সেটা জনগণ খারাপভাবে দেখবে না কিন্তু সরকার এগুলো করে নাই বিশেষ করে একটা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সরকার কোনদিনও বল প্রয়োগের পথে হাটে নাই সেটা হচ্ছে ইসলামিস্ট এক্সট্রিমিস্টরা বহু বহু ক্ষেত্রে তারা বহু কিছু ঘটিয়েছে সরকার পদক্ষেপ নেয় নাই।’



এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং এনসিপির বিষয়েও কখনো কোন কথা হয়নি এইসব আন্দোলন নিয়ে কিন্তু ইশরাক হোসেন আর বিএনপির বেলায় হচ্ছে মানে, এটা মতলববাজি। তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকার কেউ নির্বচন চাইলেই তাদেরকে ভারতের দালাল বলে আখ্যায়িত করছে।



ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘সরকারের স্বকীয়তা সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন অস্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব কওে তুললে সরকার জনগণকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এই যে জনগণ জনগণ বলা হয়। এই সরকারের জনগণ বলার কি আছে? সরকারের কোন কাজে কোন ক্ষেত্রে যদি সমস্যা তৈরি হয়, সরকার একটা এক্সিকিউটিভ, তার এক্সিকিউটিভ পাওয়ার আছে। আইন অনুযায়ী সে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। জনগণের আলাপটা কেন? এবং এই জনগণ কারা? ধারণা করি এটা বিএনপিকে ধমক বা হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমারও কিন্তু একটা রিজার্ভ ফোর্স আছে ওটা মাঠে নামাবো।’



তার মতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘয়িত করার পায়তারা করছে। তিনি বলেন, ‘কিছু জনগণ ডক্টর ইউনূসের পাঁচ বছর লাগবে টাকবেলা আওয়াজ ফেসবুকে তুলতে তুলতে এখন মাঠেও নামতে শুরু করেছে বোধ করি তারাও আস্তে আস্তে নামবেন নামাবেন গণভোট চাই ওনাকে পাঁচ বছর এসব আলাপ আমরা জানি আসতে যাচ্ছে। আমরা খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি ডক্টর ইউনুস দেশকে একটা সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

ডা. জাহেদ উর রহমান

সোর্স: দৈনিক ইনকিলাব

দেশ আজ ভারতীয় দালাল এর হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে

প্রেসিডেন্ট জিয়া কে হত্যা করার পর মেজর জেনারেল মঞ্জুর যখন প্রথম বেতার ভাষণ দিলো- সে সদর্পে ঘোষণা করেছিল "দেশ আজ ভারতীয় দালাল এর হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে! দেশ আজ ভারতের রাহুমুক্ত"! 

১৯৬৯, ৭০, ৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে যারা কাজ করেছেন; কথা বলেছেন এবং যুদ্ধ করেছেন -পাকিস্তানি মিডিয়া এবং স্বাধীনতা বিরোধীরা তাদের গণহারে ভারতীয় এজেন্ট হিসেবে প্রচারণা চালাতো! আমাদের সেনাবাহিনীর যেইসব অফিসাররা বিদ্রোহ করলেন - পাকিস্তান সরকারি ভাষ্যে / এবং রাজাকার দের ভাষ্যে তারা সবাই রাতারাতি হয়ে গেলেন ভারতের চর!

ফাস্ট ফরওয়ার্ড - ৭২-৭৫: জাসদের হঠকারী রাজনীতি আর মুজিবের অপশাসন| মুজিব সরকার জাসদ / সিরাজ শিকদার দের বলে ভারতের দালাল আর জাসদ মুজিব সরকার কে বলে ভারত কন্ট্রোল্ড সরকার! এই ভারতীয় দালাল প্রতিরোধ নিয়ে ক্যাচালে ভারতে চোরাচালান কন্ট্রোল এর দাবিতে জাসদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করে! এই ক্রাউড ঠেকাতে পুলিশ গুলি করে পঞ্চাশ জন জাসদ কর্মী হত্যা করে!

তারপর ১৯৭৫! ভারত বিরোধিতার রাজনীতির গ্ল্যাডিয়েটরিয়াল সময়! ফারুক - রশিদ / তাহের -ইনু সবগুলো গ্রূপ ই মুজিব কে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছিলো - উদ্দেশ্য একটা - ভারতের দাস থেকে দেশকে উদ্ধার করা| ফারুক - রশিদ রা আগে গিয়ে কাজটা করতে পেরেছে এইই পার্থক্য| কিন্তু জূজূ ছিল একটাই- ভারত| 

তারপর নভেম্বর - খালেদ মোশাররফ এর কাউন্টার ক্যু! ইমিডিয়েটলি তাহের গ্রূপ ছড়িয়ে  দিলো বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশারফ ভারতের দালাল! "ভারতের দালাল"  ওই এক  তকমায় খালেদ এর মৃত্যু পরোয়ানা লিখা হয়ে গেলো| ৭ ই নভেম্বর এ সিপাহী জনতার বিপ্লব এর অন্যতম মূল ড্রাইভিং ফোর্স ছিল ভারতের আধিপত্য ভীতি| ৭৫-৮১ জিয়ার বিরুদ্ধে যে কটি ক্যু হলো - যে কটি গ্রূপ জিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করছিলো - বেঙ্গল ল্যান্সার এর ইসলামিস্ট রা বা তাহের এর বিমান বাহিনীর সিপাই রা - সবাইকে এক মন্ত্রে ইনডকট্রিনেট করা হয়েছিল; জিয়া ভারতের দালাল/ ওকে হঠাতে হবে! 

তাহের এর যখন বিচার হচ্ছিলো - আদালতে তার জবানবন্দিতে তাহের বারবার জিয়াকে ভারতের দালাল বলে বিষাদগার করেছে| একবার দুবার না - বার বার বার বার| 

এরশাদ যখন জাস্টিস সাত্তার কে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করলো - সেও সেই একই কথা বলছিলো - "ভারতের তাবেদার সরকার এর পতন হয়েছে! দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী দেশের দায়িত্ব নিয়েছে!"

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সজ্জন ভদ্র পলিটিশিয়ান - এতদিন তাকে ভারতের দালাল বলা হয়েছে! এখন সালাহউদ্দিন সাহেব সামনের সারিতে আসছেন - এখন উনি হয়ে গিয়েছেন ভারতের দালাল! ভারতে দশ বছর নির্বাসনে ছিলেন| জেলে ছিলেন বছরের পর বছর! দেশে ফিরতে পারেন নি কারণ তার পাসপোর্ট ইস্যু করে নি সরকার! এর আগে দুমাস গুম হয়ে ছিলেন! 

আওয়ামী সরকারের আমলে শত প্রলোভন; চোখ রাঙানী; চাপ উপেক্ষা করে সুখরঞ্জন বালি  বলে গিয়েছেন যে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী নির্দোষ! গুম হয়ে গিয়ে ভারতে জেলে থাকলে কেউ ভারতের দালাল হয় না! 

৩ আগস্ট এ সমগ্র জাতি আগ্রহ নিয়ে শুনেছে জেনারেল ওয়াকারের আশ্বাস - সেনাবাহিনী মানুষ কে গুলি করবে না| আর পাঁচই আগষ্টে তাঁর ভাষণের ঘোষণা শুনে সমগ্র জাতি উচ্ছাস করেছে  - নফল নামাজ পড়েছে| ইউনুস সাহেব তিন দিন পরে এসেছেন - এই কয়দিন দেশটাকে ধরে রেখেছিলেন জেনারেল ওয়াকার| 

এখন হঠাৎ করে জেনারেল ওয়াকার ভারতের দালাল হয়ে গিয়েছেন| 

আল্লা আপনাদের অনেক বড় একটা মাথা আর ব্রেইন দিয়েছে| এতো বড় বেইন আর কোন প্রাণীর নাই! এই বেইন টাকে কাজে লাগান!

নিউজিল্যান্ড জনসংখ্যা ৫ মিলিয়ন - আর ভেড়ার সংখ্যা ২৪ মিলিয়ন!

আর যদিও আমাদের বাংলাদেশ এর জনসংখ্যা ১৭০ মিলিয়ন - আমার ধারণা এই ১৭০ মিলিয়ন এর ১৬৫ মিলিয়ন ই ভেড়া বা ভেড়ার বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন! 

নিউ জিল্যান্ড এর মেষপালকরা বিশেষ হুইসেল দিলে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মেষ / ভেড়া একদিকে দৌড় দেয়! নিউ জিল্যান্ড এর মেষপালক দের মতোই বাংলাদেশের কিছু মিথ্যুক ইউটিউবার আছে - যারা একটি কূ করে - সাথে সাথে বাংলাদেশ এর ১৬৫ মিলিয়ন ভেড়া শুরু করে দেয় " ইন্ডিয়ার দালাল; ইন্ডিয়ার দালাল,ইন্ডিয়ার দালাল"| 

যেই কোন একটা বিশেষ এজেন্ডার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে - সেই " ইন্ডিয়ার দালাল"
সোর্স: এফবি

দায়িত্ব পালন অসম্ভব করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সিদ্ধান্ত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচারপ্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।

গতকাল শনিবার বিকেলে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ বিবৃতি পাঠানো হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শত বাধার মধ্যেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার ওপর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

ক্ষোভ ও হতাশা থেকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে চাইছেন—দুই দিন ধরে এমন আলোচনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয় সারা দেশে। জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত আলোচনায় তাঁর পদত্যাগের ভাবনার কথা বলেন। এ সময় তিনি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে ওই দিন রাত থেকেই আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করুন, কোনো দলই সেটা চায় না। তবে দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় চায়।

এরই মধ্যে গতকাল বেলা ১১টায় এনইসি সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। পরে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় শুরু হয়ে বৈঠক শেষ হয় বেলা সোয়া ২টায়। দুই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অন্তত ১৯ জন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকে উপদেষ্টাদের বাইরে আর কাউকে রাখা হয়নি। একনেক বৈঠক শেষে একে একে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিকল্পনাসচিবসহ সব সরকারি কর্মকর্তাকে এনইসি কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে দেখা গেছে।

চলমান কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সহায়তা চান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, একনেকের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবিদাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।

দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা থাকছেন: বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা

উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক শেষে বের হয়ে আসার পথে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান, প্রধান উপদেষ্টা থাকছেন কি না? জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) চলে যাবেন বলেননি।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকারকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা পালন করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সরকার তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবে।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতা আসছে, বৈঠকে সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রত্যেক উপদেষ্টা বিভিন্ন জায়গা থেকে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন, মন্ত্রণালয়ের সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা এসেছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগামী নির্বাচন এবং সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের ক্ষেত্র তৈরিতেও প্রতিবন্ধকতা আসছে। সেসব প্রতিবন্ধকতা কোথা থেকে আসছে, তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের সব শক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সব সংস্থাকে সরকারের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তার আহ্বান জানান তিনি।

চলমান কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সহায়তা চান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের অব্যাহতি দাবি করে বিএনপি। একই সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের অব্যাহতির দাবিও তোলে দলটি। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা (ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আসিফ নজরুল) বিএনপির মুখপাত্র উল্লেখ করে তাঁদের পদত্যাগের বিষয়টি সামনে এনেছেন।

এ বিষয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর বিপক্ষে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সেটি দলীয় বক্তব্য ছিল নাকি ব্যক্তিগত ছিল, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। তাতে দেখা যায়, তা দলীয় বক্তব্য ছিল না। তিনি বলেন, ‘সে রকম কিছু যদি হতোই, তাহলে তো আমরা কেউ স্বপ্রণোদিতভাবে এখানে আসিনি এবং এই দায়িত্ব খুব উপভোগ্য না। কাজেই সে রকম হলে তো আমরা যে কেউ পদত্যাগ করতে পারতাম। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে যে আসলে দলীয়ভাবে এমন কোনো কথা আসেনি।’

বর্তমান সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি এবং সমর্থনে এসেছে উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তাঁদের ভিত্তিই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। সেখানে কাউকে নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে সেটা সমীচীন হবে না।

এর আগে বৈঠক থেকে বের হওয়ার পথে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হয়। তিনি বলেন, বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কার ও জুলাই ঘোষণা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় তাঁর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

সূত্র: প্রথম আলো

ইউনুস যাত্রাপালা শেষ, শেষাঙ্ক ওয়াকারের হাতে

ডঃ ইউনুসের পদত্যাগ একটি কাঁচা চিত্রনাট্যের যাত্রাপালা বলেই মনে হচ্ছিল। প্রহারেণ ধনঞ্জয় ছাড়া তিনি যাবেন না। সামরিক বাহিনী বাধ্য না করলে পদত্যাগ তিনি কেন করবেন? ক্ষমতায় টিঁকে থাকার তার উদ্দেশ্যগুলি পূর্ণ হয় নি। সেটা বলব, তার আগে একটা দানবের গল্প শোনাই।  

দানবের গল্পঃ  

পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই একটা ন্যারেটিভ ছড়ানো হয়েছিল। তা হল ভারত হিন্দু দেশ, কাফেরদের দেশ ও আমাদের শত্রু। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া ভারতে সাড়ে চার কোটি মুসলমানদের মধ্যে মাত্র নব্বই লক্ষ পাকিস্তানে গেল। তিন কোটি ষাট লক্ষ মুসলমান ভারতে থাকলেন। ভালভাবে বসবাস করছেন তারা। অথচ দ্বিতীয় ন্যারেটিভ ছড়ানো হল। মুসলমানরা ভারতে অত্যাচারিত। তখন রীল বা এআই ছিল না। কিন্তু প্রচার ছিল। এরপরে ছড়ানো হল তৃতীয় ন্যারেটিভ। হিন্দু ভাগাও। সম্পত্তি দখল করো। 

শুধু তাই নয়। যে কোন বঞ্চনার জন্যে ভারতকে দায়ী করা হত। কী পশ্চিমে কী পূর্বে। কিন্তু ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ভারতের দরদী রূপ দেখলো। তাতে কী! পাকমনন রাতারাতি মোছা যায়? আবার শুরু হল ভারতকে দানব হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে চেনানোর পালা। রাজনৈতিক দলগুলি এই সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগালো। তাদের মূলধন হল ভারত বিরোধিতা। 

শেখ হাসিনার সময়কালঃ 

শেখ হাসিনা দেশের ভিতরে তিনি বুলডোজার চালিয়েছেন নিশ্চয়ই, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছেন অবশ্যই, জুলাই আন্দোলন সম্পর্কে অবান্তর কথা বলে সংঘবদ্ধ হতে দেওয়ার দায় তারই, ছাত্রদের ওপরে গুলিচালনার মত নৃশংস সিদ্ধান্ত তার মন্ত্রীসভার, এগুলি স্বীকার করে বলা ভালো যে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যে ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলার ক্ষমতা রাখতেন। তিনি বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে পাক সংসদে বাংলাদেশকে উদাহরণ করে আলোচনা হত। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার যখন ৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার ছিল ২০.৮৮ বিলিয়ন ডলারের। 

ভারত বাংলাদেশ থেকে নিয়েছে, দেয় নি কিছু, এই প্রচার বাংলাদেশে আছে। সেগুলি যে কত বড় মিথ্যা তার উদাহরণ দেওয়া যাক। 

১) বানিজ্য ঘাটতি

ভারত থেকে বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ এ ৯০০ কোটি ডলারের পন্য গেছে। বিদ্যুৎ, ডিজেল, এবং তুলা ছিল বাংলাদেশে মূল আমদানির ৮২ শতাংশ। তা ছাড়া ভোজ্য তেল, গম, চাল, চিনি, এবং ডাল জাতীয় খাদ্যশস্য ছিল ১৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য এবং আসবাবপত্র ছিল মূল পণ্য। 

ভারত থেকে তুলা যেত। সেই তুলায় পোশাক তৈরি করে ভারতসহ বহির্বিশ্বে রপ্তানি করে বাংলাদেশ তাদের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারের ৮০ শতাংশ অর্থ আয় করত। বহির্বিশ্বে রফতানির জন্যে খুব কম মূল্যে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নিত বাংলাদেশ। এই তুলা আমদানি বন্ধ করে ইউনুস দেখাতে চাইছে বানিজ্য ঘাটতি কামাচ্ছেন তিনি। ভারত বন্ধ করেছে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা তুলে নিয়েছে। বন্ধ করেছে স্থল বন্দর। বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক নির্মাতাদের সংগঠন বিকেএমইএ জানিয়েছে, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে স্থগিত হয়ে গিয়েছে উৎপাদন। গত ১০ মাসে স্থলপথে ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছে। চিঠি দিয়ে তারা বাংলাদেশ সরকারকে বলেছে, ভারতকে অনুরোধ করুন। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ-এর একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, স্থলবন্দর বন্ধ করার ফলে বাংলাদেশের ৪২ শতাংশ আমদানিতে কোপ পড়েছে। ভারত কি নিষেধাজ্ঞা তুলবে? ইনির্বাচিত সরকার থাকলে কখনই নয়। 

২) বিদ্যুৎ আমদানি

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ শিল্প পুরোপুরি ভারতের ওপরে নির্ভরশীল। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন উপযোগী কোন কয়লা খনি নেই। বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন উপযোগী কোন নদী নেই। পরমানু বিদ্যুৎ অবকাঠামো অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ, ইউরেনিয়ামও নেই। বাংলাদেশে বেশিরভাগ বিদ্যুৎ তৈরি হয় ডিজেল পুড়িয়ে যার ৮২ % ভারত থেকে যায়। ভারত নিজে পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশ নয়। অপরিশধিত তেল কেনে রাশিয়া, ইরান ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্য দেশ থেকে। অথচ বাংলাদেশকে দেয় ও তাও নিয়ন্ত্রিত মূল্যে। নেপাল থেকে যে জলবিদ্যুৎ তারা কেনে তা যায় ভারতের গ্রিড দিয়ে এবং তাও বিনামূল্যে। এছাড়া আদানি বিদ্যুৎ আছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আজকের উন্নয়ন করেছেন শেখ হাসিনা ও ভারতের সৌজন্যে। ভারত পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশ নয়, বলে ডিজেল সাপ্লাই বন্ধ করতে পারে। গ্রিড বন্ধ করতে পারে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার খাতিরে। আদানি বিদ্যুৎএর ওপর সরকারী হাত নেই। কিন্তু যে দেশের গরমে ২৪০০০ মেগাওয়াট চাহিদা সেখানে আদানির ১৪০০ মেগাওয়াট দিয়ে কী হবে! বাইরে থেকে ডিজেল আমদানি করতে হলে বাংলাদেশের কত ডলার অতিরিক্ত গুনতে হবে তার হিসাব আছে? 

৩) ফ্রিট করিডোরঃ 

ভারত চেয়েছিল বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য উত্তর পূর্ব রাজ্যে পাঠাতে। পারস্পরিক বানিজ্যের তাতে উন্নতি হত। ভারত বাংলাদেশকে ছাড় দিয়েছিল উত্তর পূর্ব রাজ্যে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি করতে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক,  প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব,ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্যর বাজার উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলি রাজা হয়ে উঠল। কিন্তু ইউনুস আসার পরে ফ্রিট করিডোরের গল্প শেষ। তিনি নিষেধাজ্ঞা জারি করলেম যে উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলিতে উৎপাদিত পণ্য জলপথে অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। ভারত ৫০ টি স্থলবন্দর বন্ধ করে দিল। নে ভাই, থাক তোরা তোদের কড়িডোর নিয়ে। ওদিকে কলকাতা হয়ে মিয়ানামার হয়ে জল ও তারপরে স্থলপথে কালাধন প্রকল্প নির্মাণ শেষ হলে অনেক কম খরচে উত্তর পূর্বে ভারতীয় পণ্য যাবে।

৪) ইন্টারনেটঃ

বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট নেই। তারা ইন্টারনেট সার্ভিস নেয় ভারতের থেকে। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের খরচ ভারতের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় জলের দাম। এই ব্যবস্থা করেছিলেন শেখ হাসিনা । এমনকি রেলের অপটিকাল ফাইবার ব্যবহার করে ইন্টারনেটের দ্রুততার স্থপতি তিনি। ইউনুস এসে স্টার-লিংককে আমন্ত্রণ জানালেন বাংলাদেশে। পরিস্কার এই যে ভারতের সার্ভিস চাই না। খুব ভালো। ভারতের একটি রাজ্যের সমান বাংলাদেশ। সেখানে ইন্টারনেট না দিলে ক্ষতি নেই। কিন্তু স্টার লিংক চালু হলে নেটের খরচ কমপক্ষে ৭ গুণ বাড়বে।

৫) জলচুক্তিঃ 

তিস্তার মুখে এখন জল আসে ১০০ কিউসেক। ভাগাভাগির জন্য প্রয়োজন ১৬০০ কিউসেক। কিছুতেই যখন সম্ভর হয় নি তখন ভারত প্রস্তাব দিয়েছিল তিস্তা অববাহিকার জল বর্ষায় ধরে রেখে সমস্যার সমাধান হতে পারে এবং ২ কোটি ডলারের প্রকল্পের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলেন শেখ হাসিনা যা ভারতকে সহজ কিস্তিতে শোধ করবে বাংলাদেশ। কিন্তু ইউনুস এসে সে প্রকল্প চিনকে দিয়ে দেন। ভালই হল, চড়া সুদে ঋণ শঢ করবে বাংলাদেশ। 

গঙ্গাজলচুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের প্রচুর ক্ষোভ। ভারত জল ছাড়ে না। ৪০ হাজার কিউসেক প্রতিশ্রুতি থাকলেও ৩০ থেকে ৩৪ হাজার কিউসেকের জল বাংলাদেশ পায়। কম জল এখন আসে বলে কম পায়। কিন্তু শেখ হাসিনার দৌত্যে সম্পূর্ণ পলিমাটি মুক্ত জল বাংলাদেশ পায়। ২০২৬ এ গঙ্গাজল চুক্তি শেষ। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদী চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। এবারে ভারত সোজা পঞ্চাশঃ পঞ্চাশ অনুপাতে যাবে। ১০৮ টা লকগেটের ৫৪ টা লকগেট খুলে দেবে এবং বাংলাদেশ পাবে পলিমাটিযুক্ত জল। ফলে পদ্মায় ড্রেজিং করতে যে খরচ হবে ও অবকাঠামো স্থাপনের প্রয়োজন হবে তাতে ঠেলা বুঝবে বাংলাদেশ।

৬) সন্ত্রাসবাদে ‘জিরো টলারেন্স- 

বাংলাদেশের এই নীতিতে ভারত এর ডাইরেক্ট বেনিফিশিয়ারি। শেখ হাসিনার আমলে ভারতে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম প্রায় শূন্য হয়ে ছিল। সীমান্তে সামরিক বাহিনী মোতায়েন কম করা গিয়েছিল। কিন্তু ইউনুস এসে হাজারের ওপর সন্ত্রাসীদের জেলমুক্ত করেছেন। ফলে ইসলামী স্লিপার সেলগুলি আবার সক্রিয় হয়েছে। ফলে ভারত ভিসা বন্ধ করেছে। পুশ ব্যাক চালু করেছে। সীমান্তের সামরিক ঘাঁটিতে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে। এরপরে সীমান্তরেখায় কার্ফু প্রথমে রাতে ও পরে দিন-রাতে চালূ করবে। তখন সীমান্ত হত্যা বাড়লেও বাংলাদেশের কিছু বলার থাকবে না।       

আরো অনেক বিষয় আছে যা শেখ হাসিনা তার সময় ভারতের থেকে আদায় করেছিল। 

ইউনুসের মিশন কীঃ 

১) ইউনুস চিরকালই ভারত বিরোধী। তার বইয়ে সেটা স্পষ্ট। বাংলাদেশের একাংশের ভারতবিরোধী অনুভুতিকে মূলধন করে তিনি দেশের স্বার্থ দাড়িপাল্লায় তুলছেন। একদিকে তিনি সেভেন সিস্টার্স ও চিকেন নেক নিয়ে যত্রতত্র কথা বলে ও একের পর এক ভারত বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে দেশে হিরো হতে চাইছেন, ওদিকে নরেন্দ্র মোদি’র সাক্ষাৎ প্রার্থনা করে চিঠি লিখছেন। সেটা দেশের ব্যবসায়ীদের বার্তা দেওয়া যে এই দেখো, আমি চাইছি, মোদি সময় দিচ্ছেন না। 

২) আমেরিকার ডেমোক্র্যাট তথা ক্লিন্টন পরিবারের সাথে ইউনুসের দহরম মহরম ও ট্রাম্পের তার প্রতি অপছন্দ সর্বজনবিদিত। ট্রাম্প জেতায় তার হিসাব উলটে গেছে। ট্রাম্প বানিয়া ও আমেরিকার স্বার্থবাদী লোক। বাংলাদেশ নিয়ে প্রকাশ্যে ভারতের দায়িত্ব বলে খালাস। কিন্তু যখনই তারা হিউম্যান করিডোর চাইল ইউনুস উদ্বাহু হয়ে রাজী হলেন। চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক টার্মিনাল তিন পশ্চিমী কোম্পানিকে লিজ দিতে রাজী হলেন। এতে যে বাংলাদেশের সার্বভৌমতা ক্ষুণ্ণ হবে সেটা তিনি বুঝলেন না। বলতে হল সেনা প্রধানকে। 

৩) দেশের মানুষের পয়সায় বিমান ভাড়া করে চিন গেলেন। সেখানে কার্যকরী কোন সুবিধা আদায় করতে পারলেন না। বরং লালমনিরহাট বিমান বন্দর চিনের হাতে তুলে দেবেন অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেন। এটুকু বুঝলেন না যে চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর ও মিয়ানামারে চিনের বিনিয়োগ এখন বিশ বাঁও জলে। দু’জায়গায় ভারতকে চটিয়ে তারা এক ইঞ্চিও এগোতে পারবে না। লালমনিরহাট বিমানবন্দরে চিনের বিমান নামলেই আত্মরক্ষার অধিকারকে খাড়া করে বিমানবন্দরই উড়িয়ে দেবে ভারত। 

৪) যে পাকিস্তান ১৯৭১ এ হত্যা ও ধর্ষণ চালিয়েছিল বাংলাদেশে। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশকে উদাহরণ করে তাদের সংসদে আলোচনা করত, সেই পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ গেল আমদানি প্রস্তাব নিয়ে। লাভ কী হল? অফিসিয়ালি জান গেল ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এসেছে পাকিস্তান থেকে। তারপরে? ভক্কি। সাড়ে ছ’লক্ষ মেট্রিক টন চালের অর্ডার দিতে হল ভারতকে।

৫) ইউনুসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ ছিল। কর আরোপ করা হয়েছিল। মামলা ছিল বেশ কিছু। কর দেওয়া তো দূরের কথা, মামলা তুলে নিজের সংস্থার কর ২০২৯ সাল অবধি মকুব করে তিনি ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা করলেন। 

ওয়াকারুজ্জামানের উদ্যোগঃ

১) বাংলাদেশের পুলিশ প্রায় নিস্ক্রিয়। সেনাবাহিনীকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায়। এটা সেনাবাহিনীর কাজ নয়। সেনাবাহিনী বুঝতে পারছে যে ইউনুস ভারতের সাথে যে শত্রুতার অবতারনা করেছে তার ফলাফল ভালো হবে না বাংলাদেশের পক্ষে। কাজেই তিনি চাইছেন নির্বাচিত সরকার যারা সরকার চালাবে আর তারা সেনানিবাসে ফিরে যাবে। 

২) নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার – এই তিনটি কাজ নাকি এই অনির্বাচিত সরকারের করার কথা। নির্বাচন যে কোন কেয়ারটেকার সরকারের করা উচিৎ ৯০ দিনের মধ্যে। কিন্তু ইউনুস জানেন সে এখন নির্বাচণ হলে তার অপোগন্ড বালকের দল এনসিপি ও তার মদতপুষ্ট দল জামাত জিতবে না। কাজেই পিছোতে থাকো নির্বাচন। 

৩) বিচার বিভাগ সরকারের অধীন। কাজেই সেখানে পূর্বতন সরকার নিয়োজিত বিচারপতিদের সরানো শেষ। বাংলাদেশের আদালত এখন পুরোপুরি মাদারীর খেলার প্রাঙ্গন হয়ে গেছে। ডিম ছোঁড়াছুঁড়ি, অভিযুক্তদের চড়থাপ্পর মারা, উকিলদের গুন্ডাগিরি সব চলছে। সংস্কার যে কোথায় সামান্য হয়েছে তা পরিস্ফুট নয়। এখানেই সেনাবাহিনীর সাথে ইউনুসের সংঘাত।

৪) ওয়াকারুজ্জামানের হাতে সময় নেই। বাঘের পিঠে চড়ে বসেছে সে। বাংলাদেশ আবেগী দেশ। বাস্তববোধের ধার ধারে না তারা। গতকাল যারা শাসক দল্কে সোচ্চারে সমর্থণ করেছিল, আজ তারা ইউনুসী। পুরোপুরি গন-হিস্টিরিয়ায় ভোগা দেশ। সংবাদ মাধ্যম সমধর্মী। সেনা অভ্যুত্থান না চাইলেও ইউনুসের পদত্যাগ তাকে নিশ্চিত করতে হবে। না’হলে সে উড়ে যাবে। তাকে মনে রাখতে হবে যে তিনি কোন দেশের সাহায্য পাবেন না। তিনি সেফ প্যাসেজ নিয়ে বাংলাদেশের ভবিতব্য ভাগ্যের হাতে ছেড়ে কেটে পড়তে পারেন। অথবা বাংলাদেশের গেম চেঞ্জার হতে পারেন। সিদ্ধান্ত তার।

সোর্স: অমিত গোস্বামী



Featured Post

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!

পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়! দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিট...

জনপ্রিয়

MKRdezign

Mohammod Sahidul Islam

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget