পাখিটা বন্দী আছে সোনার খাঁচায়!
দূর বিদেশে বাণিজ্যে গিয়ে এক বণিক সেখানকার এক বনে বিশেষ একটি পাখির গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং পাখিটি পাকড়াও করে নিজের দেশে নিয়ে এলেন। পাখির জন্য সোনার খাঁচা বানানো হলো। খাঁচায় ভিতরে স্বাধীনতার অভাব থাকলেও খাবারের কোনো অভাব ছিল না। সহজে অন্নসংস্থান হওয়াতে, কিংবা হয়তো বাধ্য হয়ে, সোনার খাঁচায় রূপার দাঁড়ে বসে বণিককে খুশি করতে পাখি গান করে গেলো দিনের পর দিন।
কিছু দিন পর বণিক আবার বাণিজ্যে যাবে সেই দূর দেশে। যাবার আগে পাখির কাছে গিয়ে বললো: ‘পাখি, আবার তোমার দেশে যাচ্ছি। দেশের বন্ধুদের জন্যে তোমার কোনো বার্তা আছে কি?’ পাখি বললো: ‘বন্ধুদের কারও সঙ্গে দৈবাত্ দেখা যদি আপনার হয়েই যায়, তাদের জানাবেন, সোনার খাঁচায় রূপার দাঁড়ে বসে আপনার জন্য গান গেয়ে মহা সুখে আছি আমি। আমার সুখের বর্ণনা শুনেই বার্তা যা পাবার তারা পেয়ে যাবে এবং আমার কী করণীয়, আপনাকে দিয়ে সেটাও ইঙ্গিতে বলে পাঠাবে।’
বাণিজ্য সেরে বণিক আবার সেই বনে গিয়ে দেখলো পোষা পাখির বুনো জাতভাইয়েরা গান গেয়ে গাছে গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে। ‘তোমাদের কি স্মরণ আছে, বহু দিন আগে তোমাদের এক বন্ধুকে আমি আমার দেশে নিয়ে গিয়েছিলাম? তোমরাতো কত কষ্টে গাছের উপর বাসা বেঁধে থাকো। তোমাদের বন্ধুকে আমি সোনার খাঁচায় রেখেছি। সে তোমাদের জানাতে বলেছে, সোনার খাঁচায় রূপার দাঁড়ে বসে আমার জন্য দিনরাত গান গেয়ে সে মহা সুখে আছে।’
বণিকের বক্তব্য কানে যাওয়া মাত্র কয়েকটি পাখি গাছের ডাল থেকে দুপদাপ করে মাটিতে পড়ে গেলো। কী ব্যাপার? কাছে গিয়ে বণিক দেখলো, সবগুলো পাখি মারা গেছে। খুবই মন খারাপ করে বণিক সেই বন থেকে বের হলেন। দেশে ফিরে এসে পাখিকে দুঃসংবাদটা দিতেও বণিকের খুবই খারাপ লাগছিল।
দেশের বন্ধুদের মৃত্যুসংবাদ শোনা মাত্র পোষা পাখিটি জ্ঞান হারিয়ে রূপার দাঁড় থেকে সোনার খাঁচায় তলায় পড়ে গেলো। প্রিয় পাখির মৃত্যুতে খুবই মন খারাপ হলো বণিকের। মৃতদেহ বের করার উদ্দেশ্যে খাঁচার দরজা যেই খোলা হলো, পাখিটি ফুরুত্ করে উড়ে গিয়ে বসলো বাড়ির সামনে একটি গাছের উচু ডালে।
প্রিয় পাখি এভাবে প্রতারণা করাতে বণিক যতটা না অবাক হলেন, তার চেয়ে বেশি দুঃখ পেলেন মনে। খাঁচায় ফিরে আসার আকুল আহ্বানে বিন্দুমাত্র সাড়া না দিয়ে পাখি বললো: ‘ওরে মূর্খ বণিক! আমার একটি বন্ধুও মারা যায়নি। খাঁচা থেকে মুক্তি কীভাবে পেতে হয়, সেই কৌশল আমাকে শেখানোর জন্যে তারা মরার ভান করেছিল!’
‘তুমি কি সুখী ছিলে না পাখি, আমার সোনার খাঁচায়? কোন অভাবটি তোমার আমি অপূর্ণ রেখেছিলাম?’ উত্তরে পাখি বললো: ‘শোনো বণিক, পাখি মাত্রেরই একটিই আকাঙ্ক্ষা থাকে: মুক্ত আকাশে ইচ্ছামতো সে উড়ে বেড়াবে। কোনো খাঁচায় এই আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ হয় না, সোনা কিংবা লোহা, খাঁচা যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন।
জনগণও পাখির মতো। অপশাসনের খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে সুনীল আকাশে তারা উড়তে চায়। বেশির ভাগ শাসক সে জিয়া হোক, হাসিনা হোক, কিংবা ইউনুস, নিজের স্তুতিগীত শোনার স্বার্থে জনগণকে আটকে রাখতে চায় এক বা একাধিক খাঁচায়। মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় শাসক বদলাতে গিয়ে জনগণ ভুল করে বার বার খাঁচা বদলায়।
বাঙালির জীবনে খাঁচার কোনো শেষ নেই, ‘পাকিস্তান’ ছিল (কিংবা এখনও আছে) একটা খাঁচা, এখন ধর্ম হয়েছে আরেকটা কঠিন খাঁচা। ‘পাকিস্তান’ নামক খাঁচা থেকে মুক্ত করেছিলেন একজন শেখ মুজিব, কিন্তু সেই মুক্তিদাতাকে যে বেঈমান বাঙালিরা দুই দুই বার হত্যা করেছে, তাদের কপালে যে ভয়ঙ্কর একাধিক খাঁচা থেকে মুক্তির আশু সম্ভাবনা নেই, তাতে সন্দেহ কী?
সোর্স: এফবি